যে ৫ এআই টুলে ছবি হবে নিখুঁত ও আকর্ষণীয়
						ছবি নিখুঁত করতে এখন আর পেশাদারদের ওপর নির্ভর করতে হয় না। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি এখন এমন কিছু চমৎকার টুল এনে দিয়েছে, যা কয়েক মুহূর্তেই ছবির অমসৃণ অংশ দূর করতে পারে, ব্যাকগ্রাউন্ড বদলে ফেলতে পারে বা আলো ও কালারের সামঞ্জস্য ঠিক করে দেয়। তরুণ প্রজন্মের জন্য এগুলো ছবি সম্পাদনার এক সহজ ও আনন্দদায়ক উপায়।
অনেকেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আর ছবির কথা শুনলেই ছবি তৈরির বিশাল বিশাল মেশিনের কথা কল্পনা করেন । কিন্তু এই প্রযুক্তি শুধু নতুন ছবি তৈরি করতেই নয়, পুরোনো ছবি উন্নত করতেও দারুণ কার্যকর। নিচে এমন পাঁচটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর টুলের কথা বলা হলো, যেগুলো আপনার ছবিকে মুহূর্তেই বদলে দিতে পারে।
১. লুমিনার নিও (Luminar Neo)

লুমিনার নিও তৈরি হয়েছে তাদের জন্য, যারা সহজে ও দ্রুত ফলাফল চান। এতে রয়েছে ছবির উজ্জ্বলতা, রঙ ও আলো ঠিক করার পাশাপাশি কিছু নতুন ধরণের স্বয়ংক্রিয় ফিচার।
এর ‘জেনইরেজ’ ফিচার ছবির অপ্রয়োজনীয় অংশ মুছে দেয় কোনো হাতের কাজ ছাড়াই। ‘জেনসোয়াপ’ ফিচার ছবির একটি অংশের জায়গায় অন্য দৃশ্য বসিয়ে দেয়, যেমন মেঘলা আকাশের পরিবর্তে রোদেলা আকাশ। ‘জেনএক্সপ্যান্ড’ ছবির অংশ বাড়িয়ে অনুপস্থিত জায়গাপূরণ করে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে।
এছাড়া রয়েছে ‘ওয়াটার এনহ্যান্সার এআই’ সুবিধা। এই ফিচারটি পানির প্রতিফলন ও রঙ আরও পরিষ্কার করে, আর ‘টুইলাইট এনহ্যান্সার এআই’ ফিচার সন্ধ্যাকালের ছবিকে উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত করে তোলে। প্রায় ৯৯ ইউরোতে ফিচারটি ব্যবহার করা সম্ভব।
উপযুক্ত: যারা সহজ ব্যবহার চান, দ্রুত ফল চান এবং দৃশ্যনির্ভর কাজ করেন।
অনুপযুক্ত: পেশাদার ব্যবহারকারীরা, যাদের খুব সূক্ষ্ম সম্পাদনা প্রয়োজন।
২. ফোটর (Fotor)

ফোটর একটি সহজ ব্যবহারযোগ্য ও কম খরচের ছবি সম্পাদনার মাধ্যম। বিনামূল্যের সংস্করণে এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে উজ্জ্বলতা ও কলার ঠিক করে। পেইড ভার্সনের উন্নত সংস্করণে যুক্ত রয়েছে আরও অনেক সুবিধা।
পেইড ভার্সনে রয়েছে স্বয়ংক্রিয় পটভূমি ও বস্তু শনাক্তকরণ, ছবির আকার বড় করলেও মান অক্ষুণ্ণ রাখা, এবং কিছু সৃজনশীল ফিল্টার যেমন বয়স পরিবর্তন ফিল্টার ‘এআই এজ চেঞ্জার’ ও দাড়ি যোগ ফিল্টার ‘এআই বিয়ার্ড ফিল্টার’সহ একসঙ্গে একাধিক ছবি সম্পাদনার সুবিধ।
ফিচারটির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো ব্যবহার করা সহজ। নতুন ব্যবহারকারীরাও কয়েক সেকেন্ডেই ছবি সুন্দর করে তুলতে পারেন। ক্লাউড সংযোগের মাধ্যমে ব্রাউজার থেকেই ছবি সম্পাদনা করা যায়।
তবে এতে উচ্চমানের ‘র’ ফাইল বা সূক্ষ্ম হাতে রিটাচ করার সুবিধা নেই। বিনামূল্যে সংস্করণের পাশাপাশি মাসিক প্রায় ৪ থেকে ৮ ডলারে ফিচারটির উন্নত সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন।
উপযুক্ত: নতুন ব্যবহারকারী ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের জন্য ছবি সম্পাদনাকারীরা।
অনুপযুক্ত: পেশাদার ব্যবহারকারীরা, যারা নিখুঁত নিয়ন্ত্রণ চান।
৩. অ্যাডোবি ফটোশপ ফায়ারফ্লাই থ্রিসহ (Adobe Photoshop with Firefly 3)

