ফেসবুক নিরাপত্তা : ১০ সেটিংসে অ্যাকাউন্ট করুন সুরক্ষিত!
						ফেসবুক চালান, অথচ নিরাপত্তা নিয়ে ভাবেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল! আজকের ডিজিটাল যুগে, ফেসবুক আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। বন্ধু-বান্ধব, পরিবার-পরিজনদের সাথে জুড়ে থাকা থেকে শুরু করে খবর দেখা, বিনোদন, এমনকি ব্যবসার কাজেও ফেসবুকের ব্যবহার বাড়ছে। কিন্তু, এই জনপ্রিয়তার সাথে সাথে বাড়ছে অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা ঝুঁকিও। হ্যাকাররা ওঁত পেতে আছে আপনার সামান্য অসাবধানতার সুযোগে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার জন্য।
তাই, আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টকে সুরক্ষিত রাখাটা এখন সময়ের দাবি। কিন্তু কিভাবে বুঝবেন আপনার অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত আছে কিনা? আর যদি না থাকে, তাহলেই বা কি করবেন? আমাদের আজকের আয়োজন ফেসবুক অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা জোরদার করার ১০টি গুরুত্বপূর্ণ সেটিংস নিয়ে। এই সেটিংসগুলো ব্যবহার করে আপনি আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টকে হ্যাকারদের হাত থেকে বাঁচাতে পারবেন এবং নিশ্চিন্তে ফেসবুক ব্যবহার করতে পারবেন। তাহলে চলুন, শুরু করা যাক!
ফেসবুক অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা কেন জরুরি?
ফেসবুক অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা কেন এত জরুরি, সেটা একটু বুঝিয়ে বলা যাক। ধরুন, আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট যদি হ্যাক হয়, তাহলে হ্যাকার আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, যেমন - আপনার নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর, ইমেল আইডি ইত্যাদি হাতিয়ে নিতে পারে। শুধু তাই নয়, তারা আপনার বন্ধুদের কাছে ভুল বার্তা পাঠাতে পারে, আপনার নামে ফেক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে, এমনকি আপনার অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে কোনো অপরাধমূলক কাজও করতে পারে।
- আপনার ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হতে পারে।
 - আপনার বন্ধুরা প্রতারিত হতে পারে।
 - আপনার সম্মানহানি হতে পারে।
 - আপনি সাইবার অপরাধের শিকার হতে পারেন।
 
বুঝতেই পারছেন, একটা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়া মানে কতটা ঝামেলার! তাই, আগে থেকেই সাবধান থাকা বুদ্ধিমানের কাজ।

ফেসবুক অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা জোরদার করার ১০টি গুরুত্বপূর্ণ সেটিংস
আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিচে ১০টি গুরুত্বপূর্ণ সেটিংস আলোচনা করা হলো:
শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন
আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টের জন্য একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড নির্বাচন করা খুবই জরুরি। শক্তিশালী পাসওয়ার্ড মানে হল, সেটি হতে হবে অক্ষর, সংখ্যা এবং চিহ্নের মিশ্রণে তৈরি। আপনার পাসওয়ার্ড যেন সহজে অনুমান করা না যায়। আপনার নাম, জন্ম তারিখ অথবা অন্য কোনো ব্যক্তিগত তথ্য পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
- কমপক্ষে ১২টা অক্ষর ব্যবহার করুন।
 - ছোট ও বড় হাতের অক্ষর মিশিয়ে দিন।
 - সংখ্যা ও চিহ্ন ব্যবহার করুন।
 - পাসওয়ার্ডটি মনে রাখার মতো করুন, কিন্তু সহজে অনুমান করা যায় এমন কিছু ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
 
দুই-স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা (Two-Factor Authentication) চালু করুন
দুই-স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা আপনার অ্যাকাউন্টের সুরক্ষার জন্য একটি অতিরিক্ত স্তর যোগ করে। এই সেটিংসটি চালু করলে, কেউ যদি আপনার পাসওয়ার্ড জেনেও যায়, তবুও আপনার অ্যাকাউন্টে লগইন করতে পারবে না। কারণ, লগইন করার সময় আপনার ফোনে একটি কোড পাঠানো হবে, যা প্রবেশ করালেই কেবল অ্যাকাউন্টে ঢোকা যাবে।
- ফেসবুকের সেটিংস-এ যান।
 - "Security and Login" অপশনটি নির্বাচন করুন।
 - "Two-Factor Authentication" অপশনটি খুঁজে বের করে চালু করুন।
 - নির্দেশাবলী অনুসরণ করুন এবং আপনার ফোন নম্বর যোগ করুন।
 
লগইন অ্যালার্ট (Login Alerts) চালু করুন
লগইন অ্যালার্ট চালু থাকলে, কেউ যদি অন্য কোনো ডিভাইস বা ব্রাউজার থেকে আপনার অ্যাকাউন্টে লগইন করার চেষ্টা করে, তাহলে আপনি সাথে সাথে জানতে পারবেন। এর ফলে, কোনো অননুমোদিত লগইন দেখলে আপনি দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
- "Settings & Privacy" তে যান।
 - "Security and login" এ ক্লিক করুন।
 - "Get alerts about unrecognized logins" অপশনটি চালু করুন।
 - আপনার ইমেল এবং নোটিফিকেশন অপশনগুলো নির্বাচন করুন।
 
বিশ্বস্ত পরিচিতি নির্বাচন করুন (Trusted Contacts)
বিশ্বস্ত পরিচিতি হলো আপনার সেই বন্ধুরা, যারা প্রয়োজনে আপনার অ্যাকাউন্ট পুনরুদ্ধারে সাহায্য করতে পারবে। যদি কখনও আপনার অ্যাকাউন্টে লগইন করতে সমস্যা হয়, তাহলে ফেসবুক আপনার বিশ্বস্ত বন্ধুদের কাছে একটি কোড পাঠাবে, যা ব্যবহার করে আপনি আপনার অ্যাকাউন্ট পুনরুদ্ধার করতে পারবেন।
- "Settings & Privacy" তে যান।
 - "Security and login" এ ক্লিক করুন।
 - "Choose trusted contacts" অপশনটি নির্বাচন করুন এবং আপনার বন্ধুদের নির্বাচন করুন।
 
সন্দেহজনক কার্যকলাপের জন্য নিয়মিত নজর রাখুন
নিয়মিত আপনার অ্যাকাউন্টের কার্যকলাপের দিকে নজর রাখাটা খুব জরুরি। যদি আপনি কোনো সন্দেহজনক কার্যকলাপ দেখেন, যেমন - আপনার অজান্তে কোনো পোস্ট করা হয়েছে অথবা কোনো মেসেজ পাঠানো হয়েছে, তাহলে দ্রুত ব্যবস্থা নিন।
- আপনার টাইমলাইন এবং পোস্টগুলো নিয়মিত দেখুন।
 - আপনার মেসেজ এবং অ্যাক্টিভিটি লগ চেক করুন।
 - যদি কিছু সন্দেহজনক মনে হয়, তাহলে দ্রুত রিপোর্ট করুন।
 
পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করুন
পাবলিক ওয়াইফাই নেটওয়ার্কগুলি সাধারণত নিরাপদ হয় না। হ্যাকাররা সহজেই এই নেটওয়ার্কগুলিতে আপনার ডেটা চুরি করতে পারে। তাই, পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করার সময় আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লগইন করা থেকে বিরত থাকুন। যদি নিতান্তই প্রয়োজন হয়, তাহলে ভিপিএন (VPN) ব্যবহার করুন।
- পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহারের সময় ভিপিএন ব্যবহার করুন।
 - সংবেদনশীল তথ্য আদান প্রদানে বিরত থাকুন।
 - লগইন করার সময় https:// আছে কিনা, তা নিশ্চিত করুন।
 
থার্ড-পার্টি অ্যাপস (Third-party Apps) এর অনুমতি সীমিত করুন
অনেক সময় আমরা বিভিন্ন থার্ড-পার্টি অ্যাপস এবং গেমসের সাথে আমাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট লিঙ্ক করি। এই অ্যাপসগুলো আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য অ্যাক্সেস করতে পারে। তাই, যে অ্যাপসগুলো আপনি আর ব্যবহার করেন না, সেগুলোর অনুমতি বাতিল করুন।
- "Settings & Privacy" তে যান।
 - "Apps and Websites" এ ক্লিক করুন।
 - যে অ্যাপসগুলোর আর প্রয়োজন নেই, সেগুলো সরিয়ে দিন।
 
