ফেসবুকে আবারও ফিরেছে ‘পোক’ বাটন

Staff Reporter

নিজস্ব প্রতিবেদক

মঙ্গলবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:০৪

ফেসবুকে আবারও ফিরেছে ‘পোক’ বাটন

ফেসবুকের পুরোনো ব্যবহারকারীরা নিশ্চয়ই মনে করতে পারবেন ‘পোক’ ফিচারের কথা। কারও মনোযোগ কাড়তে, হালকা মজা করতে কিংবা কখনো খুনসুটি করার জন্য পোক ব্যবহার করতেন ব্যবহারকারীরা। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ফিচারের ব্যবহার কমতে কমতে একসময় একেবারেই হারিয়ে যায়। অনেকে হয়তো ভুলেই গিয়েছিলেন এর অস্তিত্ব।

ফেসবুক তাদের প্রোফাইলে ফিরিয়ে এনেছে ‘পোক’ বাটন। এখন ব্যবহারকারীরা সরাসরি বন্ধুদের প্রোফাইল থেকে বোতামে চাপ দিয়ে পোক দিতে পারবেন। কোনো ব্যবহারকারী পোক পেলে নোটিফিকেশনের মাধ্যমে তা জানতে পারবেন।

এর পাশাপাশি facebook.com/pokes–এ গিয়ে দেখা যাবে কে কাকে পোক দিয়েছে। এখান থেকেই নতুন করে বন্ধুদের পোক দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। ব্যবহারকারীরা চাইলে নির্দিষ্ট পেজে গিয়ে পোক কাউন্ট দেখতে পারবেন। প্রতিবার পোক দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই সংখ্যা বাড়বে। এমনকি কে কাকে কতবার পোক দিয়েছে, তাও এখানে দেখা যাবে। চাইলে ব্যবহারকারীরা কোনো পোক উপেক্ষাও করতে পারবেন।

এই নতুন পোক কাউন্ট মূলত তরুণদের লক্ষ্য করেই তৈরি করা হয়েছে। কারণ জেনারেশন জেড প্রজন্ম স্ন্যাপচ্যাট বা টিকটকের মতো অ্যাপে গ্যামিফিকেশন ফিচারের সঙ্গে অভ্যস্ত। উদাহরণস্বরূপ, স্ন্যাপচ্যাটে রয়েছে ‘স্ট্রাইকস’ ফিচার, যেখানে প্রতিদিন যোগাযোগ ধরে রাখলে বন্ধুত্বের ঘনিষ্ঠতা প্রকাশ পায়। ফেসবুকও পোক কাউন্টের মাধ্যমে সেই অভিজ্ঞতা দিতে চাইছে।

২০২৪ সালের মার্চে প্রথমবার ফেসবুক পোক ফিচারকে নতুনভাবে চালুর চেষ্টা করে। তখন বন্ধুর নাম সার্চ করলে সরাসরি পোক করার সুযোগ দেওয়া হয় এবং পোক পেজ খোঁজা সহজ করা হয়। মেটার দাবি, এসব পরিবর্তনের পর মাত্র এক মাসেই পোক দেওয়ার সংখ্যা ১৩ গুণ বেড়ে যায়।

তবে পোকের প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে ফেসবুক কখনো কোনো পরিষ্কার ব্যাখ্যা দেয়নি। ব্যবহারকারীরা একে ব্যবহার করেন নানা কারণে—কখনো মনোযোগ কাড়তে, কখনো খুনসুটি করতে কিংবা স্রেফ বিরক্ত করার জন্যও। ফলে ফিচারটি দীর্ঘমেয়াদে জনপ্রিয় হবে কি না, তা এখনো অনিশ্চিত।

বিশেষজ্ঞরা অবশ্য সতর্ক করছেন, তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাব সবসময় ইতিবাচক নয়। দ্য অ্যাংজিয়াস জেনারেশন বইয়ের লেখক জন হেইডট এবং এনওয়াইইউ স্টার্নের গবেষক জ্যাক রাউশের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, স্ন্যাপচ্যাটের অভ্যন্তরীণ নথি থেকেই জানা যায় তাদের স্ট্রাইকস ফিচার আসক্তিমূলক আচরণ তৈরি করতে পারে।

আজও ফেসবুক মেটার সবচেয়ে বড় আয়ের উৎস হলেও, তরুণ ব্যবহারকারীদের টানতে কোম্পানিকে লড়াই করতে হচ্ছে বহু বছর ধরে। কলেজভিত্তিক ফেসবুক ক্যাম্পাস চালু করেও ২০২২ সালে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে মেটা নতুন করে জেনারেশন জেড ব্যবহারকারীদের জন্য নকশা ও অভিজ্ঞতায় পরিবর্তনের উদ্যোগ নিচ্ছে।

সব মিলিয়ে, পোক ফিচারের প্রত্যাবর্তন নিছক নস্টালজিয়া নয়, বরং তরুণদের কাছে ফেসবুককে আবারও প্রাসঙ্গিক করে তুলতে মেটার কৌশলের অংশ। এখন দেখার বিষয়, এই প্রচেষ্টা সত্যিই কতটা সফল হয়।

সূত্র: টেকক্রাঞ্চ