বাজার উন্নয়নে আমরা প্রতিযোগিতাকে ইতিবাচকভাবে দেখি: তোশিয়ুকি ইশিই

Staff Reporter

নিজস্ব প্রতিবেদক

শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫:৩৫

বাজার উন্নয়নে আমরা প্রতিযোগিতাকে ইতিবাচকভাবে দেখি: তোশিয়ুকি ইশিই
ক্যানন সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ক্যানন এশিয়ার প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা তোশিয়ুকি ইশিই

ক্যানন বিশ্বের শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম। ক্যামেরা, ইমেজিং ও প্রিন্টিং পণ্যের জন্য প্রতিষ্ঠানটির সুনাম বিশ্বজুড়ে। জাপানে ১৯৩৭ সালে প্রতিষ্ঠিত ক্যানন আজ বিশ্বের দুই শ’র বেশি দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ডিএসএলআর ও মিররলেস ক্যামেরা থেকে শুরু করে প্রফেশনাল ভিডিও ইকুইপমেন্ট, লেন্স, প্রিন্টার ও স্ক্যানার পর্যন্ত- মান, নির্ভরতা ও প্রযুক্তির উন্নততর ব্যবহারে ক্যানন অনন্য।

বাংলাদেশের বাজারে ক্যাননের যাত্রা শুরু এক দশকেরও আগে। বর্তমানে ক্যানন বাংলাদেশে তাদের বিশ্বমানের পণ্য বিক্রির পাশাপাশি গ্রাহকসেবা ও ডিলার নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে কাজ করছে। তরুণ প্রজন্মের ক্রমবর্ধমান কনটেন্ট নির্মাণ, ভ্লগিং এবং প্রফেশনাল ফটোগ্রাফিতে ক্যাননের মিররলেস ও ডিএসএলআর ক্যামেরার চাহিদা বেড়েছে। একই সঙ্গে করপোরেট জগতে ব্যবহৃত প্রিন্টার ও স্ক্যানারেও ক্যাননের অবস্থান সুদৃঢ়।

প্রযুক্তির বিকাশ এবং ক্রেতার প্রয়োজন বিবেচনায় ক্যানন বাজারে নিত্যনতুন উদ্ভাবনী পণ্য আনছে। এর ফলে বাংলাদেশে ক্যাননের পণ্য শুধু জনপ্রিয়ই নয়, বরং প্রফেশনাল মানের ফটোগ্রাফি ও ডকুমেন্ট সল্যুশনের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন ক্যানন সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ক্যানন এশিয়ার প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা তোশিয়ুকি ইশিই। তোশিয়ুকি ইশিই ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ২৩টি দেশ ও অঞ্চলের বিক্রয়, বিপণন, সেবা ও পরিচালনা কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করছেন। দক্ষিণ এশিয়ায় ক্যাননের বাজার কৌশল ও বাংলাদেশে তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে টেকওয়ার্ল্ডের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে কথা বলেন তোশিয়ুকি ইশিই।

প্রশ্ন: বাংলাদেশে আপনি দ্বিতীয়বারের মতো এলেন। গতবারের তুলনায় এবার বাংলাদেশকে আপনি কেমন দেখছেন?

তোশিয়ুকি ইশিই: বাংলাদেশে দ্বিতীয়বারের মতো আসতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এখানে বেশ কয়েকটি বড় পরিবর্তন চোখে পড়েছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, এখানকার তরুণ জনগোষ্ঠী অত্যন্ত সক্রিয় এবং প্রযুক্তিবান্ধব। মানুষের আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটেছে, তারা এখন কেবল প্রয়োজন নয়, শখের জিনিসেও বিনিয়োগ করছেন। সরকার তথ্যপ্রযুক্তিকে গুরুত্ব দিচ্ছে, অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে, যোগাযোগব্যবস্থারও অনেক অগ্রগতি হয়েছে। এসবই বাংলাদেশকে আমাদের জন্য আরও সম্ভাবনাময় করে তুলেছে। তাই আমরা নতুন করে এই বাজারে আরও দৃঢ়ভাবে ফিরে এসেছি। ক্যাননের নতুন প্রযুক্তি ও পণ্যের জন্য বাংলাদেশ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাজার।

প্রশ্ন: দক্ষিণ এশিয়ার বাজার নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা এবং কৌশল কী?

