গাড়ি ও বাইক রক্ষণাবেক্ষণে ৫টি সহজ উপায়

Staff Reporter

নিজস্ব প্রতিবেদক

রবিবার, ১৭ আগস্ট ২০২৫, ২২:২৮

গাড়ি ও বাইক রক্ষণাবেক্ষণে ৫টি সহজ উপায়

গাড়ি কিংবা বাইক, নিজের বাহনটির প্রতি ভালোবাসা একটু বেশিই থাকে, তাই না? কিন্তু শুধু ভালোবাসলেই তো চলবে না, তার সঠিক যত্নও নিতে হয়।

ভাবছেন, "আরে বাবা! গাড়ির যত্ন নেওয়া তো বিশাল ঝক্কির কাজ!" একদমই না! কয়েকটি সহজ উপায় অবলম্বন করলেই আপনি আপনার গাড়ি বা বাইকের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারবেন। চলুন, জেনে নেওয়া যাক সেই ৫টি সহজ উপায়, যা আপনার গাড়ি ও বাইককে রাখবে একদম নতুনের মতো।

নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন

গাড়ি বা বাইকের সৌন্দর্য ধরে রাখার প্রথম শর্তই হলো নিয়মিত পরিষ্কার করা। শুধু বাইরে থেকে নয়, ভেতরটাও পরিষ্কার রাখা জরুরি।

বাইরের পরিচ্ছন্নতা

ধুলাবালি, কাদা, পাখির বিষ্ঠা – এগুলো আপনার গাড়ির পেইন্টের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তাই সপ্তাহে অন্তত একবার ভালো করে আপনার গাড়ি বা বাইক ধুয়ে নিন।

  • কীভাবে ধুবেন: প্রথমে জল দিয়ে ভালো করে ধুলো ঝেড়ে নিন। এরপর ভালো মানের শ্যাম্পু ব্যবহার করে স্পঞ্জ দিয়ে আলতো করে ঘষে পরিষ্কার করুন। সবশেষে পরিষ্কার জল দিয়ে ধুয়ে নরম কাপড় দিয়ে মুছে ফেলুন।
  • কী ব্যবহার করবেন না: বাসন মাজার সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার করবেন না। এগুলো গাড়ির পেইন্টের ক্ষতি করে।

ভেতরের পরিচ্ছন্নতা

গাড়ির ভেতরের ড্যাশবোর্ড, সিট, এবং ফ্লোর ম্যাট নিয়মিত পরিষ্কার করুন।

  • ড্যাশবোর্ড: ড্যাশবোর্ডের ধুলো পরিষ্কার করার জন্য নরম কাপড় বা ডাস্টার ব্যবহার করুন।
  • সিট: সিটে দাগ লাগলে তা দ্রুত পরিষ্কার করুন। চামড়ার সিটের জন্য বিশেষ ক্লিনার পাওয়া যায়, সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন।
  • ফ্লোর ম্যাট: ফ্লোর ম্যাটগুলো খুলে ঝেড়ে নিন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ধুয়ে দিন।

ইঞ্জিনের যত্ন নিন

গাড়ি বা বাইকের প্রাণ হলো এর ইঞ্জিন। ইঞ্জিনের সঠিক যত্ন না নিলে বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে।

নিয়মিত ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করুন

ইঞ্জিন অয়েল ইঞ্জিনের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোকে পিচ্ছিল রাখে এবং ঘর্ষণ কমাতে সাহায্য করে। তাই সময়মতো ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করা খুব জরুরি।

  • কতদিন পর পরিবর্তন করবেন: প্রস্তুতকারকের নির্দেশিকা অনুযায়ী ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করুন। সাধারণত, ৩০০০-৫০০০ কিলোমিটার চালানোর পর ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করা উচিত।
  • কীভাবে বুঝবেন: ইঞ্জিন অয়েলের লেভেল এবং রঙ পরীক্ষা করুন। যদি দেখেন অয়েলের লেভেল কমে গেছে বা রঙ কালো হয়ে গেছে, তাহলে বুঝবেন এটি পরিবর্তন করার সময় হয়ে গেছে।

এয়ার ফিল্টার পরিষ্কার রাখুন

এয়ার ফিল্টার ইঞ্জিনে বাতাস প্রবেশ করার সময় ধুলোবালি আটকে দেয়। এটি পরিষ্কার না করলে ইঞ্জিনের কার্যক্ষমতা কমে যায়।

  • কতদিন পর পরিষ্কার করবেন: প্রতি মাসে একবার এয়ার ফিল্টার পরীক্ষা করুন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী পরিষ্কার করুন।
  • কীভাবে পরিষ্কার করবেন: এয়ার ফিল্টারটি খুলে ব্রাশ দিয়ে হালকাভাবে ঘষে পরিষ্কার করুন। বেশি ময়লা হলে নতুন ফিল্টার লাগিয়ে দিন।

