বৃহস্পতিবার

ঢাকা, ৫ অক্টোবর ২০২৩

লেটেস্ট আপডেট


মুখোমুখি

ফান্ডের অভাবে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ভূমিকা রাখতে পারছে না সোয়াপ

প্রকাশ: ১১ আগস্ট ২০২৩, রাত ১০:৫১

টেকওয়ার্ল্ড প্রতিবেদক
Card image

Card image

ছবি: সংগৃহীত

রিসাইক্লিং ও ই-ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের জন্য একটা বড় অংকের বাজেট লাগবে। বাজেটের কারণে এটা করার জন্য আমরা এখনও প্রস্তুত না। ভবিষ্যতে যদি ফান্ড পাই তাহলে এটা নিজেরাই করার পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যেই আমরা চেষ্টা করছি দেশের যেসব মোবাইল ফোন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি, ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও রিসাইক্লিং কোম্পানি আছে তাদের সাথে যুক্ত হতে।

ঢাকা ইউনিভার্সিটির ইন্সটিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে (আইবিএ) পড়াশোনা করার সময় নিজের একটা পুরাতন বা সেকেন্ড হ্যান্ড ল্যাপটপ কিনতে গিয়ে বেশ সমস্যার মুখোমুখি হন মো. পারভেজ হোসেন। তখন মাথায় আসে এমন একটি প্লাটফর্ম তৈরি করলে কেমন হয়, যেখানে দেশের সবাই যেকোনো জায়গা থেকে একটি প্ল্যাটফর্মে পুরানো ইলেকট্রনিক ডিভাইস কিনতে ও বিক্রি করতে পারবে। নিজের ডিভাইস কেনার সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে হঠাৎ মনে হলো, আমার মতো মধ্যবিত্ত মানুষের সবার তো নতুন ল্যাপটপ, ফোন কেনার মতো সামর্থ্য নেই। বাজারে পুরানো ইলেকট্রনিক ডিভাইসের অনেক চাহিদা রয়েছে। তখন থেকেই পুরানো ল্যাপটপ, মোবাইল বা ইলেকট্রনিক অ্যাক্সেসরিজ কেনাবেচার একটি ব্যবসা গড়ে তোলার কথা ভাবতে থাকেন তিনি। এই চিন্তা থেকেই রি-কমার্স প্লাটফর্ম সোয়াপ ডটকম ডটবিডির (https://swap.com.bd/) যাত্রা শুরু।

বলছিলাম বাংলাদেশের প্রথম রি-কমার্স প্ল্যাটফর্ম সোয়াপের শুরুর কথা। প্রযুক্তির উন্নয়ন ও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে যাওয়ার কারণে দিন দিন ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারের পরিধি বেড়েই চলেছে। তাই নতুন ডিভাইস কেনার পাশাপাশি পুরানো ডিভাইস কেনার চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। দেশের মানুষদের সাধ্যের মধ্যে তার পছন্দের পণ্য সার্ভিস ওয়ারেন্টিসহ তুলে দিতে এবং ই-বর্জ্য রিসাইক্লিংয়ে ঝুঁকির সম্ভাবনা কমাতে ভূমিকা রাখছে রি-কমার্স প্লাটফর্ম সোয়াপ।

সম্প্রতি সোয়াপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. পারভেজ হোসেনের সাথে কথা হয় টেকওয়ার্ল্ড বাংলাদেশের। একান্ত আলাপে জানালেন সোয়াপের কার্যক্রম, সেবা, ই-বর্জ্য রিসাইক্লিংসহ সমসাময়িক পুরানো ডিভাইসের বাজারের নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে। টেকওয়ার্ল্ড বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য আলাপের চুম্বক অংশ এখানে তুলে ধরা হলো।

টেকওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ: সবাই ই-কমার্স শব্দটির সাথে পরিচিত। রি-কমার্স প্ল্যাটফর্ম আসলে কি?

পারভেজ হোসেন: আসলেই শব্দটার সাথে অনেকে পরিচিত না। বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কাস্টমাররা। ই-কমার্স হলো, ওয়েবসাইট থেকে ক্রেতারা তাদের পছন্দ মতো নতুন পণ্য মূল্য দেখে সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে অর্ডার করেন। প্রতিষ্ঠান অর্ডার পেয়ে ক্রেতার নির্দিষ্ট ঠিকানায় পণ্যটি ক্যাশ অন ডেলিভারি দেয়। ক্রেতা সেটি টাকা দিয়ে বুঝে নেন। আর রি-কমার্স হলো পুরানো পণ্য কাস্টমারের কাছ থেকে আমরা কিনে নিচ্ছি। সুতরাং এটা হলো রিভার্স ই-কমার্স। যেখানে আপনি ই-কমার্স থেকে নতুন পণ্য কিনছেন, সেখানে আমরা কাস্টমারের কাছ থেকে পুরানো পণ্য কিনে আবার সেগুলি বিক্রি করার প্লাটফর্ম দিচ্ছি। এটাকেই বলা হচ্ছে রি-কমার্স প্লাটফর্ম।

টেকওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ: আপনারা কী ধরনের সেবা দিচ্ছেন?

