মঙ্গলবার

ঢাকা, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সর্বশেষ


বিশেষ প্রতিবেদন

দেশের তথ্যপ্রযুক্তিখাতের ব্যবসা উন্নয়নে ঋণ প্রাপ্তি সহজীকরণে কাজ করতে চান এলিট

প্রকাশ: ৫ মে ২০২৪, সকাল ৯:২৭

টেকওয়ার্ল্ড প্রতিবেদক

Card image

ছবি: সংগৃহীত

ব্যবসায়ী পরিবারে আমার জন্ম। ছোটবেলা হতেই ব্যবসায়িক প্রতিবন্ধকতা সংশ্লিষ্ট শব্দগুলোর সাথে আমি পরিচিত। সেসাথে ছাত্রজীবন থেকেই সমাজের বিভিন্ন অসংগতি এবং অন্যায়ের প্রতি আমি সোচ্চার ছিলাম। সেকারণে  আস্তে আস্তে জড়িত হই জুনিয়র চেম্বার বাংলাদেশসহ নানা সংগঠনে। নেতৃত্বেও ছিলাম বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংগঠনে।

দেশের অন্যতম আলোচিত তরুণ উদ্যোক্তা নিয়াজ মোর্শেদ এলিট। ব্যক্তিগতভাবে অনুষ্ঠিত স্টার্টআপ কোম্পানি গড়েছেন। বেশ কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল বা জেসিআই বাংলাদেশের একাধিকবারের সভাপতি। তবে তিনি বেশি মনোযোগী তথ্যপ্রযুক্তিখাতে। দেশের সবচেয়ে দ্রুতগতির স্টার্টআপ কম্পানি নগদ-এর নির্বাহী পরিচালক নিয়াজ মোর্শেদ এলিট।

নগদকে দশ হাজার কোটি টাকার প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে ভূমিকা রেখেছেন তিনি। তথ্যপ্রযুক্তিখাতের একজন উদ্যোক্তা হিসেবে এবার বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়ার অ্যান্ড ইনফর্মেশন সার্ভিসের (বেসিস ) নির্বাচনে তিনি ‘টিম স্মার্ট’ প্যানেল থেকে সাধারণ ক্যাটাগরিতে পরিচালক পদে তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন।

তথ্যপ্রযুক্তিখাত, সফটওয়্যার শিল্প ও বেসিস নির্বাচনে বিষয়ে টেকওয়ার্ল্ডের সাথে সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন তিনি।

নিজের সম্পর্ক কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ব্যবসায়ী পরিবারে আমার জন্ম। ছোটবেলা হতেই ব্যবসায়িক প্রতিবন্ধকতা সংশ্লিষ্ট শব্দগুলোর সাথে আমি পরিচিত। সেসাথে ছাত্রজীবন থেকেই সমাজের বিভিন্ন অসংগতি এবং অন্যায়ের প্রতি আমি সোচ্চার ছিলাম। সেকারণে  আস্তে আস্তে জড়িত হই জুনিয়র চেম্বার বাংলাদেশসহ নানা সংগঠনে। নেতৃত্বেও ছিলাম বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংগঠনে।

>>আরও পড়ুন: স্মার্ট ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে বেসিসকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই: রফিক উল্লাহ

এ পর্যন্ত বেশ কিছু উদ্যোগের সঙ্গে আমি নানাভাবে যুক্ত থেকেছি। এর মধ্যে অনেকগুলোতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছি। আমার প্রতিষ্ঠিত বড়তাকিয়া গ্রুপে দুইশতাধিক কর্মী কাজ করেন। নগদ প্রতিষ্ঠার পর এটিকে এগিয়ে নিতে ভূমিকা রেখেছি। এর বাইরে জুনিয়র চেম্বারের বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে আমি অনেক কিছু শিখেছি। তবে সবগুলোর মধ্যে অবশ্যই নগদকে আমি এগিয়ে রাখব। মূলত, বাজার প্রতিযোগিতায় গত পাঁচ বছরে নগদ যে ভূমিকা রেখেছে সেটাই আমাকে সবচেয়ে বেশি টানে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি ফিনটেক খাতে নগদের যে অর্জন সেটি আগের আরও বহু বছরের পুরনো কোম্পানিকে এককথায় পেছনে ফেলে দিয়েছে।

>>আরও পড়ুন: ইন্ডাস্ট্রির জন্য গুণগতমানসম্পন্ন আইটি প্রফেশনাল তৈরি করতে চান মঞ্জুরুল আলম মামুন

