মঙ্গলবার

ঢাকা, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সর্বশেষ


বিশেষ প্রতিবেদন

ডিজিটাল কমার্সে প্রতিদিন প্রায় ১০০ কোটি টাকা ক্ষতি

প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২৪, দুপুর ৩:৩০

টেকওয়ার্ল্ড প্রতিবেদক

Card image

ছবি: সংগৃহীত

ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু হওয়ার ফলে অফিস-আদালত, মোবাইল ব্যাংকিং, আইটি কোম্পানি, ফ্রিল্যান্সারদের কার্যক্রম পরিচালনায় সুবিধা হয়েছে। ই-কমার্সের যে বড় অংশের ক্রেতারা দারাজ, ফুডপান্ডা, চালডালের মতো ই-কমার্স প্লাটফর্মে অর্ডার করবে, তারা ফেসবুকের মাধ্যমে বেশি অর্ডার করে থাকেন। এখন ফেসবুক বন্ধ হওয়ার কারণে সেটুকুও করতে পারছেন না তারা।  

সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে দেশে বেড়েই চলেছে ই-কমার্স ও এফ-কমার্স উদ্যোক্তা। সেসাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে ডিজিটাল কমার্সের বিভিন্ন কার্যক্রম। কিন্তু সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ ও সহিংসতার জেরে ১৭ জুলাই রাত থেকে মোবাইল ইন্টারনেট এবং ১৮ জুলাই রাত ৯টার দিকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন ই-কমার্স ও ফেসবুকভিত্তিক (এফ-কমার্স) উদ্যোক্তারা। ২৩ জুলাই রাতে দেশে সীমিত পরিসরে ব্রডব্যান্ড সেবা এবং রবিবার বেলা তিনটা থেকে মুঠোফোনে ফোর-জি ইন্টারনেট চালু হলেও দেশে বন্ধ রয়েছে ফেসবুকের ব্যবহার। অনলাইনভিত্তিক ই-কমার্স ও এফ-কমার্স খাতের ব্যবসার প্রচারণা ফেসবুকনির্ভর হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ডিজিটাল কমার্স ইন্ডাস্ট্রির কয়েক লাখ উদ্যোক্তা।

এ প্রসঙ্গে দারাজ বাংলাদেশের চিফ অপারেটিং অফিসার খন্দকার তাসফিন আলম টেকওয়ার্ল্ড বাংলাদেশকে বলেন, আমাদের দেশের ইন্টারনেট পেনিট্রেশনের খুব অল্প সংখ্যক মানুষ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত থাকেন। কিন্তু  বড় একটা অংশ যুক্ত থাকে মোবাইল ইন্টারনেটের মাধ্যমে। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু হওয়ার ফলে অফিস-আদালত, মোবাইল ব্যাংকিং, আইটি কোম্পানি, ফ্রিল্যান্সারদের কার্যক্রম পরিচালনায় সুবিধা হয়েছে। ই-কমার্সের যে বড় অংশের ক্রেতারা দারাজ, ফুডপান্ডা, চালডালের মতো ই-কমার্স প্লাটফর্মে অর্ডার করবে, তারা ফেসবুকের মাধ্যমে বেশি অর্ডার করে থাকেন। এখন ফেসবুক বন্ধ হওয়ার কারণে সেটুকুও করতে পারছেন না তারা।  

খন্দকার তাসফিন আলম বলেন, আমাদের ৮৫ শতাংশই সেলারই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। ফেসবুকের উদ্যোক্তারা কোনো না কোনো সময় দারাজে ছিলো। তারা আবার অ্যাক্টিভ হচ্ছে। ফেসবুক সেলারদের জন্য বিশেষ সুযোগ তৈরি করছি। অ্যাপেই আমাদের বেশি বেচা-কেনা হয়। তবে সেলার-ডেলিভারি ইকোসিস্টেমের জন্য গতিশীল মোবাইল ইন্টারনেট দরকার। তাছাড়া কারফিউ এর কারণে আমরা ঢাকার বাইরে খুব একটা ব্যবসা পরিচালনা করতে পারছি না। তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অর্ডারও স্বাভাবিক হবে। এখন স্ট্রাগল করছি। স্লো ইন্টারনেটের কারণে অর্ডার পেলেও প্রসেস করতে পারছি না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-ক্যাব জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি সাহাব উদ্দিন শিপন টেকওয়ার্ল্ড বাংলাদেশকে বলেন, দেশে ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির জড়িয়ে আছেন ই-কমার্স, এফকর্মাস, মার্কেটপ্লেস, ওয়েবসাইট, ডেলিভারি, কুরিয়ার, লজিস্টিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন খাতের উদ্যোক্তারা। এই খাতে ফেসবুকসহ ৫ লাখের মতো ই-কমার্স উদ্যোক্তা রয়েছেন। এদের মধ্যে ৯০ শতাংশই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। তারা ফেসবুকের মাধ্যমেই ব্যবসার কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন। ইন্টারনেট সংযোগ পেলেও ফেসবুক ছাড়া ব্যবসার কার্যক্রম পরিচালনা করা তাদের জন্য কঠিন হয়ে উঠছে। তবে আশার কথা হলো, তারা ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়ায় অন্তত সোশ্যাল মিডিয়ায় চালানো বিজ্ঞাপনগুলো বন্ধ করতে পেরেছে। এতে তাদের কিছুটা হলেও ক্ষতি কমেছে।

