সুপারইন্টেলিজেন্ট এআই থেকে ‘বিপর্যয়কর ঝুঁকি’ নিয়ে সতর্ক করল ওপেনএআই

Staff Reporter

নিজস্ব প্রতিবেদক

মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৩১

সুপারইন্টেলিজেন্ট এআই থেকে ‘বিপর্যয়কর ঝুঁকি’ নিয়ে সতর্ক করল ওপেনএআই

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়ে নতুন এক সতর্কবার্তা দিয়েছে ওপেনএআই। প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, মানুষের বুদ্ধিমত্তাকে ছাড়িয়ে যাওয়া সুপারইন্টেলিজেন্ট এআই যেমন উন্নতি বয়ে আনতে পারে, তেমনি সেটি ‘সম্ভাব্যভাবে বিপর্যয়কর ঝুঁকি’ তৈরি করতে পারে। এই ঝুঁকি মোকাবিলায় বৈশ্বিক সহযোগিতা ও নীতিগত সমন্বয়ের আহ্বান জানিয়েছে চ্যাটজিপিটি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি।

সম্প্রতি এক ব্লগপোস্টে ওপেনএআই জানায়, সুপারইন্টেলিজেন্ট সিস্টেম তৈরির পথে বিশ্ব দ্রুত এগোচ্ছে, যা নিজেদেরই সক্ষমতা হয়তো বাড়াতে সক্ষম হতে পারে। প্রতিষ্ঠানটির ভাষায়, ‌‘কেউ যেন শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণ ও সামঞ্জস্য নিশ্চিত না করে এমন সুপারইন্টেলিজেন্ট সিস্টেম ব্যবহার থেকে বিরত থাকে। এর জন্য আরও প্রযুক্তিগত গবেষণা ও প্রস্তুতি প্রয়োজন।’

প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এই উন্নত এআই প্রযুক্তির ঝুঁকি কমাতে বাস্তবভিত্তিক গবেষণা জরুরি। প্রয়োজনে পুরো শিল্পক্ষেত্রেরই উন্নয়ন কিছুটা ধীর করা উচিত, যাতে এসব সিস্টেমের প্রভাব ভালোভাবে বোঝা যায়।

ওপেনএআই মনে করছে, প্রচলিত এআই নিয়ন্ত্রণ কাঠামো সুপারইন্টেলিজেন্ট সিস্টেমের ঝুঁকি মোকাবিলায় যথেষ্ট নয়। এজন্য একাধিক দেশের নির্বাহী সংস্থা, নিরাপত্তা ইনস্টিটিউট এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বিত উদ্যোগ দরকার। বিশেষ করে বা সাইবার হুমকি মোকাবিলায় এআই ব্যবহারের ক্ষেত্রগুলোতে যৌথ তদারকি জরুরি বলে প্রতিষ্ঠানটি উল্লেখ করেছে।

প্রতিষ্ঠানটি চারটি সুপারিশ দিয়েছে- প্রথমত, এআই গবেষণাগারগুলো যেন নিরাপত্তা নীতিমালা ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত গবেষণা একে অপরের সঙ্গে ভাগাভাগি করে। দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে যেন একক ও সামঞ্জস্যপূর্ণ নীতিমালা তৈরি হয়, যাতে রাজ্য বা অঞ্চলভেদে ভিন্ন ভিন্ন আইন কার্যকারিতা হারিয়ে না ফেলে। তৃতীয়ত, সাইবার নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষায় সরকার ও প্রযুক্তি কোম্পানির যৌথ উদ্যোগ প্রয়োজন। চতুর্থত, ইন্টারনেটের নিরাপত্তা কাঠামোর মতো এআই নিরাপত্তা ইকোসিস্টেম তৈরি করতে হবে, যাতে পর্যবেক্ষণ, মাননিয়ন্ত্রণ ও জরুরি প্রতিক্রিয়ার ব্যবস্থা থাকে।

ব্লগপোস্টে ওপেনএআই আরও জানিয়েছে, ২০২৬ সালের মধ্যেই এআই সিস্টেম ‘খুব ছোট পরিসরে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার’ করতে সক্ষম হবে এবং ২০২৮ সালের পর বড় ধরনের আবিষ্কারেও ভূমিকা রাখবে বলে তারা আশা করছে।

তবে প্রতিষ্ঠানটি স্বীকার করেছে, এআই-এর অগ্রগতির ফলে অর্থনৈতিক ও কর্মসংস্থানের বড় রূপান্তর আসতে পারে। ‘এই পরিবর্তন কঠিন হতে পারে, এমনকি সামাজিক-অর্থনৈতিক কাঠামোও নতুনভাবে ভাবতে হতে পারে। তবে সুষম উন্নয়ন হলে মানুষের জীবন আগের চেয়ে অনেক উন্নত হবে,’ উল্লেখ করেছে ওপেনএআই।

এদিকে, গবেষক আন্দ্রেজ কারপাথি মনে করেন, এখনো কৃত্রিম সাধারণ বুদ্ধিমত্তা (এজিআই) অর্জনে অন্তত এক দশক সময় লাগবে। তার মতে, এআই সিস্টেম এখনো ধারাবাহিকভাবে শেখার ক্ষমতায় পিছিয়ে আছে এবং মানুষের মতো স্মৃতি বা বোঝাপড়া গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ।

ওপেনএআইয়ের এই সতর্কবার্তা এমন সময় এল, যখন প্রযুক্তি বিশ্বের বড় বড় কোম্পানিগুলো নিজস্ব এআই মডেল উন্নয়নে প্রতিযোগিতায় নেমেছে এবং নিয়ন্ত্রণ কাঠামো তৈরির প্রশ্নে বিশ্বজুড়ে বিতর্ক চলছে।

সূত্র : দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস