ছবি: সংগৃহীত
অ্যামাজনের প্রস্তাব সম্পর্কে এখনো টিকটক বা বাইটডান্স কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। এমনকি অ্যামাজনও বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুসারে, আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অ্যামাজনের প্রস্তাবকে খুব বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন না।
টিকটকের মালিকানা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-চীন উত্তেজনার মধ্যে নতুন মোড় এসেছে, কারণ বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ও মার্কিন ই-কমার্স জায়ান্ট অ্যামাজন শেষ মুহূর্তে টিকটক কেনার প্রস্তাব দিয়েছে বলে নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এবং বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিককে উদ্দেশ্য করে লেখা একটি চিঠিতে অ্যামাজন তাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
অ্যামাজনের প্রস্তাব সম্পর্কে এখনো টিকটক বা বাইটডান্স কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। এমনকি অ্যামাজনও বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুসারে, আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অ্যামাজনের প্রস্তাবকে খুব বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন না।
এদিকে, এই খবর প্রকাশের পরপরই অ্যামাজনের শেয়ারমূল্যে ১.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে বিনিয়োগকারীরা বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। তবে প্রযুক্তি বাজারের বিশ্লেষকদের মতে, অ্যামাজনের জন্য টিকটক অধিগ্রহণ করা বেশ চ্যালেঞ্জিং হতে পারে, কারণ এটি মূলত একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম-ভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম, যেখানে অ্যামাজনের মূল দক্ষতা ই-কমার্স এবং ক্লাউড কম্পিউটিংয়ে সীমাবদ্ধ।
অন্যদিকে, টিকটকের বিক্রয় প্রক্রিয়া নিয়ে অন্যান্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানও আগ্রহ দেখিয়েছে, যার মধ্যে মাইক্রোসফট, ওরাকল এবং মেটার (সাবেক ফেসবুক) মতো কোম্পানিগুলোর নাম শোনা যাচ্ছে। তবে শেষ পর্যন্ত কোন প্রতিষ্ঠান টিকটকের মালিকানা পাবে, তা নির্ভর করবে রাজনৈতিক, আইনি ও ব্যবসায়িক আলোচনার ওপর।
টিকটকের ভবিষ্যৎ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের মূল কারণ হলো এর মালিকানা চীনা প্রতিষ্ঠান বাইটডান্সের হাতে থাকা। মার্কিন প্রশাসনের মতে, চীন সরকার এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের তথ্য সংগ্রহ করতে পারে এবং এর মাধ্যমে প্রভাব বিস্তারের একটি কৌশলগত হাতিয়ার হিসেবে কাজ করতে পারে। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস একটি আইন পাস করে, যেখানে জানুয়ারি ২০২৫ সালের মধ্যে বাইটডান্সকে টিকটকের মালিকানা ছেড়ে দিতে বলা হয়, নাহলে অ্যাপটি যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ হতে পারে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর টিকটকের বিক্রয়ের সময়সীমা আরও ৭৫ দিন বাড়ানোর একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। তবে এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি চীন-মার্কিন সম্পর্কের ভবিষ্যতের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, অ্যামাজনের মতো একটি প্রতিষ্ঠান টিকটক কেনার চেষ্টা করলে সেটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি ও বাণিজ্যনীতির ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। যদি অ্যামাজন টিকটক অধিগ্রহণে সফল হয়, তবে এটি শুধুমাত্র একটি বাণিজ্যিক লেনদেন হবে না; বরং এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর জন্য চীনের প্রযুক্তিগত আধিপত্যের বিরুদ্ধে একটি বড় ধরনের বিজয় হিসেবে দেখা হতে পারে।
কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, অ্যামাজনের মতো ই-কমার্সভিত্তিক একটি কোম্পানির জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পরিচালনা করা সহজ হবে না। ইতিপূর্বে ফেসবুক, গুগল এবং মাইক্রোসফটের মতো প্রতিষ্ঠানও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ক্ষেত্রে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। তদুপরি, যুক্তরাষ্ট্রের কিছু আইনপ্রণেতা ইতোমধ্যেই বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর একচেটিয়া বাজার দখলের অভিযোগ তুলে তাদের আরও নিয়ন্ত্রণে আনার দাবি জানিয়ে আসছেন। যদি অ্যামাজন টিকটক কিনে নেয়, তবে সেটি নতুন করে অ্যান্টিট্রাস্ট (একচেটিয়া ব্যবসার বিরুদ্ধে) তদন্তের মুখে পড়তে পারে।
অন্যদিকে, চীনও এই বিক্রয় প্রক্রিয়াকে সহজভাবে নেবে না। চীনের সরকার ইতোমধ্যেই স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, তারা টিকটকের মূল অ্যালগরিদমসহ পুরো কোম্পানির বিক্রয় অনুমোদন করবে না। যদি অ্যামাজন বা অন্য কোনো মার্কিন প্রতিষ্ঠান টিকটক কিনতে চায়, তাহলে সেটি রাজনৈতিক আলোচনার ভিত্তিতেই সম্ভব হবে।
এই পরিস্থিতিতে টিকটকের ভবিষ্যৎ এখনও অনিশ্চিত। মার্কিন প্রশাসনের কঠোর অবস্থান এবং চীনের প্রতিক্রিয়া নির্ধারণ করবে, শেষ পর্যন্ত কোন কোম্পানি টিকটকের মালিক হবে এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রে চলতে পারবে কি না। সূত্র: রয়টার্স
উজ্জ্বল এ গমেজ
অধ্যাপক ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ আল মামুন। গবেষক ও ডিজিটাল হেলথ সিস্টেমের একজন বিশেষজ্ঞ। উদ্ভাবন...