তিনি বলেন, মোবাইল ইন্টারনেট ও ফেসবুক না খোলায় ই-কমার্স উদ্যোক্তারা অর্ডার পাচ্ছে না। মূলত, ৮৫ শতাংশের মতো অর্ডার আসে এই মাধ্যম দুটিতেই। ইতোমধ্যে ইন্টারনেট বন্ধ ও দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে এই খাতের উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির ক্ষতির সম্পর্কে ই-ক্যাবের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি  বলেন, ইন্টারনেট বন্ধ থাকার সময়ে প্রতিদিনের ৮ লক্ষ অর্ডার ডেলিভারির পুরোটাই বন্ধ ছিল। যার পরিমাণ প্রায় দৈনিক ১০০ কোটি টাকার মতো। বর্তমানে সীমিত ইন্টারনেট চলাকালীন সাধারণ লেনদেনের মাত্র ৫% এর চেয়ে কিছু বেশি হচ্ছে বলে মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য পাওয়া গেছে। এই খাতে ৫ লক্ষ উদ্যোক্তা এবং আরও ১৫ লক্ষ কর্মী, সরবরাহকারী ও সেবাদাতা জড়িত রয়েছে। স্বাধীন কর্মীসহ এই সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। সকলে এই সময়ে সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। এই খাতে গত ১০ দিনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১৪০০ কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে বড়ো একটা অংশ রয়েছে এফ কমার্স উদ্যোক্তাদের, তাছাড়া মার্কেটপ্লেস, অনলাইন শপ, ফুড ডেলিভারি রয়েছে। ই-কমার্সভিত্তিক লজিস্টিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোও ক্ষতির মধ্যে পড়েছে। অভৌত পণ্য সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান তথা ই-ট্যুরিজম, ই-টিকেট, ই-লার্নিং, ই-হেলথ ও কনটেন্ট সেবা রয়েছে।

দ্রুত ফেসবুক চালুর আহ্বান জানিয়ে সাহাব উদ্দিন শিপন বলেন, বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহার করা গেলেও ফেসবুক বন্ধ রয়েছে। এ খাতে ফেসবুকই একমাত্র মাধ্যম, যেখান থেকে ক্রেতা বেশি আসেন। আর তাই যত দ্রুত সম্ভব ফেসবুক চালু অনুরোধ করছি।

এ প্রসঙ্গে ওমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই)-এর প্রেসিডেন্ট নাসিমা আক্তার নিশা টেকওয়ার্ল্ড বাংলাদেশকে বলেন, অনলাইন, ফেসবুক বা এ ধরনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্লাটফর্মে যারা ব্যবসা করেন, তারা খুবই ছোট উদ্যোক্তা। তাদের ব্যবসার পুঁজি ও মূলধন অল্প পরিমাণের। এখান থেকে যে আয় হয়, সেটি দিয়ে তারা তাদের সংসার চালায়। আর আমাদের এই উদ্যোক্তাদের ব্যবসাটা শুধুই ফেসবুককেন্দ্রিক। সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ ও সহিংসতা হয়। এর ফলে ১৭ জুলাই মধ্যরাত থেকে ফোর-জি নেটওয়ার্ক সেবা বন্ধ করায় দেশের মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে যায়। এর সাথে সাথে আমাদের এফ কমার্স উদ্যোক্তাদের ব্যবসাও বন্ধ হয়ে যায়।

এফ কমার্স উদ্যোক্তাদের গত ৮ দিনের ক্ষতির সম্পর্কে উই-এর প্রেসিডেন্ট বলেন, আমাদের প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষর মতো এফ কমার্স উদ্যোক্তা আছেন। প্রতিদিন একজন উদ্যোক্তা কম করে ১ হাজার ৫০০ টাকার জিনিস বিক্রি করেন। তাহলে সে হিসেবে প্রতিদিন আমাদের ক্ষতি হয়েছে ৬৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। তাহলে গত ৮ দিনে আমাদের কি পরিমাণে ক্ষতি হয়েছে সেটা বুঝতেই পারেন।
 

সংবাদটি পঠিত হয়েছে: ১৬৯ বার

এ সম্পর্কিত আরও খবর