পারভেজ হোসেন: সোয়াপ বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র নির্ভরযোগ্য রি-কমার্স প্ল্যাটফর্ম। এই প্লাটফর্মে সোয়াপ একটি কাস্টমার টু বিজনেস (সিটুবি), বিজনেস টু বিজনেস (বিটুবি) এবং কাস্টমার টু বিজনেস টু কাস্টমার (সিটুবিটুসি) মার্কেটপ্লেস হিসেবে কাজ করে, যেখানে গ্রাহকরা তাদের ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক্স এবং অটোমোবাইল কিনতে, বিক্রি করতে বা অদল-বদল করতে পারেন। এখানে ব্যবহারকারীরা নানা প্ল্যাটফর্ম, পেমেন্ট পদ্ধতি এবং পরিষেবামূলক বিকল্পগুলি ব্যবহার করতে পারেন নির্ভরযোগ্যভাবে এবং সামর্থ্য অনুযায়ী। অনেক নিম্ন আয়ের উপার্জনকারীদেরও পণ্য ক্রয়, বিক্রয় এবং বিনিময় করতে প্ল্যাটফর্মটি সক্ষম, যা উদীয়মান ই-কমার্স বাজারে অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ এবং প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করছে প্রতিষ্ঠানটি।

সারাদেশের আগ্রহী গ্রাহকরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যেন ঘর বসে সহজে তাদের পুরাতন পণ্য বিক্রি করতে পারেন। সেই সাথে তাদের ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক পণ্যের বিনিময়ে শুধু ন্যায্য দামই নয়, বরং কম দামে নতুন পণ্য কিনতে পরেন সে দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সোয়াপ। এ বিষয়ে গ্রাহকদের প্রয়োজনীয় সকল সুযোগ-সুবিধা ও পরিপূর্ণ নিরাপত্তা দিয়ে থাকে সোয়াপ।

টেকওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ: আপনারা পুরানো পণ্যের এক্সচেঞ্জ সুবিধা দিচ্ছেন। এটা কীভাবে?

পারভেজ হোসেন: এ সেবাটা আমরা দুই ভাবে দিয়ে থাকি। একটা হলো কাস্টমার যদি ঘরে বসে তার পুরোনো ফোন, বাইক বা ল্যাপটপটি বিক্রি করতে চান, তাহলে ওই কাস্টমারকে বিক্রির জন্য আমদের এখানে ওয়েবসাইটে অনুরোধ করতে হবে। অনলাইনে প্রক্রিয়ার মধ্যে উল্লেখ করতে হবে আপনি কোন পুরানো পণ্যটা বিক্রি করে, কোন নতুন পণ্যটা নিতে চান। তাহলে আমাদের টিমের সদস্যরা সাথে সাথে বাসায় গিয়ে ওই পুরোনো পণ্য দেখে নির্দিষ্ট দাম দিয়ে নতুন পণ্যও দিয়ে আসবেন। যেমন, একটা স্যামসাংয়ের ফোন নিতে চান। ফোনটার দাম ৩০ হাজার টাকা। এখন আপনার পুরানো ফোনের দাম ১২ হাজার টাকা। আপনি পুরানো ফোন দিয়ে বাকি ১৮ হাজার টাকা দিয়ে নতুন ফোনটা নিতে পারবেন। একই স্টাইলে বাইক বা ল্যাপটপটিও এক্সচেঞ্জ করতে পারবেন।

টেকওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ: এই প্লাটফর্মে কী ধরনের পণ্য পাওয়া যায়?

