১২ ঘন্টা আগে
১৩ ঘন্টা আগে
১৪ ঘন্টা আগে
১৫ ঘন্টা আগে
ছবি: টেকওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ
কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া সহিংসতা ও নাশকতার অংশ হিসেবে দুর্বৃত্তরা ব্রডব্যান্ডের ডাটা সেন্টারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও ইন্টারনেট সংযোগ স্থানে অগ্নি সংযোগ করে। সেসাথে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তার কেটে ইন্টারনেটের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এর ফলে সারা দেশের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে যায়।
আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে এখন স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। স্মার্ট বাংলাদেশের রূপকল্প বাস্তবায়নে ইন্টারনেট হলো মেরুদন্ড। এ যাত্রায় ইন্টারনেটের কোনো বিকল্প নাই। তাই, স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে ইন্টারনেট হলো মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের মতো বলে মত দিয়েছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
সম্প্রতি দেশের চলমান পরিস্থিতির জন্য ব্রডব্যান্ড ও মোবাইল ইন্টারনেট ডাটা গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) রাত থেকে বন্ধ রয়েছে। এতে করে সব ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার বন্ধ হয়ে গেছে। ইন্টারনেট না থাকার কারণে অ্যাপে ও অনলাইনে যেকোনো লেনদেন করা যাচ্ছে না। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছে সারা দেশের সাধারণ জনগনণ।
কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া সহিংসতা ও নাশকতার অংশ হিসেবে দুর্বৃত্তরা ব্রডব্যান্ডের ডাটা সেন্টারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও ইন্টারনেট সংযোগ স্থানে অগ্নি সংযোগ করে। সেসাথে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তার কেটে ইন্টারনেটের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এর ফলে সারা দেশের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে যায়।
মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘আইসিটি রফতানি পরিস্থিতি’ নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)-এর সভাপতি রাসেল টি আহমেদ বলেন, শতভাগ ইন্টারনেট ও রফতানিমুখী খাত হিসেবে গত কয়েক দিনে সফটওয়্যার, আইটি/আইটিইএস সেবাসহ বেসিস সদস্যদের রফতানি খাতের মোট ক্ষতি হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা।
বেসিস সভাপতি বলেন, ইন্টারনেট হলো আমাদের আইটি ব্যবসার লাইফ লাইন, যা এক মুহূর্ত বন্ধ থাকা মানেই আমাদের ব্যবসার জন্য বড় ক্ষতির।
নাশকতাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, যারা আমাদের ইন্টারনেটের অবকাঠামো এবং সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ রাষ্ট্রীয় মূল্যবান সম্পদ নষ্ট করেছে, সেসব নাশকতাকারীদের ধরে সবাইকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
গ্রাহকদের অধিকার নিয়ে কথা বলা সংগঠন বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ টেকওয়ার্ল্ড বাংলাদেশকে বলেন, ইন্টারনেট হলো আন্তর্জাতিক স্বীকৃত মানুষের মৌলিক মানবাধিকার। ইন্টারনেট বন্ধ করা মানে মানুষের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করা। সুতরাং, যাদের কারণে এই ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়েছে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
