স্বাস্থ্যখাতে এআই : ৭ ভাবে বদলাচ্ছে চিকিৎসা সেবা

বিশ্বজুড়ে এখনো ৪৫০ কোটি মানুষ জরুরি স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। আবার ২০৩০ সালের মধ্যে ১১ মিলিয়ন স্বাস্থ্যকর্মীর ঘাটতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা করছে বিশেষজ্ঞরা। এই প্রেক্ষাপটে চিকিৎসা খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই হতে পারে গেমচেঞ্জার।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্যান্য খাতের তুলনায় স্বাস্থ্যসেবায় এআই ব্যবহারের হার এখনো “গড়ের নিচে”। অথচ ঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে এআই চিকিৎসায় খরচ কমাবে, দক্ষতা বাড়াবে এবং সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।
এআই এখন যেভাবে কাজে আসছে
১. মস্তিষ্কের স্ক্যান বিশ্লেষণ: স্ট্রোক রোগীর ব্রেন স্ক্যান পড়তে নতুন এআই সফটওয়্যার ডাক্তারদের চেয়েও দ্বিগুণ নির্ভুল ফল দিয়েছে। শুধু তাই নয়, স্ট্রোকের সময়সীমাও নির্ধারণ করতে পারে এই প্রযুক্তি।
২. হাড় ভাঙা শনাক্তকরণ: জরুরি বিভাগে অনেক সময় ডাক্তার ভাঙা হাড় চোখ এড়িয়ে যান। এআই দ্রুত এক্স-রে বিশ্লেষণ করে সেই ঝুঁকি কমাতে পারছে।
৩. অ্যাম্বুলেন্স প্রয়োজন নির্ধারণ: ব্রিটেনে পরীক্ষামূলকভাবে দেখা গেছে, ৮০% ক্ষেত্রে এআই সঠিকভাবে বুঝতে পারে কোন রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে। আর কার ক্ষেত্রে জরুরি নয়।
৪. রোগের আগাম সতর্কতা: আলঝেইমার থেকে শুরু করে কিডনি রোগ— ১,০০০’র বেশি অসুখ অনেক বছর আগেই শনাক্ত করতে পারে নতুন এআই মডেল। এতে রোগ দ্রুত ধরা পড়ায় চিকিৎসার সাফল্য বাড়বে।
৫. ভার্চুয়াল সহকারী ও চ্যাটবট: ডিজিটাল চ্যাটবট এখন রোগী বাছাই থেকে শুরু করে চিকিৎসকদের সিদ্ধান্ত গ্রহণেও সহায়তা দিচ্ছে। এতে সময় বাঁচছে, চাপও কমছে।
৬. ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসায় সহায়তা: ভারত, ঘানা ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশে এআই ব্যবহার হচ্ছে ভেষজ ওষুধ ও ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা পদ্ধতি আধুনিকভাবে বিশ্লেষণ করতে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন,এখানে স্থানীয় সংস্কৃতি ও তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
৭. প্রশাসনিক কাজ সহজ করা: ডাক্তারদের সবচেয়ে বেশি সময় খরচ হয় নথি তৈরি ও কাগজপত্রে। মাইক্রোসফট, গুগলসহ বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ইতিমধ্যেই নোট নেওয়া ও রিপোর্ট তৈরির এআই টুল চালু করেছে। এতে ডাক্তাররা রোগীর জন্য বেশি সময় দিতে পারবেন।
সতর্কতা জরুরি
তবে ঝুঁকিও আছে। ভুল তথ্য, পক্ষপাতদুষ্ট ফলাফল কিংবা রোগীর ডেটা সুরক্ষা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন। তাই যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ নানা দেশে এআইভিত্তিক চিকিৎসা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইন চালু করা হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এআই শুধু আধুনিক চিকিৎসা নয়, ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাকেও নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারবে। ফলে একদিকে স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য হবে, অন্যদিকে বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব হবে।