ফিশিং ও স্ক্যাম থেকে কিভাবে রক্ষা পাবেন?

Staff Reporter

নিজস্ব প্রতিবেদক

রবিবার, ১৭ আগস্ট ২০২৫, ২২:৫২

ফিশিং ও স্ক্যাম থেকে কিভাবে রক্ষা পাবেন?

আজকাল অনলাইন জালিয়াতি যেন ডালভাত! ফিশিং আর স্ক্যামের ফাঁদে পা দিয়ে অনেকেই সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। কিন্তু ভয় নেই, একটু সচেতন হলেই এই বিপদ থেকে নিজেকে বাঁচানো যায়। 

ফিশিং কি এবং কিভাবে কাজ করে?

ফিশিং হল এক ধরনের অনলাইন প্রতারণা। যেখানে প্রতারকরা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, যেমন - ইউজারনেম, পাসওয়ার্ড, ক্রেডিট কার্ড নম্বর ইত্যাদি হাতিয়ে নেয়। তারা সাধারণত ইমেইল, মেসেজ অথবা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আপনার সাথে যোগাযোগ করে এবং আপনাকে বিশ্বাস করিয়ে আপনার তথ্য দিতে বাধ্য করে।

ফিশিংয়ের সাধারণ কৌশল

  • ভুয়া ইমেইল: দেখতে অফিসিয়াল মনে হলেও এগুলো আসলে প্রতারকদের পাঠানো ইমেইল।
  • SMS বা টেক্সট মেসেজ: লোভনীয় অফার বা জরুরি নোটিশের মাধ্যমে আপনাকে ক্লিক করতে উৎসাহিত করা হয়।
  • ভুয়া ওয়েবসাইট: দেখতে আসল ওয়েবসাইটের মতো হলেও এগুলো আপনার তথ্য চুরি করার জন্য তৈরি করা হয়।

স্ক্যাম কি এবং কিভাবে কাজ করে?

স্ক্যাম হল এক ধরনের প্রতারণা, যেখানে আপনাকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে বা ভুল বুঝিয়ে আপনার কাছ থেকে টাকা বা মূল্যবান জিনিস হাতিয়ে নেয়া হয়। স্ক্যাম বিভিন্ন রূপে আসতে পারে, যেমন - অনলাইন শপিং স্ক্যাম, লটারি স্ক্যাম, চাকরি স্ক্যাম ইত্যাদি।

স্ক্যামের সাধারণ কৌশল

  • লোভনীয় অফার: খুব কম দামে কিছু কেনার সুযোগ বা অপ্রত্যাশিত পুরস্কারের ঘোষণা।
  • তাড়াহুড়ো: দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়, যাতে আপনি ভালো করে চিন্তা করার সুযোগ না পান।
  • অপরিচিত নম্বর থেকে কল: নিজেকে ব্যাংক বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে আপনার তথ্য জানতে চাওয়া হয়।

ফিশিং ও স্ক্যাম থেকে বাঁচার উপায়

ফিশিং ও স্ক্যাম থেকে বাঁচতে হলে আপনাকে সবসময় সতর্ক থাকতে হবে। নিচে কিছু টিপস দেওয়া হল, যা আপনাকে এই বিপদ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে:

সন্দেহজনক ইমেইল এবং মেসেজ এড়িয়ে চলুন

যদি কোনো ইমেইল বা মেসেজ সন্দেহজনক মনে হয়, তাহলে সেটিতে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকুন। প্রেরকের ঠিকানা ভালোভাবে যাচাই করুন। কোনো ব্যক্তিগত তথ্য চাওয়া হলে, তা দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।

শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন

আপনার অ্যাকাউন্টের জন্য শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। পাসওয়ার্ডে অক্ষর, সংখ্যা এবং চিহ্ন ব্যবহার করুন। একই পাসওয়ার্ড সব অ্যাকাউন্টে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।

টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন ব্যবহার করুন

টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন আপনার অ্যাকাউন্টের সুরক্ষার জন্য অতিরিক্ত একটি স্তর যোগ করে। এটি চালু করলে, আপনার পাসওয়ার্ডের পাশাপাশি আপনার মোবাইল ফোনে একটি কোড পাঠানো হবে, যা লগইন করার সময় ব্যবহার করতে হবে।

অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করুন

আপনার কম্পিউটারে একটি ভালো অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করুন। এটি আপনাকে ক্ষতিকর ওয়েবসাইট এবং ম্যালওয়্যার থেকে রক্ষা করবে।

নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেট করুন

আপনার কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম এবং অন্যান্য সফটওয়্যারগুলো নিয়মিত আপডেট করুন। আপডেটের মাধ্যমে নিরাপত্তা ত্রুটিগুলো সমাধান করা হয়, যা আপনাকে ফিশিং ও স্ক্যাম থেকে রক্ষা করতে পারে।

অপরিচিত লিঙ্কে ক্লিক করবেন না

অপরিচিত কোনো লিঙ্কে ক্লিক করার আগে ভালোভাবে যাচাই করুন। সন্দেহজনক লিঙ্কে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকুন।

ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন

ফোন বা ইমেইলে কেউ আপনার ব্যক্তিগত তথ্য জানতে চাইলে, তা দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। কোনো প্রতিষ্ঠান আপনার তথ্য জানতে চাইলে, সরাসরি তাদের অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করুন।

অতিরিক্ত লোভ থেকে সাবধান থাকুন

অতিরিক্ত লোভনীয় অফারগুলো সাধারণত স্ক্যাম হয়ে থাকে। তাই, খুব কম দামে কিছু কেনার সুযোগ বা অপ্রত্যাশিত পুরস্কারের ঘোষণা দেখলে সতর্ক থাকুন।

সচেতন থাকুন এবং অন্যদের সচেতন করুন

ফিশিং ও স্ক্যাম সম্পর্কে নিজে জানুন এবং অন্যদেরকেও জানান। আপনার বন্ধু এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে এই বিষয়ে আলোচনা করুন, যাতে তারাও এই বিপদ থেকে বাঁচতে পারে।

ফিশিং ও স্ক্যাম চেনার কিছু লক্ষণ

ফিশিং ও স্ক্যাম চেনার জন্য কিছু সাধারণ লক্ষণ নিচে দেওয়া হল:

  • ব্যাকরণ এবং বানানে ভুল থাকা
  • অপরিচিত প্রেরকের কাছ থেকে আসা ইমেইল বা মেসেজ
  • তাড়াহুড়ো করার জন্য চাপ দেওয়া
  • ব্যক্তিগত তথ্য চাওয়া
  • অতিরিক্ত লোভনীয় অফার

ফিশিং ও স্ক্যামের শিকার হলে কি করবেন?

যদি আপনি ফিশিং বা স্ক্যামের শিকার হন, তাহলে দ্রুত কিছু পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। নিচে কিছু জরুরি পদক্ষেপ দেওয়া হল:

  • আপনার ব্যাংক এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে জানান।
  • আপনার পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন।
  • পুলিশের কাছে অভিযোগ করুন।
  • আপনার কম্পিউটারে অ্যান্টিভাইরাস স্ক্যান করুন।

ফিশিং ও স্ক্যাম নিয়ে কিছু সাধারণ প্রশ্ন

ফিশিং ইমেইল চেনার উপায় কি?

ফিশিং ইমেইল চেনার জন্য প্রেরকের ঠিকানা, ব্যাকরণ এবং বানানের ভুল, ব্যক্তিগত তথ্য চাওয়ার বিষয়গুলো লক্ষ্য করুন।

স্ক্যাম থেকে কিভাবে বাঁচা যায়?

স্ক্যাম থেকে বাঁচতে হলে লোভনীয় অফার থেকে দূরে থাকুন, ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন এবং সবসময় সতর্ক থাকুন।

ফিশিং অ্যাটাক হলে কি করতে হবে?

ফিশিং অ্যাটাক হলে দ্রুত আপনার ব্যাংক এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে জানান, পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন এবং পুলিশের কাছে অভিযোগ করুন।

মোবাইল ফোনে ফিশিং থেকে কিভাবে বাঁচা যায়?

