মঙ্গলবার

ঢাকা, ৮ জুলাই ২০২৫

সর্বশেষ


টেলিকম

টেলিকম নীতিমালায় সরকারের তড়িঘড়ি সিদ্ধান্তে বিএনপির উদ্বেগ

প্রকাশ: ৩ জুলাই ২০২৫, বিকাল ৬:২৩

মাহবুব শরীফ

Card image

ছবি: মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ড. আবদুল মঈন খান

‘মোবাইল অপারেটরদের ফাইবারভিত্তিক ব্যবসা সংযোগ সেবা কোথায় সীমাবদ্ধ তা স্পষ্ট নয়, ফলে বিবাদ ও অসাম্য তৈরি হতে পারে।’

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) ‘ড্রাফট টেলিকম নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং রিফর্ম পলিসি ২০২৫’নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএনপি। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, উদ্যোগ প্রশংসনীয় হলেও আমরা এই মুহূর্তে এ ধরণের একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে তড়িঘড়ি করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছি।

আজ (৩ জুলাই) রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দলের এ অবস্থান ব্যক্ত করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন,‘এই নীতির উদ্দেশ্য হলো- লাইসেন্সিং পদ্ধতি সহজ করা, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি উৎসাহিত করা এবং গ্রামীণ জনগণের ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি বাড়ানো; যা অবশ্যই ইতিবাচক একটি বিষয়। তবে খসড়া নীতিমালাটি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এতে কিছু গুরুতর সমস্যা রয়েছে; যা টেলিকম খাতে সমতাভিত্তিক ও টেকসই উন্নয়নে বাধা দিতে পারে। ছোট ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় উদ্যোক্তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন,‘বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য মালিকানার সীমা নিয়ে অস্পষ্টতা আছে, যা বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে পারে এবং খাতের স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত করতে পারে। ক্রস-ওনারশিপের ফাঁকফোকর: উল্লম্ব ও সমান্তরাল মালিকানার বিষয়ে পরিষ্কার ব্যাখ্যার অভাবে বড় কোম্পানিগুলো আরও বাজার দখল করে নিতে পারে।’

তিনি মনে করেন, ‘মোবাইল অপারেটরদের ফাইবারভিত্তিক ব্যবসা সংযোগ সেবা কোথায় সীমাবদ্ধ তা স্পষ্ট নয়, ফলে বিবাদ ও অসাম্য তৈরি হতে পারে।’

বিএনপি মহাসচিব উল্লেখ করেন,‘স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড বা নতুন ডিজিটাল সেবা নিয়ে নীতিতে কোনও সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই, যা বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করতে পারে।’

আইএসপি লাইসেন্স একীভূত করার ফলে বড় প্রতিষ্ঠানগুলো সুবিধা পাবে। এএনএসপি লাইসেন্সে স্পেকট্রামের ওপর নির্ভরতা বড় কোম্পানিগুলোকে এগিয়ে রাখবে। ফিক্সড টেলিকম লাইসেন্স খোলা থাকলেও সারাদেশে সেবা দিতে হবে এবং উচ্চ মান বজায় রাখতে হবে যা এসএমইদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।

বড় মোবাইল কোম্পানিকে এন্টারপ্রাইজ ব্রডব্যান্ড বাজারে প্রবেশ করতে দিলে ছোট কোম্পানিগুলো প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে এবং একচেটিয়া পরিবেশ তৈরি হবে, যা দেশের সার্বিক অর্থনীতির ওপরেও বিরূপ প্রভাব ফেলবে।

সংবাদ সম্মেলনে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন-এর সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, সম্প্রতি যে নীতিমালা প্রকাশ করা হলো তা তড়িঘড়ি না করে সরকার চাইলে আরও সময় নিয়ে তা করা সম্ভব ছিলো। নীতিমালা প্রকাশের আগে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে মতামত নেওয়া উচিৎ ছিলো। শুধুমাত্র রাজস্ব আদায়ের কথা চিন্তা করে এমন সিদ্ধান্ত সম্ভবত; গ্রাহকদের লোকসানে ফেলবে। গ্রাহকের যাতে ক্ষতি না হয় ও রাজস্বও আদায় হয়, এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করলে বিষয়টি সুন্দর হতো। রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি এবিষয়ে খুব দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এজন্য দলটিকে ধন্যবাদও জানান তিনি।

অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটস অব বাংলাদেশ (এমটব)-এর হেড অব কমিউনিকেশন আব্দুল্লাহ আল মামুন এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। 

ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি)’র সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, সম্প্রতি যে টেলিকম নীতিমালা প্রকাশ হয়েছে তার কয়েকটি জায়গায় আমাদের আপত্তি রয়েছে। এনটিটিএন প্রতিষ্ঠানগুলোকে লাস্টমাইল এক্সেস দেওয়া হয়েছে। ফিক্সড টেলিকমকে ওয়্যারলেস সার্ভিসের পাশাপাশি ফাইবার ভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যা মোটেই কাম্য নয়, এনটিটিএন-কে লাস্টমাইল পর্যন্ত এক্সেস দেওয়া ঠিক হয়নি। আইপি টেলিকম ও ফিক্সড টেলিকম সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুকে বান্ডেল করেছে, এটি নীতিমালার একটি ভালো দিক। তবে ইন্টারন্যাশনাল এসএমএস-এ আইপি টেলিকম প্রতিষ্ঠানগুলোকে এক্সেস দেওয়া প্রয়োজন। নীতিমালা নিয়ে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে খুব দ্রুত বসা উচিৎ বলেও মনে করেন তিনি।

সংবাদটি পঠিত হয়েছে: ২০৭ বার

এ সম্পর্কিত আরও খবর