তবে নিজের উদ্যোগ নিয়ে যখন কাজ শুরু করি তখন বাস্তবিক অর্থে দেখেছি আমাদের ব্যবসায়িক প্রতিবন্ধকতাগুলো। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি মানে উদ্যোক্তাদের মূলধন যোগান বা ঋণ প্রাপ্তির  ক্ষেত্রে। আমি ফিনটেক ব্যবসার সাথে যুক্ত আছি। এই স্বল্প সময়ে এই ইন্ডাস্ট্রির সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত তথ্যপ্রযুক্তি সেবা খাতের সাথে কাজ করার সুযোগ হয়েছে আমার। আমাদের সেবা সরবরাহে আমরা সফটওয়্যারসহ বিভিন্ন ধরনের পরিষেবার উপর নির্ভরশীল। এবং আমাদের মত প্রতিষ্ঠানকে ক্রেতা সেবা নিশ্চিত করতে নির্ভরশীল হতে হয় বিদেশী সফটৗয়্যারের উপর। যার ফলে আমাদের সেবা সরবরাহ ব্যয় অনেক বেশি।

>>আরও পড়ুন: অ্যাফিলিয়েট সদস্যদের জন্য কাজ করতে চাই তাদের একজন হয়ে-লুৎফি হায়দার চৌধুরী

আমাদের সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি হতে কেন সেই একই মানের সেবা আমরা পাচ্ছি না। এই ভাবনা হতেই সফটওয়্যার এবং তথ্যপ্রযুাক্তি পরিষেবা ইন্ডাস্ট্রির প্রতি আমার আগ্রহের জন্ম। আর ক্রেতা হিসাবে আমিতো জানতামই ক্রেতারা কি চায়।  এই ইন্ডাস্ট্রিকে বুঝতে গিয়ে আমি দেখেছি স্থানীয় বাজারে  ভালো মানের সফটওয়্যার বানানোর সক্ষমতা আছে,  দক্ষ জনশক্তি কম-বেশি আছে। আছেন নতুন উদ্যোক্তাদের মেন্টরিং করার মতো গুরু জনেরা। আছে সরকারের আগ্রহ। আছে তরুণদের উৎসাহ। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো সফটওয়্যার এবং তথ্যপ্রযুাক্তি পরিষেবা পণ্যের ক্রমবর্ধমান বাজার চাহিদা। সেই সাথে আছে তরুণ মেধা। কিন্তু এই মেধাবী তরুণদের টেকপ্রফেশনাল বানাবার যথাযথ সিস্টেম বা  ইন্ডাস্ট্রি চাহিদার সাথে সমন্বয়ে রেখে একাডেমিক পাঠ্যক্রমের সমন্বয়হীনতা।

আর এর মাঝেও নিজ উদ্যোগে যদি কেউ পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে নিজে কোন উদ্যোগ নিয়ে কাজ করতে চায়, তার জন্য বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাড়াঁয় অর্থের যোগান। এটা কোন মতে পার করে ব্যবসা শুরু করে এগিয়ে যেতে হলে প্রয়োজন পর্যাপ্ত মূলধন। আমাদের দেশে ফিনান্সিয়াল প্রতিষ্ঠানগুলো তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রদানে ততটা উৎসাহি নয় যতটা না তারা তৈরি পোশাক বা অন্যান্য পণ্য উৎপাদনের  ব্যাপারে উৎসাহী হয়। বিগত কোভিডের পরে কেবল অর্থের যোগানের অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি  শিল্প ও সেবা খাত। এছাড়াও অর্থের অভাবে স্থানীয় সফটওয়্যার সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো বড় বড় বাজেটের কাজ করতে পারেনা। নিশ্চিত করতে পারে না বিশ্বমানের সেবা কারণ তাদের বিনিয়োগ করতে হয় আগে।

>>আরও পড়ুন: ইন্টারন্যাশনাল মেম্বারদের ব্যবসার সার্বিক উন্নয়নে কাজ করতে চান হাসিনুল কুদ্দুস রুশো

দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ও সেবাখাতের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আর আমাদের তথ্যপ্রযুক্তিখাতের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ও সেবাখাতের অন্তুর্ভুক্ত। তাই এই খাতের উন্নয়নে আমি কাজ করতে চাই। আমি বরাবরই চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে ভালোবাসি। আমরা যখন নগদ নিয়ে ভাবি তখন মাথায় ছিল দেশের মোবাইল ফাইন্যান্সিং সেক্টরের মনোপলিটা ভাংগতে হবে। কারণ সবার হাতেই ফোন এবং মোবাইল ফাইন্যান্সিং এর বাজার ক্রমবর্ধমান। সেই সুযোগে কেউ একচেটিয়া ব্যবসা করলে দেশের মানুষ তাদের প্রাপ্য সেবা সুবিধা হতে বঞ্চিত হবে। এবং সেবা ব্যয় হবে ক্রমবর্ধমান। এই ভাবনা হতেই নগদের জন্ম।

