চাকরির প্রস্তুতিতে এআই ব্যবহারের কার্যকরী ৩ উপায়

এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আপনার স্বপ্নের চাকরি পাওয়ায় সাহায্য করতে পারে। তবে সঠিকভাবে ব্যবহার না করলে এটি আপনার সুযোগও কমিয়ে দিতে পারে। তাই এআইকে চাকরি খোঁজার প্রক্রিয়ায় কীভাবে ব্যবহার করবেন এবং কোন ভুল এড়িয়ে চলবেন, তা জানা জরুরি।
চাকরি খোঁজা প্রক্রিয়া সাধারণত ক্লান্তিকর। ঘণ্টার পর ঘণ্টা খোঁজা, ফর্ম পূরণ করা, কাভার লেটার লেখা, সব শেষে অনেক সময় একটি প্রত্যাখ্যান ইমেলও পাওয়া যায় না, অথচ গঠনমূলক প্রতিক্রিয়া মেলেও না।
নিয়োগকারীরা যেহেতু ক্রমবর্ধমানভাবে এআই ব্যবহার করছেন, কেন আপনি এটির সাহায্য নেবেন না, যাতে চাকরির খোঁজের প্রক্রিয়া সহজ হয় এবং প্রতিযোগিতায় সুবিধা পাওয়া যায়। এআই আপনার জন্য মূল্যবান একটি হাতিয়ার হতে পারে, তবে সঠিকভাবে ব্যবহার করা জরুরি। ভুল ব্যবহার করলে আপনার আবেদন দ্বিতীয়বারও বিবেচনা করা নাও হতে পারে।
১. কিওয়ার্ড বাড়ান এবং রিজ্যুমে সঠিক তথ্য দিন
এআই চ্যাটবট শুধু আপনার রিজ্যুমের ব্যাকরণ বা বানান ঠিক করতে সাহায্য করে না, এটি প্যাসিভ ভয়েস, বাক্য গঠন এবং শব্দচয়নও চেক করতে পারে। ছোটখাটো এই পরিবর্তনগুলোও আপনার অভিজ্ঞতা প্রমাণে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। অনেক সময় একা বসে এক পৃষ্ঠার উপর দীর্ঘক্ষণ কাজ করার পর নিজে এ সব খুঁজে বের করা কঠিন হয়ে যায়।
অনেক কোম্পানি আবেদনকারীদের ট্র্যাক করতে সফটওয়্যার ব্যবহার করে। প্রোগ্রামগুলো প্রায়ই কিছু নির্দিষ্ট কিওয়ার্ড খুঁজে সম্ভাব্য প্রার্থী সংখ্যা কমায়। চ্যাটবট কাজের বিবরণ বা শিল্পের শীর্ষ কিওয়ার্ড থেকে প্রাসঙ্গিক শব্দগুলো বের করে এবং এগুলো রিজ্যুমেতে কীভাবে প্রাকৃতিকভাবে যুক্ত করা যায়, তার পরামর্শ দিতে পারে।
এআই’র গভীর গবেষণা সুবিধাও ব্যবহার করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ চ্যাটজিপিটি এবং জেমিনি, ৫০টিরও বেশি উৎস ব্যবহার করে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা রিপোর্ট তৈরি করতে পারে। তাই আপনি চ্যাটবটকে দিচ্ছেন যে, আপনার শিল্পে কী ঘটছে এবং রিজ্যুমে কীভাবে আরও উন্নত করা যায়।
আপনি যখন একটি স্বপ্নের চাকরির জন্য রিজ্যুমে ব্যক্তিগতকৃত করবেন, তখন চ্যাটবট সাহায্য করতে পারে। শুধু কাজের বিবরণ ও আপনার রিজ্যুমে ফিড করুন, এবং এটি প্রাসঙ্গিক পরিবর্তনের পরামর্শ দেবে। তবে মনে রাখবেন, চ্যাটবট আপনার ডেটা সংরক্ষণ করে প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহার করতে পারে। ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করার সময় সতর্ক থাকুন।
