শুক্রবার

ঢাকা, ৩ মে ২০২৪

সর্বশেষ


বিশেষ প্রতিবেদন

যে কারণে বেসিস নির্বাচনে বেশির ভাগই নতুন মুখ

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৪, দুপুর ১১:১০

টেকওয়ার্ল্ড প্রতিবেদক

Card image

ছবি: সংগৃহীত

এছাড়াও নির্বাচনের মৌসুম শুরুর আগে এজিএম-এ অডিট রিপোর্ট নিয়ে বেশি কিছু ঘটনার কারণে সদস্যদের কাছে নির্বাচনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং টপ অব টাউন হিসেবে সবার মুখে মুখে।  

সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে চলছে সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবাখাতের  শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) ২০২৪-২৬ মেয়াদের কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাচনী কার্যক্রম।

নির্বাচনে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক প্রার্থীর অংশগ্রহণ। অতীতের তুলনায় এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ৪১ জন প্রার্থী পরিচালক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এছাড়াও নির্বাচনের মৌসুম শুরুর আগে এজিএম-এ অডিট রিপোর্ট নিয়ে বেশি কিছু ঘটনার কারণে সদস্যদের কাছে নির্বাচনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং টপ অব টাউন হিসেবে সবার মুখে মুখে।  

আরেকটি বিশেষ দিক হলো এবারের নির্বাচনে ৪১জন প্রার্থীর মধ্যে অর্ধেকের বেশি একদম নতুন মুখ। এর আগে তারা বেসিসের কার্যনির্বাহী পরিষদের কোন পদে ছিলেন না। এমন প্রার্থীও আছেন যারা বেসিসের সদস্য হয়েছেন এখনও দুই বছরও হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব নতুনদের মধ্যে কয়েকজন আবার সফটওয়্যার সেবাখাতের ব্যবসাতেও নতুন। তবে আশার কথা হলো, তারা প্রথমবারের মতো নেতৃত্বে আসলেও বেশির ভাগ সদস্য সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবাখাতে দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করছেন। বিষয়টি নিয়ে সদস্যদের মধ্যে ইতিবাচক ও নেতিবাচক মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে।

এবারের নির্বাচনে ৪১ জন সদস্য অংশগ্রহণ করছেন। বিষয়টা আপনি কিভাবে দেখছেন? জানতে চাইলে ইউ ওয়াই সিস্টেমস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও বেসিসের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ফারহানা এ রহমান টেকওয়ার্ল্ড বাংলাদেশকে বলেন, বিষয়টা আমি ইতিবাচকভাবেই দেখছি। কেননা বিভিন্ন কারণে সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবাখাতের শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন বেসিসের কার্যনির্বাহী পরিষদে এসে সদস্যদের জন্য কাজ করাসহ সংগঠনকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিতে  নেতৃত্বে আসার প্রতি সদস্যদের আগ্রহ তৈরি হয়েছে। আমি মনে করি, এটা বেসিসের নেতৃত্বের জন্য আশার দিক।

অংশগ্রহণকারী সদস্যদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি নতুন মুখ। এ প্রসঙ্গে আপনার মতামত কেমন? জবাবে বেসিসের এই সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি বলেন, আমি মনে করি, নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে কার্যনির্বাহী পরিষদ গড়ে উঠলে সেটি আরও ভাল হবে।সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি ইন্ডাস্ট্রিতে দীর্ঘ দিন ধরে যারা কাজ করছেন, সদস্যদের সাথে কাজ করার আন্তরিক ইচ্ছা রয়েছে এমন প্রবীণদের সংগঠনের নেতৃত্বে আসা যেমন উচিত, অন্যদিকে তরুণদেরও নেতৃত্বে আসা জরুরি। কেননা, প্রবীণের ব্যবসা ও ইন্ডাস্ট্রি পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিন্তু একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর ইন্ডাস্ট্রির নেতৃত্ব তরুণদেরই নিতে হবে। তাই প্রবীণদের সাথে থেকে তরুণদেরও আগামীর জন্য নেতৃত্ব তৈরি করতে হবে। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক মেধাবী, প্রতিভাবান, যোগ্য, নেতৃত্বদানকারী দক্ষ তরুণ উদ্যোক্তা রয়েছেন, যাদের কোম্পানি ভাল করছে। ভাল একটা অবস্থান তৈরি করেছে। তাদের অর্জিত জ্ঞান, মেধা দিয়ে সংগঠনকে নতুন নেতৃত্ব দিতে সক্ষম। নবীন-প্রবীণ মিলে কার্যনির্বাহী পরিষদ হলে নেতৃত্বও হবে গতিশীল।

নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী নারী প্রার্থীদের সাধুবাদ জানিয়ে ইউ ওয়াই সিস্টেমস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, বেসিসের নির্বাচনের ইতিহাসে এবারই প্রথম সবচেয়ে বেশি নারী প্রার্থী অংশগ্রহণ করছেন। এটা বেসিসের নেতৃত্বের জন্য খুবই ইতিবাচক দিক। কেননা, তথ্যপ্রযুক্তিখাতে নারীদের অংশগ্রহণ তুলনামূলকভাবে কম। এই কম সংখ্যক নারীদের মধ্যেই যেসব নারী প্রার্থী এবার সাহসিকতার সাথে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাদেরকে আমি স্বাগত জানাই।

