ওয়াই-ফাই স্ক্যানিং নিয়ন্ত্রণে কমে সাইবার আক্রমণের ঝুঁকি

Staff Reporter

নিজস্ব প্রতিবেদক

শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭:১১

ওয়াই-ফাই স্ক্যানিং নিয়ন্ত্রণে কমে সাইবার আক্রমণের ঝুঁকি
ছবি : টাইমস অব ইন্ডিয়া

ডিজিটাল যুগে আমরা সবসময় ইন্টারনেটে যুক্ত থাকতে চাই। কিন্তু সেই সংযোগই অনেক সময় তৈরি করে ফেলে ঝুঁকি। ঘরের বাইরে স্মার্টফোনের ওয়াই-ফাই চালু থাকলে নীরবে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য নজরদারির মুখে পড়ে, এমনকি হ্যাকারদেরও টার্গেট হতে পারেন। খুব সহজ একটি অভ্যাসই আপনাকে এই ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে পারে, আর সেটি হলো বাইরে গেলে ওয়াই-ফাই বন্ধ রাখা।

বাইরে ওয়াই-ফাই চালু থাকলে কী সমস্যা হয়

বেশিরভাগ স্মার্টফোন ঘর থেকে বের হওয়ার পরও আশপাশে থাকা নেটওয়ার্ক খুঁজতে থাকে। এতে ফোনের কিছু মৌলিক তথ্য আশপাশের ডিভাইস বা নেটওয়ার্কের কাছে প্রকাশিত হতে পারে। সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে গবেষণার ফলেও দেখা গেছে, সারাক্ষণ ওয়াই-ফাই স্ক্যানিং চালু থাকলে ফোন ফেইক নেটওয়ার্ক বা আড়ি পাতার আক্রমণের ঝুঁকিতে পড়ে। এতে ব্যবহারকারীর অজান্তেই ব্যক্তিগত তথ্য হ্যাকারদের হাতে চলে যেতে পারে।

অনিরাপদ নেটওয়ার্কে অটোমেটিক সংযোগের ঝুঁকি

স্মার্টফোনে ওয়াই-ফাই চালু থাকলে এটি নিজে থেকেই পরিচিত বা খোলা নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করে। ক্যাফে, বিমানবন্দর বা রেলস্টেশনের মতো জায়গায় অনেক নেটওয়ার্কই থাকে নিরাপত্তাহীন। এসব নেটওয়ার্কে যুক্ত হলে আপনার বার্তা, পাসওয়ার্ড, অনলাইন লেনদেন বা ব্রাউজিং তথ্য ক্ষতির মুখে পড়ে। হ্যাকাররা এমন পরিবেশেই ফেইক নেটওয়ার্ক তৈরি করে। ব্যবহারকারী বুঝতে না পেরেই যুক্ত হয়ে গেলে হ্যাকার সহজেই তথ্য চুরি করতে পারে।

ফেইক হটস্পটের ফাঁদ

  • অপরাধীরা অনেক সময় আসল নেটওয়ার্কের মতো নাম দিয়ে নকল নেটওয়ার্ক তৈরি করে।
  • যেমন বিমানবন্দর, হোটেল বা রেস্টুরেন্টের নাম ব্যবহার করে।
  • ফোনে অটোমেটিক সংযোগ চালু থাকলে আপনার ডিভাইস এসব নেটওয়ার্ককে পরিচিত ভেবে যুক্ত হতে পারে।
  • ফেইক নেটওয়ার্কে যুক্ত হলেই ব্যক্তিগত তথ্য চলে যেতে পারে ভুল মানুষের হাতে কিংবা আপনাকে ফিশিং পাতায় পাঠানো হতে পারে।
  • বাইরে বের হওয়ার আগে ওয়াইফাই বন্ধ রাখলে এমন ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।

আপনার গতিবিধিও ট্র্যাক করা হয়

  • অনেক শপিং মল, স্টেশন বা বিজ্ঞাপন সংস্থা ওয়াইফাই সিগন্যাল ব্যবহার করে মানুষের চলাচল শনাক্ত করে।
  • আপনি নেটওয়ার্কে যুক্ত না থাকলেও ফোনের ওয়াইফাই স্ক্যানার নিজে থেকে সংকেত পাঠায়, আর সেই সংকেত থেকেই আপনার অবস্থান ও চলাচলের ধরণ শনাক্ত করা যায়।
  • ওয়াইফাই বন্ধ রাখলে এই অনাকাঙ্ক্ষিত নজরদারি অনেক কমে যায়।

ব্যাটারির অপচয়ও থামে

  • সাইবার নিরাপত্তা ছাড়াও ওয়াইফাই চালু থাকলে ফোন সারাক্ষণ নেটওয়ার্ক খুঁজতে থাকে।
  • এতে ব্যাটারি দ্রুত শেষ হয়।
  • ওয়াইফাই বন্ধ রাখলে ব্যাটারি অনেক বেশি সময় ধরে টিকে।
  • ফোনের গতি ও কর্মক্ষমতাও কিছুটা বাড়ে।

নিজের গোপনতা রক্ষার সহজ কৌশল

  1. বাইরে বের হওয়ার আগে ফোন থেকে ওয়াইফাই বন্ধ করে নিন।
  2. অজানা নেটওয়ার্কে অটোমেটিক যুক্ত হওয়ার অপশন বন্ধ রাখুন।
  3. যেসব নেটওয়ার্ক আর ব্যবহার করেন না, সেগুলো ফোনের তালিকা থেকে মুছে দিন।
  4. বাইরে প্রয়োজন হলে মোবাইল ডেটা ব্যবহার করুন। খুবই প্রয়োজন না হলে পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার না করাই ভালো।
  5. ব্যাংকিং বা সংবেদনশীল অ্যাকাউন্টে কখনোই খোলা নেটওয়ার্ক থেকে লগইন করবেন না।

কখন ওয়াই-ফাই চালু রাখা নিরাপদ

আপনি যদি ঘরে, কর্মস্থলে বা অন্য কোনো বিশ্বাসযোগ্য নেটওয়ার্কের মধ্যে থাকেন, তখন ওয়াইফাই চালু রাখা ঝুঁকিপূর্ণ নয়। কারণ এসব নেটওয়ার্কে সাধারণত শক্ত নিরাপত্তা থাকে। ঝুঁকি তৈরি হয় শুধু অচেনা ও খোলা নেটওয়ার্কের মাঝে চলাফেরা করার সময়।

স্মার্টফোন এখন আমাদের পরিচয়, কাজ, যোগাযোগ আর ব্যক্তিগত জীবনের কেন্দ্র। খুব ছোট কিছু অভ্যাসই আমাদের নিরাপত্তা আরও দৃঢ় করতে পারে। বাইরে বের হলে ওয়াই-ফাই বন্ধ রাখা এমন এক সহজ অভ্যাস, যা আপনাকে সাইবার অপরাধ, নজরদারি এবং তথ্য চুরির হাত থেকে রক্ষা করবে। নিজের তথ্য নিজেরই দায়িত্ব। তাই একটু সচেতন হোন এবং সংযোগ নিয়ন্ত্রণ করুন জেনে শুনে।

সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া