সংগঠনটির সভাপতি বলেন, ইন্টারনেট বন্ধের কারণে মোবাইল ব্যাংকিং, অনলাইন বিজনেস, রফতানি শিল্প, ই-কমার্স, এফ-কমার্স, ফটওয়্যার বিজনেস, ফ্রিল্যান্সিং, আউটসোর্সিং, যোগাযোগসহ সব ধরনের ইন্টারনেটনির্ভর ব্যবসাতে কম-বেশি ক্ষতি হয়েছে। সব খাত মিলে যদি হিসেব করা হয়, তাহলে প্রতিদিন ৮ থেকে ৯ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। সে হিসেবে গত ৫ দিনে ৪০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। সাধারণ মানুষ যারা ইন্টারনেটের মাধ্যমে ইউটিলিটির বিল দিয়ে আসছিলেন, এখন ইন্টারনেট না থাকায় তারা পানি, গ্যাস, বিদ্যুত ব্যবহার করতে পারছেন না। এর জন্য চরম ভোগান্তিতে নগরবাসী। সুতরাং, ইন্টারনেটের উপর আমাদের নির্ভিরতা যে কতটুকু সেটা বোঝা যায়।
মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ইন্টারনেট যেহেতু আমাদের মৌলিক অধিকার, তাই, ইন্টারনেট সুরক্ষায় সরকারের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এই সুরক্ষার দায় সবার।
গত এক সপ্তাহে দেশের চলমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে স্মার্ট বাংলাদেশের রূপকল্প বাস্তবায়নে ইন্টারনেটের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন? জানতে চাইলে দেশের ইন্টারনেট সংযোগদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি ইমদাদুল হক টেকওয়ার্ল্ড বাংলাদেশকে বলেন, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট হলো স্মার্ট বাংলাদেশের মেরুদন্ড। এই সেবার উপরে নির্ভর করে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন।সুতরাং, এই সেবার ব্যাঘাত যেনো না ঘটে সেদিকে সব সময় সতর্ক থাকতে হবে। ভবিষ্যতে আমাদের এ ধরনের পরিস্থিতি যাতে না হয় এটা প্রত্যাশা করি।
নাশকতাকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যারা এ ধরনের নাশকতা করেছেন তাদেরকে বলতে চাই যে, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে অনেক কিছুই হতে পারে। কিন্তু সেটার প্রভাব যেনো কোনোভাবে রাষ্ট্রের অবকাঠামোতে এসে না পড়ে। কেননা, রাষ্ট্রের অবকাঠামো হলো আমাদের জাতীয় সম্পদ। এসব জাতীয় সম্পদের ক্ষতি করা মানে আমাদের নিজেদেরই ক্ষতি করার শামিল। আগামী দিনে এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে সে দিকে আমাদের সবার সচেতন থাকতে হবে।
ইমদাদুল হক বলেন, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট যেহেতু স্মার্ট বাংলাদেশের মেরুদন্ড। তাই, এটাকে সুরক্ষিত এবং প্রযুক্তিগতভাবে আরও শক্তিশালী করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া এখন সময়ের দাবি। সেসাথে এটির সুরক্ষায় আমাদের সচেতন হতে হবে। এবং এটা যাতে সব সময় চলামান থাকে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
এ প্রসঙ্গে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান আম্বার আইটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও আইএসপিএবির সাবেক সভাপতি আমিনুল হাকিম টেকওয়ার্ল্ড বাংলাদেশকে বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের রূপকল্প বাস্তবায়নে ইন্টারনেটের ভূমিকা যে কত গুরুত্বপূর্ণ সেটি গত এক সপ্তাহে সারা দেশের মানুষ নিভীরভাবে উপলব্ধি করেছেন। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে এখন স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে যাত্রা শুরু করেছি। বর্তমানে আমাদের এমন কোনো সেক্টর নেই, যেটি ইন্টারনেট ছাড়া চলে। ই-কমার্স, এফ-কমার্স, ব্যাংকিং সেক্টর, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস, বিকাশ, নগদে টাকা লেনদেন, ট্রাভেল অ্যাজেন্সি, বিমান, বাস, রেলের টিকিটিং সিস্টেম, সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি, গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি, ওয়াশা, বিদ্যুত, গ্যাসের প্রিপেইড মিটার সার্ভিস, মোট কথা আধুনিক যুগে স্মার্ট জীবনযাপনের সব ক্ষেত্রেই সব সেবায় ইন্টারনেট ব্যবহার হয়ে থাকে। মোট কথা, স্মার্ট যুগে ইন্টারনেট সেবা ছাড়া আমাদের জীবন অচল।
