মঙ্গলবার

ঢাকা, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪

সর্বশেষ


বিশেষ প্রতিবেদন

প্রযুক্তি বিশ্বে অবস্থান শক্ত করতে নিজস্ব স্মার্টফোন চিপসেট তৈরি করছে শাওমি

প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০২৪, দুপুর ১১:৩৪

টেকওয়ার্ল্ড প্রতিবেদক

Card image

ছবি: সংগৃহীত

শাওমির  এই পদক্ষেপ প্রযুক্তি শিল্পে শাওমির দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনারই অংশ, যা প্রতিষ্ঠানটির প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে এবং তাদের ভবিষ্যৎ পণ্যের উন্নয়নে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

প্রযুক্তির জগতে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে শাওমি  এবার নিজস্ব স্মার্টফোন চিপসেট তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে। বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় এই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মূলত কোয়ালকম এবং মিডিয়াটেকের মতো বড় চিপ নির্মাতাদের উপর নির্ভরতা কমিয়ে নিজের স্বকীয়তা প্রতিষ্ঠা করতে চায় চীন প্রযুক্তি জায়ান্টটি।

শাওমির তথ্য মতে, নিজস্ব স্মার্টফোন চিপসেট উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানটিকে আরও উদ্ভাবনী সমাধান তৈরিতে সাহায্য করবে, পাশাপাশি তাদের পণ্যে উচ্চ কার্যক্ষমতা ও আরও উন্নত গ্রাহক অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে।

মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর)  প্রযুক্তি-বিষয়ক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম জিএসএম এরিনার এক প্রতিবেদনে এসব  তথ্য জানা গেছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শাওমির  এই পদক্ষেপ প্রযুক্তি শিল্পে শাওমির দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনারই অংশ, যা প্রতিষ্ঠানটির প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে এবং তাদের ভবিষ্যৎ পণ্যের উন্নয়নে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

জিএসএম এরিনার প্রতিবেদন বলছে, শাওমির এই স্মার্টফোন চিপসেটের উৎপাদন শুরু হতে পারে ২০২৫ সালে। এটি ব্যবহার করা প্রথম স্মার্টফোন একই বছরে বাজারে আসবে।

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, শাওমি এরই মধ্যে নিজস্ব চিপসেটের নকশা ও প্রাথমিক উন্নয়ন নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে। এটি সফলভাবে উৎপাদনে গেলে, ২০২৫ সালেই এই চিপসেট ব্যবহার করে প্রথম স্মার্টফোন বাজারে আনতে পারে শাওমি।

এটি শাওমির জন্য একটি বড় মাইলফলক হতে পারে, কারণ নিজস্ব চিপসেটের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি আরও স্বাধীন ও উদ্ভাবনী পণ্য তৈরি করার সুযোগ পাবে। একই সঙ্গে, এটি শাওমির স্মার্টফোনের কর্মক্ষমতা, ব্যাটারি সাশ্রয় এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) সমর্থনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি আনবে বলে আশা করা হচ্ছে। শাওমি এই উদ্যোগের মাধ্যমে বাজারে প্রতিযোগিতার নতুন মানদণ্ড স্থাপন করতে পারে, যা প্রযুক্তি খাতে তাদের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।

ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়,  চীনের সরকার দীর্ঘদিন ধরেই স্থানীয় প্রযুক্তি খাতকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে এবং এর অংশ হিসেবে দেশীয় কোম্পানিগুলোকে বিদেশি প্রযুক্তির উপর নির্ভরতা কমানোর আহ্বান জানিয়েছে। এই কৌশল বাস্তবায়নের মাধ্যমে চীন তার প্রযুক্তিগত স্বনির্ভরতা বাড়াতে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে শক্তিশালী অবস্থান নিশ্চিত করতে চায়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়,  শাওমি সরকারের এই আহ্বানকে গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেছে এবং নিজস্ব চিপসেট তৈরির পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এই উদ্যোগ শুধু শাওমির জন্য নয়, চীনের প্রযুক্তি খাতের জন্যও একটি বড় অগ্রগতি হতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত এই চিপসেট কোন সেগমেন্টে ব্যবহার করা হবে এবং এটি শাওমির প্রতিদ্বন্দ্বী কোয়ালকম ও মিডিয়াটেকের চিপসেটগুলোর তুলনায় কতটা প্রতিযোগিতামূলক হবে, তা নিয়ে পরিষ্কার কোনো ধারণা মেলেনি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, শাওমির এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে তা চীনের প্রযুক্তি খাতে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। একই সঙ্গে, এটি কোম্পানির ভবিষ্যৎ স্মার্টফোন ও অন্যান্য পণ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তবে প্রকল্পটির সফলতা অনেকাংশে নির্ভর করবে চিপসেটের দক্ষতা, কর্মক্ষমতা এবং বাজারের চাহিদা পূরণের ক্ষমতার উপর।

জানা গেছে, শাওমি তাদের গবেষণা এবং উন্নয়ন (আর অ্যান্ড ডি) কার্যক্রমকে আরও জোরদার করার লক্ষ্যে ২০২৫ সালে প্রায় ৩০ বিলিয়ন চীনা ইউয়ান (প্রায় ৪.১ বিলিয়ন ডলার) বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা করেছে। এটি ২০২৪ সালের জন্য নির্ধারিত ২৪ বিলিয়ন ইউয়ান (প্রায় ৩.৩ বিলিয়ন ডলার) বাজেট থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। প্রতিষ্ঠানটি উদ্ভাবনী প্রযুক্তি উন্নয়ন এবং নতুন পণ্যের গবেষণায় এই বাড়তি বাজেট বরাদ্দ করতে যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই বিপুল বাজেটের একটি বড় অংশ শাওমির নিজস্ব চিপসেট তৈরির প্রকল্পে ব্যয় হবে। নিজস্ব চিপসেট উন্নয়নের মাধ্যমে শাওমি ভবিষ্যতে তাদের পণ্যের কর্মক্ষমতা ও সাশ্রয়িতা বাড়ানোর পাশাপাশি বিদেশি চিপ নির্মাতাদের উপর নির্ভরতা কমাতে চায়। শাওমির এই পদক্ষেপ প্রতিষ্ঠানটির দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত পরিকল্পনারই অংশ, যা কেবল তাদের স্মার্টফোন বিভাগকেই নয়, বরং অন্যান্য প্রযুক্তি পণ্য যেমন ইন্টারনেট অফ থিংস (IoT) ডিভাইস, অটোমোবাইল প্রযুক্তি এবং অন্যান্য স্মার্ট ডিভাইসের উন্নয়নকেও ত্বরান্বিত করবে।

ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের তথ্য মতে, শাওমির এই উদ্যোগ তাদেরকে বৈশ্বিক প্রযুক্তি খাতে আরও প্রভাবশালী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করবে। তবে এই প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নের জন্য বড় ধরনের আর্থিক বিনিয়োগের পাশাপাশি দক্ষ গবেষণা ও উন্নয়ন দল এবং সঠিক কৌশলগত পরিকল্পনা অপরিহার্য। সূত্র: জিএসএম এরিনা ও ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল

সংবাদটি পঠিত হয়েছে: ৫০ বার

এ সম্পর্কিত আরও খবর