কুল্যান্ট পরীক্ষা করুন

কুল্যান্ট ইঞ্জিনকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। কুল্যান্টের অভাবে ইঞ্জিন অতিরিক্ত গরম হয়ে যেতে পারে।

  • কীভাবে পরীক্ষা করবেন: কুল্যান্টের রিজার্ভার ট্যাঙ্কে কুল্যান্টের লেভেল পরীক্ষা করুন। যদি লেভেল কমে যায়, তবে কুল্যান্ট যোগ করুন।

টায়ারের যত্ন নিন

গাড়ি বা বাইকের টায়ার আপনার সুরক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। টায়ারের সঠিক যত্ন নিলে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব।

নিয়মিত টায়ারের প্রেশার পরীক্ষা করুন

টায়ারের প্রেশার কম থাকলে মাইলেজ কমে যায় এবং টায়ার দ্রুত ক্ষয় হয়।

  • কত প্রেশার রাখবেন: প্রস্তুতকারকের দেওয়া নির্দেশিকা অনুযায়ী টায়ারের প্রেশার রাখুন। সাধারণত, গাড়ির দরজার পাশে বা ফুয়েল ট্যাঙ্কের ঢাকনায় টায়ারের প্রেশার লেখা থাকে।
  • কখন পরীক্ষা করবেন: প্রতি সপ্তাহে একবার টায়ারের প্রেশার পরীক্ষা করুন।

টায়ারের ঘূর্ণন (রোটেশন) করুন

টায়ারের ঘূর্ণন করলে টায়ারের ক্ষয় সমানভাবে হয় এবং টায়ারের জীবনকাল বাড়ে।

  • কতদিন পর করবেন: প্রতি ৫০০০-৮০০০ কিলোমিটার চালানোর পর টায়ারের ঘূর্ণন করুন।

হুইল অ্যালাইনমেন্ট এবং ব্যালেন্সিং

গাড়ি চালানোর সময় যদি দেখেন গাড়ি একদিকে কাত হয়ে যাচ্ছে বা স্টিয়ারিং ভাইব্রেট করছে, তাহলে বুঝবেন হুইল অ্যালাইনমেন্ট এবং ব্যালেন্সিং করাতে হবে।

  • কখন করাবেন: প্রতি ১০০০০-১২০০০ কিলোমিটার চালানোর পর হুইল অ্যালাইনমেন্ট এবং ব্যালেন্সিং করানো উচিত।

ব্যাটারির যত্ন নিন

গাড়ির ব্যাটারি হলো পাওয়ার হাউজ। ব্যাটারির যত্ন না নিলে মাঝপথে বিপদে পড়তে পারেন।

ব্যাটারির টার্মিনাল পরিষ্কার রাখুন

ব্যাটারির টার্মিনালে অনেক সময় ময়লা জমে যায়, যার কারণে ব্যাটারি ঠিকমতো চার্জ হতে পারে না।

  • কীভাবে পরিষ্কার করবেন: টার্মিনাল ক্লিনার বা বেকিং সোডা এবং জলের মিশ্রণ দিয়ে টার্মিনাল পরিষ্কার করুন।

নিয়মিত ভোল্টেজ পরীক্ষা করুন

মাল্টিমিটার দিয়ে ব্যাটারির ভোল্টেজ পরীক্ষা করুন। সাধারণত, একটি ভালো ব্যাটারির ভোল্টেজ ১২.৬ ভোল্ট হওয়া উচিত।

  • কখন পরীক্ষা করবেন: প্রতি মাসে একবার ব্যাটারির ভোল্টেজ পরীক্ষা করুন।

অতিরিক্ত ইলেকট্রিক্যাল লোড কম দিন

গাড়িতে অতিরিক্ত লাইট বা সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করলে ব্যাটারির উপর বেশি চাপ পড়ে। তাই অতিরিক্ত ইলেকট্রিক্যাল লোড কমানোর চেষ্টা করুন।

ব্রেকিং সিস্টেমের যত্ন নিন

গাড়ি বা বাইকের ব্রেকিং সিস্টেম আপনার জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্রেকিং সিস্টেমের কোনো সমস্যা হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

ব্রেক প্যাড পরীক্ষা করুন

ব্রেক প্যাড ক্ষয় হয়ে গেলে ব্রেকিংয়ের কার্যক্ষমতা কমে যায়।

  • কখন পরীক্ষা করবেন: প্রতি মাসে একবার ব্রেক প্যাড পরীক্ষা করুন। যদি দেখেন ব্রেক প্যাড খুব পাতলা হয়ে গেছে, তাহলে দ্রুত পরিবর্তন করুন।