ইশিই: দক্ষিণ এশিয়া আমার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অঞ্চল। আমি ক্যাননে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজ করছি। এই অঞ্চলে বাজার উন্নয়নের জন্য আমি তিনটি কৌশল মেনে চলি। শুরুতেই ব্র্যান্ড ইমেজ তৈরির কথা বলব। ক্যাননকে একটি নির্ভরযোগ্য ও শক্তিশালী ব্র্যান্ড হিসেবে তুলে ধরতে চাই। এরপর আসে ক্রেতাদের সংযুক্ত করার বিষয়টি। আমরা চাই ক্রেতাদের অভিজ্ঞতা শুনতে, তাদের সন্তুষ্টি বা অসন্তুষ্টি জানতে, যাতে পণ্যের মান উন্নয়নে কাজে আসে। এরপর উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ। মানে নতুন প্রযুক্তি, নতুন পণ্য এবং নতুন বাজার খুঁজে বের করা। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তাই তাদের পছন্দ ও প্রয়োজন সরাসরি জানতে আমরা এসেছি।

প্রশ্ন: এই স্বল্প সময়ে আপনি কীভাবে ক্রেতাদের কাছে পৌঁছেছেন?

ইশিই: বাংলাদেশে আমাদের দীর্ঘদিনের অংশীদার জে.এ.এন অ্যাসোসিয়েটসের সহযোগিতায় আমরা কাজ করছি। আমরা ঢাকার বড় বড় শোরুম, প্রযুক্তিপণ্যের বাজার এবং ডিলারদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছি। তাদের মতামত, অভিজ্ঞতা এবং চাহিদা জানার চেষ্টা করেছি। এই তথ্যগুলো আমাদের ভবিষ্যৎ কৌশল নির্ধারণে সাহায্য করবে।

প্রশ্ন: সোশ্যাল মিডিয়ার উত্থানে মিররলেস ক্যামেরার জনপ্রিয়তা বেড়েছে। ক্যানন কীভাবে দেখছে এই পরিবর্তন?

ইশিই: নিঃসন্দেহে মিররলেস ক্যামেরা এখন জনপ্রিয়। তবে ক্যাননের ফোকাস কেবল মিররলেসে সীমাবদ্ধ নয়। আমরা সমানভাবে মনোযোগ দিচ্ছি লেন্স, সেন্সর, প্রসেসরসহ পুরো ইমেজিং সল্যুশনে।

সনি মিররলেস ক্যামেরায় এগিয়ে থাকলেও, ক্যানন এসএলআর ও প্রিন্টিং প্রযুক্তিতে এখনও শীর্ষে। পাশাপাশি, স্মার্টফোন, গাড়ি ও সিকিউরিটি ক্যামেরার ক্ষেত্রেও আমাদের উদ্ভাবনী উদ্যোগ রয়েছে। আমরা প্রতিযোগিতাকে ইতিবাচকভাবে দেখি।

প্রশ্ন: গ্রে মার্কেট বা অবৈধ পণ্যের বিক্রি বাজারে কী ধরনের প্রভাব ফেলছে?

ইশিই: এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। গ্রে মার্কেটের কারণে ক্রেতা ও ব্র্যান্ড, উভয় পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমরা আসল পণ্যের সুবিধা, ওয়ারেন্টি ও বিক্রয়োত্তর সেবার উপর জোর দিচ্ছি। সরকারের সহযোগিতা ছাড়া এই সমস্যা নির্মূল করা কঠিন, তবে আমরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাপ্লাই চেইন পর্যবেক্ষণ করছি।

প্রশ্ন: প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে ক্যাননের কৌশল কী, বিশেষ করে এআইয়ের ক্ষেত্রে?

ইশিই: বিশ্বব্যাপী ফটোগ্রাফার, কনটেন্ট ক্রিয়েটর এবং প্রফেশনালদের কাছে ক্যাননের পণ্য একটি আস্থার প্রতীক। বিশেষ করে ইমেজ সেন্সর ও অপটিকসে ক্যাননের উদ্ভাবনী পদক্ষেপ ক্যামেরা প্রযুক্তির নতুন মানদণ্ড স্থাপন করেছে।

ক্যানন সবসময় উদ্ভাবনের উপর জোর দেয়। আমাদের গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগ এআই প্রযুক্তি সংযোজনে কাজ করছে। এরই মধ্যে কিছু এআই-ভিত্তিক ফিচার উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও বিস্তৃতভাবে এটি প্রয়োগ করব।

প্রশ্ন: এই সফরের মূল উদ্দেশ্য কী?

ইশিই: বাংলাদেশ আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাজার। আমি ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে দক্ষিণ এশিয়ার বাজার উন্নয়নের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছি। এই সফরের মাধ্যমে আমি বাজার, অংশীদার ও ক্রেতাদের ভালোভাবে বুঝতে চেয়েছি। এই অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতের কৌশল নির্ধারণে সহায়ক হবে যা আগামীতে এখানকার প্রযুক্তি বাজারে ক্যাননের আরও দৃঢ় উপস্থিতি নিশ্চিত করবে।