মোবাইল ফোনে ফিশিং থেকে বাঁচতে হলে অপরিচিত নম্বর থেকে আসা মেসেজ এবং লিঙ্কে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকুন।

ফিশিং এবং স্ক্যামের মধ্যে পার্থক্য কি?

ফিশিং হল ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করার একটি কৌশল, যেখানে স্ক্যাম হল মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা বা মূল্যবান জিনিস হাতিয়ে নেওয়ার একটি প্রতারণা।

বাংলাদেশে ফিশিং এবং স্ক্যামের বর্তমান অবস্থা কি?

বাংলাদেশে ফিশিং এবং স্ক্যামের ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। তাই, এই বিষয়ে সচেতন থাকা খুবই জরুরি।

কিভাবে বুঝবেন যে একটি ওয়েবসাইট নিরাপদ কিনা?

ওয়েবসাইটের URL-এর শুরুতে "https" আছে কিনা দেখুন এবং ব্রাউজারের অ্যাড্রেস বারে একটি তালা (lock) আইকন আছে কিনা তা পরীক্ষা করুন।

জালিয়াতিপূর্ণ ইমেইল বা মেসেজের রিপোর্ট কোথায় করবেন?

আপনি সাইবার ক্রাইম ইউনিটে (Cyber Crime Unit) রিপোর্ট করতে পারেন অথবা আপনার ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারীর (Internet Service Provider) কাছে অভিযোগ জানাতে পারেন।

ফিশিং এবং স্ক্যাম থেকে সুরক্ষিত থাকতে আর কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়?

নিয়মিত আপনার ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং ক্রেডিট কার্ডের লেনদেন পরীক্ষা করুন, যাতে কোনো অননুমোদিত কার্যকলাপ নজরে আসে।

ফিশিং ও স্ক্যাম এর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানোর জন্য বাংলাদেশে কোন সরকারি সংস্থা রয়েছে?

বাংলাদেশে সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল (Cyber Crime Investigation Cell) এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ফিশিং ও স্ক্যামের বিরুদ্ধে অভিযোগ গ্রহণ করে।

ফিশিং এবং স্ক্যামিং এর শিকার হলে কিভাবে মানসিক চাপ মোকাবেলা করা যায়?

নিজেকে শান্ত রাখুন, বন্ধু এবং পরিবারের সঙ্গে কথা বলুন, এবং প্রয়োজনে মানসিক স্বাস্থ্য পেশাদারের সাহায্য নিন।

ফিশিং ও স্ক্যাম থেকে বাঁচতে কিছু অতিরিক্ত টিপস

  • পাবলিক Wi-Fi ব্যবহারের সময় সতর্ক থাকুন।
  • অপরিচিত ডিভাইস থেকে অ্যাকাউন্টে লগইন করা থেকে বিরত থাকুন।
  • নিয়মিত আপনার অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা সেটিংস পরীক্ষা করুন।
  • সন্দেহজনক কিছু দেখলে, দ্রুত রিপোর্ট করুন।
বৈশিষ্ট্য ফিশিং স্ক্যাম
উদ্দেশ্য ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করা টাকা বা মূল্যবান জিনিস হাতিয়ে নেয়া
কৌশল ভুয়া ইমেইল, মেসেজ, ওয়েবসাইট মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, লোভনীয় অফার
ঝুঁকি আর্থিক ক্ষতি, পরিচয় চুরি আর্থিক ক্ষতি
উদাহরণ ব্যাংক থেকে আসা ভুয়া ইমেইল লটারি জেতার ভুয়া খবর

ফিশিং ও স্ক্যাম থেকে বাঁচা কঠিন নয়, শুধু একটু সতর্ক থাকতে হবে। এই ব্লগ পোস্টে দেওয়া টিপসগুলো অনুসরণ করে আপনি নিজেকে এবং আপনার পরিবারকে অনলাইন জালিয়াতি থেকে রক্ষা করতে পারেন।