মঙ্গলবার

ঢাকা, ৮ জুলাই ২০২৫

সর্বশেষ


খবর

ভূমিকম্পে বাংলাদেশের যেসব ঝুঁকি নিয়ে সতর্ক করলেন বিশেষজ্ঞরা

প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৫, বিকাল ৬:৩৮

টেকওয়ার্ল্ড প্রতিবেদক

Card image

ছবি: রাজধানীর আইইবি সেমিনার কক্ষে দেশি-বিদেশি ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ও প্রকৌশলীরা আলোচনায় অংশ নেন। সংগৃহীত

আমরা ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে বাস করলেও তা নগর নকশা, ভবন নির্মাণ বা জনসচেতনতায় যথেষ্ট প্রতিফলিত হচ্ছে না। ভূমিকম্প প্রতিরোধে এখনই সময়োপযোগী পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন দরকার

ভূমিকম্পের ঝুঁকি ক্রমাগত বাড়লেও বড় কোনো ভূমিকম্পের জন্য প্রস্তুত নয় বাংলাদেশ। সম্প্রতি মিয়ানমার ও নেপালে পরপর কয়েকটি ভূমিকম্প এই অঞ্চলের জন্য এক ভয়াবহ সতর্কবার্তা হয়ে এসেছে। এই প্রেক্ষাপটে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি) এবং বাংলাদেশ আর্থকোয়েক সোসাইটির যৌথ আয়োজনে “মিয়ানমার ও নেপালে সাম্প্রতিক ভূমিকম্প: বাংলাদেশের জন্য ভূমিকম্পের উদ্বেগ এবং ভবিষ্যৎ পথ” শীর্ষক এক বিশেষ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সেমিনারটি গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর রমনায় আইইবি সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। এতে দেশি-বিদেশি ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ও প্রকৌশলীরা অংশ নেন।

সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন আইইবি প্রেসিডেন্ট ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোহাম্মদ রিয়াজুল ইসলাম (রিজু)। তিনি বলেন, “আমরা ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে বাস করলেও তা নগর নকশা, ভবন নির্মাণ বা জনসচেতনতায় যথেষ্ট প্রতিফলিত হচ্ছে না। ভূমিকম্প প্রতিরোধে এখনই সময়োপযোগী পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন দরকার।”

তিনি আরও বলেন, শুধু ঢাকায় নয়, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব এলাকায় ভবন নির্মাণে বিশেষ সতর্কতা ও আইনি বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করতে হবে।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. তাহমিদ এম. আল-হুসেইনী। ঢাকার মাটি মূলত নরম ও অবিচল নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, “ভূমিকম্প হলে এমন মাটিতে নির্মিত অনেক ভবন ধসে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। প্রায় ৭০ ভাগ ভবনের নকশায় ভূমিকম্প প্রতিরোধের বিষয়টি উপেক্ষিত।”

অনলাইনে যুক্ত হয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন থাইল্যান্ডের এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিরস্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক পেনাং ওয়ারনিতচাই। তিনি ডেটা সংগ্রহ, ভূমি কম্পন বিশ্লেষণ ও সেন্সরভিত্তিক পূর্বাভাস ব্যবস্থায় বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ায় জোর দেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালক রেজওয়ানুর রহমান বলেন, “প্রযুক্তিগত প্রস্তুতির পাশাপাশি দুর্যোগকালীন রেসপন্স ব্যবস্থাকেও ঢেলে সাজাতে হবে। স্কুল, কলেজ, হোস্টেল—সবখানে সিমুলেশন ও মহড়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে।”

আইইবি’র সম্মানী সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. প্রকৌশলী মো. সাব্বির মোস্তফা খান বলেন, “শুধু নীতিমালায় নয়—কারিগরি শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও বাস্তব প্রয়োগে ভূমিকম্প প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।”

অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন অধ্যাপক রাকিব আহসান ও অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গির আলম। রাজধানীর সরকারি ভবন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ভূমিকম্প সহনীয় ব্যবস্থা নেই উল্লেখ করে ভবনগুলো পুনর্গঠনের ওপর জোর দেন তারা।

সেমিনারে মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন প্রকৌশলী এম. আব্দুল আউয়াল, অধ্যাপক জিল্লুর রহমান, অধ্যাপক এম. এ. আনসারি, আব্দুল লতিফ খান, ও ড. আলী আকবর মল্লিক।

সেমিনারে আলোচকরা নিম্নোক্ত প্রস্তাব তুলে ধরেন

  • প্রতিটি নতুন ভবনের অনুমোদনে ভূমিকম্প সহনীয় ডিজাইন বাধ্যতামূলক করা
  • পুরাতন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের জরিপ ও পুনর্গঠন
  • ভূমিকম্প ঝুঁকির এলাকা ভিত্তিক মানচিত্র তৈরি ও তা নগর পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত
  • স্কুল, অফিস ও আবাসিক এলাকায় মহড়া ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম
  • সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্সিং ব্যবস্থা কঠোর করা

সংবাদটি পঠিত হয়েছে: ৭৮ বার

এ সম্পর্কিত আরও খবর