ছবি: সংগৃহীত
গবেষকেরা "গেট-অল-অ্যারাউন্ড ফিল্ড-এফেক্ট ট্রানজিস্টর" (GAAFET) তৈরি করেছেন, যেখানে সোর্সের চারপাশে গেট মোড়ানো থাকে, ফলে পারফরম্যান্স উন্নত হয়। বিসমাথ অক্সিসেলেনাইড উপাদানটি সিলিকনের তুলনায় নমনীয় ও দ্রুত বিদ্যুৎ পরিবাহিত করতে সক্ষম।
চীনের বিজ্ঞানীরা সিলিকনের পরিবর্তে বিসমাথ ব্যবহার করে নতুন ধরনের ট্রানজিস্টর তৈরি করেছেন। এটি প্রসেসরের গতি ৪০% বাড়াতে এবং ১০% কম শক্তি খরচ করতে সাহায্য করবে। এই প্রযুক্তি চীনের চিপ শিল্পকে আরও এগিয়ে নিতে পারে।
গবেষকেরা "গেট-অল-অ্যারাউন্ড ফিল্ড-এফেক্ট ট্রানজিস্টর" (GAAFET) তৈরি করেছেন, যেখানে সোর্সের চারপাশে গেট মোড়ানো থাকে, ফলে পারফরম্যান্স উন্নত হয়। বিসমাথ অক্সিসেলেনাইড উপাদানটি সিলিকনের তুলনায় নমনীয় ও দ্রুত বিদ্যুৎ পরিবাহিত করতে সক্ষম।
তবে, বিসমাথ ট্রানজিস্টর বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার উপযোগী করতে আরও গবেষণা দরকার। এটি তৈরিতে খরচ বেশি এবং বর্তমান সিলিকনভিত্তিক প্রযুক্তির সঙ্গে মানিয়ে নিতে সময় লাগবে। তবে বিজ্ঞানীরা এসব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন।
কীভাবে GAAFET কাজ করে?
প্রত্যেকটি ট্রানজিস্টরে সাধারণত তিনটি অংশ থাকে:
>> সোর্স: যেখানে ইলেকট্রন প্রবাহ শুরু হয়
>> ড্রেন: যেখানে ইলেকট্রন প্রবাহ শেষ হয়
>> গেট: যা ইলেকট্রনের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করেG
GAAFET-এর ক্ষেত্রে গেটটি সোর্সকে সম্পূর্ণভাবে চারদিক থেকে মোড়ানো থাকে, ফলে বিদ্যুৎ প্রবাহ আরও কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, যা পারফরম্যান্স বাড়ায় এবং শক্তি খরচ কমায়।
কেন বিসমাথ ব্যবহার করা হলো?
চীনের বিজ্ঞানীরা সিলিকনের পরিবর্তে বিসমাথ অক্সিসেলেনাইড নামক একটি বিশেষ পদার্থ ব্যবহার করেছেন।
বিসমাথ ট্রানজিস্টরের সুবিধা:
>> অতি-পাতলা এবং নমনীয়: এটি কাগজের মতো পাতলা, ফলে সহজেই ভাঁজযোগ্য ডিভাইসে ব্যবহার করা যাবে।
>> বিদ্যুৎ প্রবাহ দ্রুততর: এতে ইলেকট্রন কম বাধার সম্মুখীন হয়, ফলে ট্রানজিস্টরের গতি বাড়ে।
>> শক্তি সঞ্চয়ের ক্ষমতা বেশি: এতে ডাইইলেকট্রিক কনস্ট্যান্ট বেশি, যা কম শক্তি খরচে কার্যক্ষমতা বাড়ায়।
বর্তমান সিলিকন চিপের তুলনায়, বিসমাথ ট্রানজিস্টর কম বিদ্যুৎ অপচয় করে এবং কম তাপে কাজ করতে পারে।
বাণিজ্যিক উৎপাদনের চ্যালেঞ্জ
বিসমাথ ট্রানজিস্টরের প্রযুক্তি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় হলেও, এটিকে বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে:
>> উৎপাদন খরচ বেশি: বিসমাথ ট্রানজিস্টর তৈরি করতে উন্নত ন্যানোফ্যাব্রিকেশন প্রযুক্তি দরকার, যা ব্যয়বহুল।
>> বর্তমান প্রযুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য: অধিকাংশ ইলেকট্রনিক ডিভাইস সিলিকন-ভিত্তিক, ফলে বিসমাথ প্রযুক্তির সঙ্গে মানিয়ে নিতে সময় লাগবে।
>> মাস প্রোডাকশনের সমস্যা: সিলিকনের মতো বিসমাথের বড় পরিসরে উৎপাদন এখনো সহজ নয়।
তবে গবেষকেরা এর উৎপাদন প্রক্রিয়া উন্নত করার চেষ্টা করছেন এবং ভবিষ্যতে এটি আরও সহজলভ্য হতে পারে।
বিশ্ববাজারে চীনের কৌশলগত লাভ
যদি চীন বিসমাথ ট্রানজিস্টর প্রযুক্তিতে সফল হয়, তাহলে এটি যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা প্রযুক্তি কোম্পানির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। কারণ:
>> চীনের সেমিকন্ডাক্টর খাতে স্বনির্ভরতা বাড়বে
>> মার্কিন কোম্পানিগুলোর আধিপত্য দুর্বল হবে
>> নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে চীন বিশ্ববাজারে নেতৃত্ব দিতে পারবে।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো চীনের ওপর সেমিকন্ডাক্টর রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। কিন্তু যদি চীন নিজস্ব উন্নত চিপ তৈরি করতে পারে, তাহলে তারা এসব নিষেধাজ্ঞার প্রভাব এড়িয়ে যেতে পারবে।
বিসমাথ ট্রানজিস্টর প্রযুক্তি ভবিষ্যতে কম্পিউটিং ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিপ্লব আনতে পারে। যদিও এখনো কিছু চ্যালেঞ্জ আছে, তবে গবেষকেরা এগুলো সমাধানে কাজ করছেন।
যদি চীন এই প্রযুক্তিকে বাণিজ্যিকভাবে সফল করতে পারে, তবে তারা বিশ্ব সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে নেতৃত্ব দিতে পারবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে নিজস্ব প্রযুক্তি গড়ে তুলতে পারবে। এই উদ্ভাবন চীনকে প্রযুক্তি বিশ্বে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে। সূত্র: মিডিয়াম ও লাইভ সায়েন্স
উজ্জ্বল এ গমেজ
অধ্যাপক ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ আল মামুন। গবেষক ও ডিজিটাল হেলথ সিস্টেমের একজন বিশেষজ্ঞ। উদ্ভাবন...