আপনার ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখুন
ফেসবুকে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, যেমন - আপনার ফোন নম্বর, ইমেল আইডি এবং ঠিকানা প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকুন। এই তথ্যগুলো হ্যাকারদের হাতে পড়লে তারা আপনার ক্ষতি করতে পারে।
- প্রোফাইল সেটিংস-এ গিয়ে আপনার ব্যক্তিগত তথ্যগুলো "Only Me" অথবা "Friends" করে রাখুন।
 - অপরিচিতদের সাথে ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন।
 
ফিশিং (Phishing) থেকে সাবধান থাকুন
ফিশিং হলো হ্যাকারদের একটি কৌশল, যেখানে তারা আপনাকে ইমেইল বা মেসেজের মাধ্যমে নকল ওয়েবসাইটে নিয়ে গিয়ে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করার চেষ্টা করে। তাই, কোনো সন্দেহজনক লিঙ্কে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকুন।
- অপরিচিত প্রেরকের কাছ থেকে আসা ইমেইল বা মেসেজের লিঙ্কে ক্লিক করবেন না।
 - যদি কোনো লিঙ্ক সন্দেহজনক মনে হয়, তাহলে সরাসরি ওয়েবসাইটে গিয়ে তথ্য যাচাই করুন।
 - আপনার ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়ার আগে ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।
 
ফেসবুকের নিরাপত্তা সেটিংস সম্পর্কে আপডেটেড থাকুন
ফেসবুক তাদের নিরাপত্তা সেটিংস নিয়মিত আপডেট করে। তাই, ফেসবুকের নতুন নিরাপত্তা সেটিংস এবং বৈশিষ্ট্যগুলো সম্পর্কে সবসময় আপডেটেড থাকুন। এতে আপনি আপনার অ্যাকাউন্টকে আরও সুরক্ষিত রাখতে পারবেন।
- ফেসবুকের নিরাপত্তা বিষয়ক ব্লগ এবং হেল্প সেন্টার নিয়মিত দেখুন।
 - নতুন সেটিংস এবং বৈশিষ্ট্যগুলো সম্পর্কে জানুন এবং ব্যবহার করুন।
 
কিছু সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)
ফেসবুক নিরাপত্তা নিয়ে আপনাদের মনে কিছু প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক। নিচে কয়েকটি সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলো:
ফেসবুক অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড কতদিন পর পর পরিবর্তন করা উচিত?
ফেসবুক অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড অন্তত ৩-৬ মাস পর পর পরিবর্তন করা উচিত।
আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে কিনা, তা বুঝবো কিভাবে?
যদি আপনি আপনার অ্যাকাউন্টে সন্দেহজনক কার্যকলাপ দেখেন, যেমন - আপনার অজান্তে কোনো পোস্ট করা হয়েছে অথবা কোনো মেসেজ পাঠানো হয়েছে, তাহলে বুঝবেন আপনার অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে।
ফেসবুক অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য আর কি কি করা যায়?
ফেসবুক অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য আপনি একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে পারেন, দুই-স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা চালু করতে পারেন এবং লগইন অ্যালার্ট চালু রাখতে পারেন।
ফিশিং থেকে বাঁচার উপায় কি?
ফিশিং থেকে বাঁচার জন্য অপরিচিত প্রেরকের কাছ থেকে আসা ইমেইল বা মেসেজের লিঙ্কে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকুন এবং আপনার ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়ার আগে ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।
পরিশেষে, মনে রাখবেন আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা আপনার হাতেই। একটু সচেতন হলেই আপনি আপনার অ্যাকাউন্টকে সুরক্ষিত রাখতে পারেন। তাই, আর দেরি না করে আজই এই সেটিংসগুলো পরিবর্তন করুন এবং নিরাপদে ফেসবুক ব্যবহার করুন।