এ প্রসঙ্গে সাবেক বেসিস সভাপতি একেএম ফাহিম মাশরুর বলেন, বেসিসের এবারের নির্বাচনে ৪১ জন প্রার্থী বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তালিকায় বড় অংশজুড়ে রয়েছেন  তরুণ প্রার্থী, যাদের বয়স ৪০ বছরের কম। আমি মনে করি, আমাদের ইন্ডাস্ট্রির নেতৃত্ব এই তরুণদেরই নেওয়া উচিত। ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টম্যানের মতো তরুণরা বর্তমানে প্রযুক্তি বিশ্বে  নেতৃত্ব দিচ্ছে। তারা যদি সারা বিশ্বের এত বড় বড় কোম্পানিকে নেতৃত্ব দিতে পারেন, তাহলে আমাদের তরুণরা কেনো বেসিসের মতো সংগঠনকে নেতৃত্ব দিতে পারবে না। সংগঠনকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য অবশ্যই অভিজ্ঞতার দরকার আছে, কিন্তু এখন মনে হয় সময়ের দাবি নতুন নেতৃত্ব। কেননা, প্রযুক্তি সব কিছু পাল্টে দিচ্ছে খুবই দ্রুত।

প্রার্থীদের প্রযুক্তিতে দক্ষতা প্রসঙ্গে বিডিজবস ও আজকেরডিলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, এবারের প্রার্থীদের মধ্যে বেশ কয়েকজর প্রার্থী আছেন যারা প্রযুক্তিগত জ্ঞানসম্পন্ন নন। অভিজ্ঞতায় দেখেছি, গত বেশ কিছু কার্যনির্বাহী পরিষদে যারা এসেছেন তাদের মধ্যে প্রযুক্তিগত শিক্ষার জ্ঞান কম ছিল। বেশির ভাগ সদস্য ছিলেন প্রযুক্তিগত জ্ঞান ছাড়া। সময়ের সাথে সাথে যেহেতু প্রতিদিনই প্রযুক্তি পরিবর্তন হচ্ছে তাই, কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্যদের মধ্যে প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও প্রযুক্তিগত জ্ঞান ছাড়া সদস্যদের একটা ভারসাম্য থাকা জরুরি। কার্যনির্বাহী পরিষদে ব্যবসা, ব্যবস্থাপনা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে কাজ করা দক্ষতাসম্পন্ন সদস্য যেমন থাকা উচিত, তেমনি কোডিংয়ে দক্ষ, প্রযুক্তি নিয়ে পড়াশোনা করা তরুণদেরও আসা প্রয়োজন রয়েছে। আশা করছি, এবারের নির্বাচনে তরুণ ও প্রযুক্তিগত জ্ঞানসম্পন্ন প্রার্থীরা ভাল করবেন, সে যেই প্যানেলেরই হোক না কেন।

বেসিসের সাবেক এই সভাপতি বলেন, কয়েকজন প্রার্থী আছেন যারা নিজেরা উদ্যোক্তা নন। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, (অনেকে দ্বিমত প্রকাশ করতে পারেন) বেসিসের নেতৃত্বে আসা উচিত শুধু তাদেরই, যারা নিজেদের ব্যবসা নিজেরা প্রতিষ্ঠা করেছেন। উদ্যোক্তাদের সমস্যা উদ্যোক্তারাই ভাল বুঝেন। আরও একটি বিষয়, একজন প্রার্থী দেখেছি যার বেসিসে সদস্যের বয়স এখনও দুই বছর হয়নি। বেসিসের কোনো প্রোগ্রামে তাকে দেখা যায়নি (বেসিসের অফিসেও কখনও আসে নাই)। এমন সদস্যকে প্রার্থী  হিসাবে দাঁড় করে দেওয়া হয়েছে। আমি মনে করি, প্যানেল লিডারদের এই ব্যাপারে আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল।

বেসিস সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে,  আগামী ৮ মে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত রাজধানীর রাওয়া কনভেনশন সেন্টারে বেসিস নির্বাচনের ভোট গ্রহণ চলবে। সেদিনই নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হবে।

বেসিসের এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ১ হাজার ৪৬৪ জন। তাদের মধ্যে সাধারণ ৯৩২, সহযোগী ৩৮৯, অ্যাফিলিয়েট ১৩৪ ও আন্তর্জাতিক সদস্য ভোটার ৯ জন। বেসিসের মোট সদস্য সংখ্যা দুই হাজার ৪০১ জন।

বেসিসের নির্বাচন পরিচালনার জন্য টি আই এম নুরুল কবীরকে চেয়ারম্যান ও সৈয়দ মামনুন কাদের ও নাজিম ফারহান চৌধুরী সদস্য করে ৩ সদস্যের নির্বাচন বোর্ড গঠন করা হয়েছে। নির্বাচনে তিন সদস্যের আপিল বোর্ডও গঠন করা হয়েছে। আপিল বোর্ডে চেয়ারম্যান এ তৌহিদ এবং সদস্য আবদুল্লাহ এইচ কাফি ও নাজনীন কামাল।

সংবাদটি পঠিত হয়েছে: ১৫৮ বার

এ সম্পর্কিত আরও খবর


Card image

বেসিস নির্বাচনে তাঁরা তিন

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৪