২. কাভার লেটার আরও শক্তিশালী করুন
প্রতিটি চাকরির জন্য কাভার লেটার আলাদা হতে হয়। রিজ্যুমে উন্নয়নের জন্য যে পরামর্শ দেয়া হয়েছে, তা কাভার লেটারেও প্রযোজ্য। ব্যাকরণ, বানান, পেসিভ ভয়েস ঠিক করা এবং শব্দচয়ন উন্নত করা চ্যাটবটের মাধ্যমে সম্ভব।
চ্যাটবটকে প্রথম খসড়া তৈরির জন্য ব্যবহার করুন। কাজের বিবরণ ও রিজ্যুমে দিলে এটি একটি পেশাদার কাভার লেটার তৈরি করবে, যেখানে আপনার দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং অন্যান্য আবেদনকারীদের থেকে আলাদা বিষয়গুলো তুলে ধরা হবে। আপনি চ্যাটবটকে নির্দিষ্ট দক্ষতা, টোন বা দৈর্ঘ্যও নির্ধারণ করতে পারেন।
চূড়ান্ত খসড়া লেখার জন্য এটি একটি রূপরেখা হিসেবে ব্যবহার করুন। কাভার লেটার লেখার সবচেয়ে কঠিন অংশ হলো কাঠামো তৈরি করা। উদাহরণ থাকা মানে নিজের শৈলীতে সহজে লেখা সম্ভব।
৩. সাক্ষাৎকারের আগে চ্যাটবট ব্যবহার করুন
সাক্ষাৎকার পাওয়া চাকরি খোঁজার সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ এবং চিন্তাজনক অংশ। এআই চ্যাটবটকে প্রস্তুতির জন্য ব্যবহার করা যায়। প্রথমে, সম্ভাব্য প্রশ্নগুলোর পূর্বাভাস নিতে পারেন। উদাহরণ:‘আমাকে (কোম্পানি)তে (পদ) জন্য সাক্ষাৎকারে ডাকা হয়েছে। কোন প্রশ্নগুলোর জন্য প্রস্তুত থাকা উচিত?’
চ্যাটবটকে রোল-প্লে করতে বলুন। ‘আপনি (কোম্পানি) এর নিয়োগকর্তা হিসেবে আমাকে সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন। আমার রিজ্যুমে এবং কাভার লেটার দেখে আমাকে প্রশ্ন করুন।’
কিছু চ্যাটবট জীবন্ত কণ্ঠেও উত্তর দিতে পারে, যা অভ্যাসকে আরও প্রাকৃতিক করে তোলে। এছাড়া চ্যাটবটকে এমন প্রশ্ন তৈরি করতে বলুন যা আপনি নিয়োগকর্তাকে করতে পারবেন। Google Interview Warmup-এর মতো বিনামূল্যের এআই-ভিত্তিক টুলও ব্যবহার করা যায়।
এআই ব্যবহারে সতর্কতা
সম্পূর্ণ এআই-উৎপন্ন রিজ্যুমে বা কাভার লেটার ব্যবহার করা বিপজ্জনক। যদি নিয়োগকর্তা বুঝে নেয় যে এটি এআই -উৎপন্ন, তাহলে তারা ভাবতে পারেন আপনি লাজুক বা উদাসীন। অন্য প্রার্থীরা একই ধরনের এআইর রিজ্যুমে জমা দিলে আপনার রিজ্যুমে চোখে পড়বে না। তাই চ্যাটবটকে কেবল সাহায্যকারী হিসেবে ব্যবহার করুন।
কাভার লেটারের ক্ষেত্রেও একই পরামর্শ প্রযোজ্য। খসড়া তৈরি করতে ব্যবহার করুন, কিন্তু পুরো লেটার এআইর উপর ছেড়ে দেবেন না।
সূত্র : পিসিম্যাগ