২১ ঘন্টা আগে
২২ ঘন্টা আগে
১ দিন আগে
১ দিন আগে
ছবি: ডিসমিসল্যাব
এসব তথ্য অনেক সময় পুরোনো বা ভিন্ন প্রেক্ষাপটের হলেও, সেগুলোকে বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে মিলিয়ে প্রচার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ডিসমিসল্যাব
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা ও সংঘাতের ঘটনার প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে। এমনকি বিভিন্ন গণমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ছে বিভ্রান্তিকর ও ভুয়া দাবিযুক্ত ছবি-ভিডিও। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ভুয়া দাবি ও বিভ্রান্তিকর ছবি-ভিডিও যাচাই করেছে ডিসমিসল্যাব। এক প্রতিবেদনে ভারত-পাকিস্তান সংঘাত ঘিরে ছড়িয়ে পড়া অপতথ্য যাচাইয়ের তথ্য প্রকাশ করেছে তারা।
অপতথ্যের মধ্যে আছে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও। এসব তথ্য অনেক সময় পুরোনো বা ভিন্ন প্রেক্ষাপটের হলেও, সেগুলোকে বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে মিলিয়ে প্রচার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ডিসমিসল্যাব। ডিসমিসল্যাবের যাচাই করা কয়েকটি তথ্য টেকওয়ার্ল্ডের পাঠকদের জন্য দেওয়া হলো।
ভুল দাবিতে ছড়ানো ভিডিও এবং পুরোনো ভিডিও। ছবি: ডিসমিসল্যাব
ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করে দাবি করা হয় “ভারতের যুদ্ধবিমান ভুপাতিত করার দৃশ্য। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ভারতীয় পাঁচটা যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছে পাকিস্তান। কয়েকজন ভারতীয় পাইলট আটক করেছে পাকিস্তান।” ভিডিওতে বিস্ফোরণের পর একটি বাড়িতে আগুন জ্বলতে দেখা যাচ্ছে।
ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা যায়, এটি সাম্প্রতিক কোনো ভিডিও নয়। ইউটিউবে একই ভিডিও পাওয়া যায় যা ২০২৪ সালের ১১ মার্চ আপলোড করা হয়েছিল। এটির সঙ্গে চলমান ভারত-পাকিস্তানে উত্তেজনার কোনো সম্পর্ক নেই।
ভুল দাবিতে ছড়ানো ভিডিও এবং পুরোনো ভিডিও। ছবি: ডিসমিসল্যাব
আরেকটি ভিডিও পোস্ট হতে দেখা যাচ্ছে ফেসবুকে। ভিডিওতে মিসাইল ছুড়ে একটি বিমানকে ভূপাতিত করার দৃশ্য দেখা যায়। এটিকেও ভারতের যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দৃশ্য বলে প্রচার করে হচ্ছে।
ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা যায়, এটি ৬ মে দিবাগত রাতে পাকিস্তান কর্তৃক ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার ভিডিও নয়। অন্তত ৯ দিন আগেও ভিডিওটি ইউটিউবে আপলোড করা হয়েছিল।
ভুল ছবিযুক্ত সংবাদ প্রতিবেদন এবং মূল ঘটনার সংবাদ প্রতিবেদন। ছবি: ডিসমিসল্যাব
ভারতের যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার সংবাদে ছবিটি ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে গণমাধ্যমে। ছবিটিতে একটি বিধ্বস্ত বিমানে আগুন জ্বলতে দেখা যাচ্ছে। কিছু গণমাধ্যম ফটোকার্ডে ছবিটি ব্যবহার করলেও পরবর্তীতে সরিয়ে নিয়েছে।
যাচাইয়ে দেখা যায় এটি ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের রাজস্থানে বিধ্বস্ত হওয়া একটি যুদ্ধবিমানের ছবি। প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে প্রশিক্ষণের সময় ভারতীয় বিমান বাহিনীর মিগ-২৯ যুদ্ধবিমানটি বিধ্বস্ত হয়। এটির সঙ্গে চলমান ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানায় ডিসমিসল্যাব।
ভুল দাবিতে ছড়ানো ভিডিও এবং মূল ভিডিও। ছবি: ডিসমিসল্যাব
ফেসবুকে একটি ভিডিওটি পোস্ট করা হয়, যেটার ক্যাপশনে লেখা হয়, “আল্লাহু আকবার পাকিস্তান জিন্দাবাদ এভাবেই ভারতের পাঁচটা বিমান ভূপাতিত করেছে। আলহামদুলিল্লাহ।”
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে এক ব্যক্তি মিসাইল ছুড়ে একটি হেলিকপ্টার ভূপাতিত করেছে। ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা যায়, এটি একটি ভিডিও গেমের দৃশ্য। চলতি বছরের ৩১ মার্চ ইউটিউবে আপলোড হওয়া এই ভিডিওটির শিরোনাম ছিল “অন টারগেট! গ্রোজনিতে মার্কিন জেভেলিন রাশিয়ান হেলিকপ্টার ধ্বংস করেছে! #আরমা৩”। আরমা ৩ হলো একটি ভিডিও গেম। ভিডিওর বিবরণেও এটিকে গেমের দৃশ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ভুল দাবিতে ছড়ানো ভিডিও এবং ইরনার ভিডিও প্রতিবেদন। ছবি: ডিসমিসল্যাব
ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে এমন দাবিযুক্ত ফেসবুক পোস্টে ভিডিও যুক্ত করা হচ্ছে যেখানে একটি এলাকায় মিসাইল হামলা হতে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওটির ডানদিকে উপরের প্রান্তে ‘ইন্ডিয়া’ লেখাটি দেখা যায়।
যাচাইয়ে দেখা যায়, ভিডিওটি ভারত বা পাকিস্তানের নয়। অন্তত সাত মাস পুরোনো ভিডিওটি পোস্ট করতে দেখা যায় ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ইরান ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সিতে (ইরনা)। ২০২৪ সালের অক্টোবরে ইরনা তাদের অফিশিয়াল টুইটার হ্যান্ডেলে ভিডিওটি শেয়ার করেছিল। তারা এটিকে ‘উত্তর তেল আবিবের হারজেলিয়ায় ইরানি মিসাইল হামলার দৃশ্য’ বলে উল্লেখ করে।
ভুল দাবিযুক্ত পোস্ট এবং মূল ভিডিও। ছবি: ডিসমিসল্যাব
“আবারও পাকিস্তানে হামলা চালাচ্ছে ভারত”—এমন দাবিতে একটি ভিডিও পোস্ট হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। ভিডিওতে একটি এলাকায় সেনা মহড়া দিতে দেখা যাচ্ছে। বেশ কিছু ট্যাংক থেকে গোলা নিক্ষেপ করতেও দেখা যায়।
ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে ভিডিওটির প্রায় পাঁচ বছর পুরোনো উৎস সামনে আসে। ‘ডিফেন্স দিল্লি রিভিউ’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেল থেকে ২০২০ সালের ১৬ জানুয়ারিতে পোস্ট করা হয়। ভিডিওর শিরোনাম ছিল, “দেবলালি রেঞ্জে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ১২২ মিমি ‘আপগ্রেডেড’ গ্র্যাড মাল্টি ব্যারেল রকেট লঞ্চারের গুলিবর্ষণ।” অর্থাৎ, এই ভিডিওর সঙ্গেও চলমান সংঘাতের কোনো সম্পর্ক নেই।
ভুল দাবিতে ছড়ানো পোস্টের স্ক্রিনশট এবং আল জাজিরার ভিডিও প্রতিবেদন। ছবি: ডিসমিসল্যাব
পাকিস্তানে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা দাবি করে একটি ভিডিও পোস্ট হচ্ছে ফেসবুকে। ভিডিওতে একটি এলাকায় বোমা হামলা হওয়ার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। হামলার সঙ্গে সঙ্গে তাঁবু থেকে কিছু মানুষকে দৌঁড়াতে দেখা যায়।
যাচাইয়ে দেখা যায় এই ভিডিওটি মূলত ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বোমা হামলার। ২০২৩ সালের ৯ নভেম্বর সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার একটি ভিডিও প্রতিবেদনে এই দৃশ্যটি দেখা যায়। ভিডিওর শিরোনাম ছিল, “গাজার ইন্দোনেশিয়ার হাসপাতালে আহতদের খবর পাওয়া যাচ্ছে”। ভিডিওর ৫ মিনিট ৭ সেকেন্ড থেকে ভুল দাবিতে ছড়ানো ভিডিওর দৃশ্যের সঙ্গে হুবহু মিল পাওয়া যায়। অর্থাৎ এটি পাকিস্তান-ভারত সংঘাতের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।
ভুল দাবিতে ছড়ানো পোস্ট এবং “দ্য ডন” এর সংবাদ প্রতিবেদন। ছবি: ডিসমিসল্যাব
“ভারতের যুদ্ধবিমান বোপাদিত করেছে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী এবং ভারতীয় বিমান সেনাকে আটক করেছে পাকিস্তানি ক্ষুব্ধ জনতা যা পরবর্তীতে পাকিস্তানি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে।”—এমন ক্যাপশনে ভিডিও প্রচার হতে দেখা যাচ্ছে ফেসবুকে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে একটি বিধ্বস্ত বিমানে আগুন জ্বলছে এবং কয়েকজন ব্যক্তি আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে।
ভিডিওটির সূত্র যাচাইয়ে দেখা যায় এটি চলতি বছরের এপ্রিলের একটি ঘটনার দৃশ্য। গত ১৬ এপ্রিল প্রকাশিত পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডনের এক প্রতিবেদনে এটিকে পাকিস্তানের একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার দৃশ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ভিডিওর ১৪ সেকেন্ড থেকে অপর একটি ঘটনার দৃশ্য যোগ করা হয়েছে। যাচাইয়ে দেখা গেছে সেটিও পুরোনো একটি ঘটনার ভিডিও। ভারতের মধ্য প্রদেশে গত ৬ ফেব্রুয়ারি সে দেশের বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা এটি।
মোহাম্মদ আমিনুল হাকিম বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরামের (বিআইজিএফ) চেয়ারপার্সন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি আইএসপিএবি'র সাবেক...