আইএসপিএবির সাবেক এই সভাপতি বলেন, বর্তমানে স্মার্ট যুগে নাগরিক জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো ইন্টারনেট সেবা। এটা আমাদের মেরুদন্ড। গত কয়েক দিন ইন্টারনেট বন্ধের কারণে আমাদের দেশে অনেক ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু সেসাথে আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে যে, দেশের যেসব অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে, ইন্টারনেট চালু থাকলে দেশে হয়তো এর চেয়েও আরও বেশি ক্ষতি হতে পারতো। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের কাছে দেশের স্বার্থটাই বড়। আমাদের ক্ষতিগুলো এ কারণেই মেনে নিচ্ছি যে, এখানে আমাদের দেশের বড় স্বার্থ জড়িত আছে। সেজন্য আমাদের ধৈর্য ধরে বুঝতে হবে যে, দেশের যা ধ্বংস করা হয়েছে, সেগুলো করা হয়েছে কোনো একটা উদ্দেশে। এ জন্য আমরা সাধারণ জনগণকে ইন্টানেট সেবা দিতে পারিনি। তবে, ভবিষ্যতে আমরা এ জায়গায় আরও সচেতন হবো।
তিনি বলেন, সারা দেশের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদানে যে অবকাঠামোগুলো আমাদের জাতীয় সম্পদ, এগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
যেখানে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশের রূপকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি, সেখানে সপ্তাহব্যাপী এভাবে সব ধরনের ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকাটা দেশের সাধারণ মানুষের জীবনে কেমন প্রভাব পড়ছে? জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার টেকওয়ার্ল্ড বাংলাদেশকে বলেন, আমার কাছে ইন্টারনেট হলো এখন নিত্যদিনের অনুষঙ্গ। এটি যেনো শ্বাস-প্রশ্বাসের মতো। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য যেমন শ্বাস-প্রশ্বাস জরুরি, তেমনি আধুনিক জীবনযাত্রার সাথে ইন্টারনেটের সম্পর্কটাও ওই পর্যায়ের। এটি ছাড়া আমরা একটি দিনও কল্পনা করতে পারি না। আর ইন্টারনেটের উপরেই নির্ভরশীল আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ ও বিনোদনসহ সব কিছু। যখন একটা দেশের ক্রান্তিলগ্নে ইন্টারনেটের অপপ্রয়োগ করে, দেশের ক্ষতি করে, তখন সরকারকে আরও সচেতন হওয়া উচিত। দুর্বৃত্তদের আক্রমণে দেশের অবকাঠামোতে যে ক্ষতি হয়েছে, সে জায়গা থেকে ইন্টারনেটকে সচল রাখা একটা জটিল পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে। ওই জটিলতা যেনো দ্রুত সমাধান করা হয় সরকারের কাছে আমার এটিই চাওয়া।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, যেহেতু এটির উপর আমাদের অনেক কিছুই নির্ভর করে, তাই এটির সুরক্ষায় আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি, যারা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে এসব বিষয়ে অপ্রচার করেছেন এবং এটির নেতিবাচক ব্যবহার করেছেন, তাদের জন্য আমরা সবাই এখন ভুক্তভোগী। এখন আমাদের ইন্টারনেটের ইতিবাচক ব্যবহারের প্রতিও মনোযোগী হতে হবে। কেননা, আমরা যদি ইন্টারনেটের ইতিবাচক ব্যবহার না করি, তাহলে তো আবারও এমন অবস্থা হবেই। তাই এই নেতিবাচক প্রভাব যখন রাষ্ট্রের উপর আসবে, তখন রাষ্ট্রকে অবশ্যই সুরক্ষায় মনোযোগী হতে হবে।
তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যারা এভাবে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদানের অবকাঠামোগুলোর মতো আমাদের জাতীয় সম্পদ ধ্বংস করার কাজে লিপ্ত, তারা যাতে আর এ ধরনের কাজ করার সুযোগ না পায়, সেজন্য সরকারের সাথে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
উজ্জ্বল এ গমেজ
অধ্যাপক ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ আল মামুন। গবেষক ও ডিজিটাল হেলথ সিস্টেমের একজন বিশেষজ্ঞ। উদ্ভাবন...