অনেকে বলেন আমি সেদিন বেসিসে এসেছি আর এখনই নেতৃত্বে আসতে চাইতেছি এটা ঠিক না। আসলে নেতৃত্ব কি? উইকিপিডিয়ার মতে নেতৃত্ব হলো এমন এক "সামাজিক পভাবের প্রক্রিয়া যার সাহায্যে মানুষ কোনও একটি সর্বজনীন কাজ সম্পন্ন করার জন্য অন্যান্য মানুষের সহায়তা ও সমর্থন লাভ করতে পারে।" জিনতত্ত্ববিদের এলান কিথ আরও সর্বব্যাপী একটি সংজ্ঞা দেন। তিনি বলেন, "নেতৃত্ব হলো মানুষের জন্য একটি পথ খুলে দেওয়া যাতে তারা কোনও অসাধারণ ঘটনা ঘটানোর ক্ষেত্রে নিজেদের অবদান রাখতে পারে।’’  

>>আরও পড়ুন: শিক্ষা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সবাইকে নিয়ে গর্বের একটা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চান রিসালাত

আমি আসলে এই ভাবনাগুলো হতেই বেসিস নেতৃত্বে আসতে চাই। আমি আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি ইন্ডাস্ট্রির ক্ষুদ্রও মাঝারি উদ্যোক্তারের ব্যবসা উন্নয়নে মূলধন বা ঋণ সহায়তা প্রাপ্তিটা সহজ করতে চাই। আমরা শীঘ্রই তথ্যপ্রযুক্তিখাতের এই ক্ষুদ্রও মাঝারি উদ্যোক্তারের ঋণ সহায়তা প্রাপ্তির কাজটাকে সহজ করার জন্য ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা চালু করতে যাচ্ছি  যা আমাদের উদ্যোক্তাদের জন্য খুলে দেবে অর্থ যোগান প্রাপ্তির নতুন দ্বার। আমরা  ডিজিটাল ব্যংকিং সেবার মাধ্যমে  আমাদের উদ্যোক্তাদের বিনা জামানতে  ঋণ সহায়তা প্রদান করবো, যাতে করে আমাদের উদ্যোক্তারা একদিকে যেমন ব্যবসার উন্নয়ন করতে পারবে, অপর দিকে বড় বড় প্রতিষ্ঠানে সেবা সরবরাহ করার জন্য তৈরি করতে পারে বড় বড় বাজটের সেবাপণ্য।  বিশ্ব মানের সেবা দিতে নিয়োগ দিতে পারে দক্ষ জনবল। সেই সাথে আমি ফিনটেক ইন্ডাস্ট্রির নীতিমালা প্রনয়নে ও কাজ করতে চাই।  বেসিস নেতৃত্বের মাধ্যমে আমি এই বিষয়গুলোতে কাজ করতে চাই। আমি মনে করি, তরুণ নেতৃত্বের উপর আমার প্রবীণরা ভরসা করতে পারবেন । আমরা তাদের নিরাশ করবো না।

>>আরও পড়ুন:  তরুণ ফ্রিল্যান্সার ও উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে তাদের ইকোসিস্টেমে আনতে চান আরমান

তাছাড়া আমাদের আইটি ইন্ডাস্ট্রির যারা অভিজ্ঞ আছেন তারা সবসময় আমাদের সহযোগিতা করবেন, এটা আমি বিশ্বাস করি। আমার যেহেতু কাজ করার আগ্রহটা আছে। আছে ফিনটেকে কাজ করার অভিজ্ঞতা। সেই সাথে আছে সমস্যা সমাধানের পরিকল্পনা।  

গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়ে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ করেছি। সরকার সামনে থেকে এখানে নেতৃত্ব দিয়েছে। আর আমাদের মতো তরুণ বেসরকারি উদ্যোক্তারা ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ স্লোগানকে অর্জনের পথে নিয়ে গেছে প্রবীনদের উপদেশ আর পরামর্শে।  ডিজিটাল বাংলাদেশ স্বপ্ন যেসব তথ্যপ্রযুক্তি সেবা আর অবকাঠামের উপর নির্ভর করে বাস্তবায়িত হয়েছে তার বড় অংশীজন হচ্ছে বেসিস এবং বেসিসের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো।  স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে বেসিসের ভূমিকা হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই স্মার্ট দেশ গড়তে হলে আমাদের স্মার্ট নেতৃত্ব বেছে নিতে হবে।

সংবাদটি পঠিত হয়েছে: ৫৪১ বার

এ সম্পর্কিত আরও খবর