পেশাদার ছবি সম্পাদনার ক্ষেত্রে ফটোশপ এখনো সবচেয়ে পরিচিত নাম। সাম্প্রতিক সংস্করণে এতে যুক্ত হয়েছে ‘ফায়ারফ্লাই থ্রি’ যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে ছবির নানা পরিবর্তনকে আরও সহজ করে দিয়েছে।
‘জেনারেটিভ ফিল’ ’ব্যবস্থায় ছবির অপ্রয়োজনীয় বস্তু সহজেই সরানো যায় বা জায়গাটি নতুনভাবে পূরণ করা যায়। ‘জেনারেটিভ এক্সপ্যান্ড’ ব্যবস্থায় ছবির সীমা বাড়িয়ে সংকুচিত অংশকে বড় করা সম্ভব। এই ফিচাররের মাধ্যমে শুধু লেখা দিয়েই নতুন পটভূমি তৈরি করার সুবিধাও রয়েছে।
সবচেয়ে বড় শক্তি হলো, এসব সুবিধা ফটোশপের মূল কাজের ধরণেই সংযুক্ত। যারা আগে থেকেই স্তর, মুখোশ বা ফিল্টার নিয়ে কাজ করেন, তারা সহজেই এই নতুন সুবিধাগুলো ব্যবহার করতে পারবেন। মাসিক প্রায় ২৩ ডলার থেকে শুরু করে এই ফিচারের সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন।
উপযুক্ত: পেশাদার আলোকচিত্রী, প্রতিষ্ঠান ও নকশাকর্মী।
অনুপযুক্ত: সাধারণ ব্যবহারকারী, যাদের শুধু সহজ পরিবর্তন দরকার।
৪. ক্যানভা ভিজ্যুয়াল সুইট (Canva Visual Suite)

ক্যানভা তাদের নতুন সংস্করণে ‘ম্যাজিক স্টুডিও’ যুক্ত করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর সম্পাদনায় দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বিনামূল্যের সংস্করণে সাধারণ পরিবর্তনের সুবিধা থাকলেও আসল শক্তি লুকিয়ে আছে প্রো সংস্করণে।
এতে রয়েছে ম্যাজিক ইরেজার, যা ছবির অনাকাঙ্ক্ষিত অংশ মুছে দেয় এবং ‘ম্যাজিক গ্র্যাব’ ছবির একটি উপাদান সরিয়ে অন্য স্থানে বসাতে পারে। এছাড়াও রয়েছে ‘টেক্সট এক্সট্রাকশন’ ফিচার, যা ছবির ভেতর লেখা শনাক্ত করে সম্পাদনা করতে সক্ষম। ব্যাকগ্রাউন্ড রিমুভার ও জেনারেটর ব্যবস্থাও রয়েছে এই টুলটিতে।
ক্যানভার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো সহজ ব্যবহার ও নকশা সংযোজন। সম্পাদিত ছবিগুলো সঙ্গে সঙ্গে টেমপ্লেট-এ বসিয়ে প্রকাশ করা যায়। তবে সূক্ষ্ম কাজ বা জটিল স্তরসম্পাদনার ক্ষেত্রে এর সীমাবদ্ধতা আছে। বিনামূল্যে সংস্করণের পাশাপাশি বার্ষিক প্রায় ১২০ ডলারে এই সার্ভিসটি গ্রহণ করতে পারবেন।
উপযুক্ত: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, বিপণন দল ও নতুন ব্যবহারকারীরা।
অনুপযুক্ত: যারা নিখুঁত নিয়ন্ত্রণ বা সূক্ষ্ম সম্পাদনা চান।
৫. টোপাজ ফটো (Topaz Photo)

টোপাজ ফটো অন্যান্য টুল থেকে কিছুটা আলাদা। এটি সৃজনশীল পরিবর্তনের চেয়ে ছবির মান উন্নয়নে বেশি মনোযোগী। একাধিক বিশেষ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ইঞ্জিন একত্রে কাজ করে ছবির গুণগত মান বাড়ায়।
এর ‘ডিনয়েজ এআই’ ফিচার অন্ধকার বা উচ্চ সংবেদনশীলতায় তোলা ছবির দাগ মুছে ফেলতে পারে। ‘শার্পেন এআই’ ঝাপসা বা কম ফোকাস করা ছবিকে পরিষ্কার করে। ‘রেকভার ফেসেস’ অস্পষ্ট বা পুরোনো ছবির মুখের স্পষ্টতা ফিরিয়ে আনে। ‘আপস্কেল এআই’ ছবিকে বড় করেও মান ঠিক রাখে।
টোপাজের বিশেষত্ব হলো এটি চাইলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছবি ঠিক করে, আবার ব্যবহারকারীও ঠিক করতে পারেন কোন অংশে কতটা পরিবর্তন হবে। তবে জটিল সম্পাদনা বা ব্যাকগ্রাউন্ড বদলানোর কাজে এটি উপযুক্ত নয়। মাসিক প্রায় ২১ ডলার থেকে শুরু করে এই টুলের সার্ভিস গ্রহণ করতে পারবেন।
উপযুক্ত: পেশাদার আলোকচিত্রী ও যারা পুরোনো বা দুর্বল আলোয় তোলা ছবি উন্নত করতে চান।
অনুপযুক্ত: যারা দ্রুত সৃজনশীল পরিবর্তন বা সামাজিক মাধ্যমে ব্যবহারের সহজ টুল চান।
এই পাঁচটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর টুল ছবি সম্পাদনার জগতে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। সময়, পরিশ্রম ও দক্ষতার সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে এখন সবাই অল্প চেষ্টায় নিজের ছবিকে করে তুলতে পারেন আরও নিখুঁত ও মনোমুগ্ধকর। তরুণদের জন্য এটি সৃজনশীলতার এক নতুন দরজা খুলে দিয়েছে, যেখানে প্রযুক্তি আর শিল্প একসঙ্গে মিলেছে।
সূত্র : পিসিওয়ার্ল্ড