ব্রেক ফ্লুইড পরিবর্তন করুন

ব্রেক ফ্লুইড ব্রেকিং সিস্টেমে চাপ তৈরি করে এবং ব্রেক করতে সাহায্য করে।

  • কতদিন পর পরিবর্তন করবেন: প্রস্তুতকারকের নির্দেশিকা অনুযায়ী ব্রেক ফ্লুইড পরিবর্তন করুন। সাধারণত, প্রতি দুই বছর পর ব্রেক ফ্লুইড পরিবর্তন করা উচিত।

ব্রেক লাইনের লিকেজ পরীক্ষা করুন

ব্রেক লাইনে লিকেজ থাকলে ব্রেকিংয়ের সময় সমস্যা হতে পারে।

  • কীভাবে পরীক্ষা করবেন: ব্রেক লাইনে কোনো ভেজা দাগ দেখলে বুঝবেন লিকেজ আছে। লিকেজ দেখলে দ্রুত মেকানিককে দেখান।

গাড়ি ও বাইক রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে কিছু সাধারণ জিজ্ঞাসা 

গাড়ির ইঞ্জিন অয়েল কতদিন পর পরিবর্তন করা উচিত?

গাড়ির ইঞ্জিন অয়েল সাধারণত ৩০০০-৫০০০ কিলোমিটার চালানোর পর পরিবর্তন করা উচিত। প্রস্তুতকারকের নির্দেশিকা অনুসরণ করুন।

টায়ারের প্রেশার কত রাখা উচিত?

টায়ারের প্রেশার প্রস্তুতকারকের দেওয়া নির্দেশিকা অনুযায়ী রাখা উচিত। এটি সাধারণত গাড়ির দরজার পাশে বা ফুয়েল ট্যাঙ্কের ঢাকনায় লেখা থাকে।

গাড়ির ব্যাটারি কতদিন পর পরিবর্তন করা উচিত?

গাড়ির ব্যাটারি সাধারণত ৩-৫ বছর পর্যন্ত ভালো থাকে। তবে, ব্যাটারির যত্ন এবং ব্যবহারের উপর এর জীবনকাল নির্ভর করে।

এয়ার ফিল্টার কতদিন পর পরিষ্কার করা উচিত?

এয়ার ফিল্টার প্রতি মাসে একবার পরীক্ষা করা উচিত এবং প্রয়োজন অনুযায়ী পরিষ্কার করা উচিত।

ব্রেক ফ্লুইড কতদিন পর পরিবর্তন করা উচিত?

ব্রেক ফ্লুইড সাধারণত প্রতি দুই বছর পর পরিবর্তন করা উচিত।

গাড়ির সার্ভিসিং কতদিন পর করানো উচিত?

গাড়ির সার্ভিসিং প্রস্তুতকারকের দেওয়া সময়সূচী অনুযায়ী করানো উচিত। সাধারণত, প্রতি ৬ মাস বা ১০০০০ কিলোমিটার পর সার্ভিসিং করানো ভালো।

বাইকের চেইন লুব্রিকেট (Chain Lube) করার নিয়ম কি?

বাইকের চেইন লুব্রিকেট করার জন্য প্রথমে চেইন পরিষ্কার করুন। তারপর চেইন লুব স্প্রে করুন এবং ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন।

গাড়ির রেডিয়েটরের কাজ কি?

গাড়ির রেডিয়েটর ইঞ্জিনকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।

গাড়ির টায়ারের হাওয়া কখন কমাতে হয়?

গাড়ির টায়ারের হাওয়া গরমে বা দীর্ঘ ভ্রমণে কমাতে হয়, কারণ গরমে টায়ারের ভেতরের বাতাস প্রসারিত হয়।

গাড়ির ব্যাটারির জল কতদিন পর পরিবর্তন করতে হয়?

গাড়ির ব্যাটারির জল পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয় না, তবে জলের লেভেল কমে গেলে ডিস্টিল্ড ওয়াটার যোগ করতে হয়।

গাড়ির স্পার্ক প্লাগ (Spark Plug) এর কাজ কি?

গাড়ির স্পার্ক প্লাগ ইঞ্জিনে আগুন ধরিয়ে দহন প্রক্রিয়া শুরু করে।

গাড়ি ও বাইকের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ শুধু আপনার বাহনটিকে ভালো রাখে না, এটি আপনার সুরক্ষার জন্য জরুরি। এই ৫টি সহজ উপায় অনুসরণ করে আপনি আপনার গাড়ি বা বাইকের যত্ন নিতে পারেন এবং দীর্ঘ দিন ধরে ব্যবহার করতে পারেন।