পারভেজ হোসেন: প্রথমে আমরা পুরোনো মোবাইল ফোন দিয়ে কার্যক্রমের যাত্রা শুরু করি। পরে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন কোম্পানির ল্যাপটপ ও গ্যাজেট যুক্ত হয় ক্যাটেগরিতে। গ্যাজেটের মধ্যে স্মার্টওয়াচ, ট্যাবলেট, আইপ্যাড, অ্যাক্সেসরিজ। এছাড়াও আছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বাইক, গাড়ি এবং ফার্নিচার এসব পণ্য নিয়ে কাজ করছি। আমরা এখনও অনেক ব্র্যান্ডের অদল-বদল অফার দিতে পারিনি। ওইসব ব্র্যান্ড সাথে আমরা যোগাযোগ করছি। মূলত, একদিনেই সব ব্র্যান্ড নিয়ে কাজ করা যায় না। এখন আস্তে আস্তে আমাদের সেবার পরিসর বাড়ছে।

সোয়াপ পুরানো মোবাইলের পাশাপাশি তাদের দৃষ্টি এখন নতুন পণ্যের দিকেও। ইতিমধ্যে  প্লাটফর্মটি অফিসিয়াল ওয়ারেন্টিসহ আইফোন, আইপ্যাড, ম্যাকবুকসহ অ্যাপলের আনুষাঙ্গিক পণ্য বিক্রির অফিসিয়াল অনুমোদন পেয়েছে।  

টেকওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ: পুরানো পণ্য বিক্রির সময় সেটি গুণগতমান সম্পন্ন রয়েছে কি না, বিষয়টা ক্রেতাদের কীভাবে নিশ্চিত করেন?

পারভেজ হোসেন: পুরানো পণ্য কেনার সময় আমরা প্রত্যেকটা পণ্য গুণগতমানটা ভালমতো দেখে ভেরিফিকেশন করে কিনি।পণ্যটা কি অবস্থায় আছে, পণ্যের ভেতরে কোন রকম টেকনিক্যাল সমস্যা আছে কি না। এর জন্য আমাদের একদল দক্ষ ও অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার রয়েছেন, যারা ১০ থেকে ১২ বছর ধরে এ বিষয়ে কাজ করছেন। কোন পণ্যে কোনরূপ সমস্যা থাকলে সেগুলি তারা সেগুলো রিপেয়ার করে তারপর বিক্রি করে থাকি। ক্রেতা সন্তুষ্টিই আমাদের সার্ভিসের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।

 টেকওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ: দেশে পুরানো ইলেকট্রনিক্স পণ্যের মার্কেটের আকারটা কেমন?

পারভেজ হোসেন: বাংলাদেশে পুরানো পণ্যের মার্কেটের আকার অনেক বড়। আমরা একটা রিসার্চ করেছি। সেখানে দেখা গেছে এই মার্কেটে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার সমমূল্যের পুরাতন ইলেকট্রনিক পণ্য রয়েছে, যা চাইলেই বিক্রি করা সম্ভব। দুঃখের বিষয় হলো, এই পণ্যগুলি কখনো বিক্রি হয় না। গড়ে দেখা যায় যে, ৫০-৬০% পণ্য বিক্রিই হয় না। এই বাজারে বিক্রয়যোগ্য পণ্যগুলো ২৫-৫০% বিক্রি হচ্ছে। বাকিগুলো দেখা যাচ্ছে ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ফ্যামিলির মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। পরিচিত বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে বিক্রি হয়। দেশের পুরাতন পণ্য বিক্রির বাজারটা অনেক বড়। বিশ্বে প্রতি বছর ১১% করে এই বাজার বৃদ্ধি হচ্ছে। আগামীতে পুরানো ইলেকট্রনিক্স পণ্যের মার্কেটটা নতুন মার্কেটের চেয়ে দ্বিগুণ বড় হবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নতুন স্মার্ট-ফোনের বাজারের চেয়ে পুরানো বা ব্যবহার করা ফোনের বাজারটা তিনগুণ বড় হবে।

টেকওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ: আড়াই বছরে সোয়াপের অগ্রগতি কেমন?

পারভেজ হোসেন: মাত্র ৩১ মাস বয়সী এ প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে কাজ করছেন ২০০ জন কর্মী। আড়াই বছরে প্রায় ৭০ গুণ বড় হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ভিভো, অপো, ওয়ানপ্লাস, রিয়েলমি, স্যামসাং, শাওমি, অ্যাপল, ল্যানোভো, ডেল, এসআর, আসুস, হিরো, টিভিএস,  সুজুকি, বাজাজে, টয়েটা, নিশান, হুন্দাই, মিতসুবিসির মতো লিডিং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। সোয়াপ গ্রস মার্চেন্ডাইজ ভ্যালুতে (জিএমভি) ৪৩ মিলিয়ন ইউএসডি’র বেশি জেনারেট করেছে, যার বর্তমান মাসিক জিএমভি ২.৫ মিলিয়ন ইউএসডি’র  বেশি। প্রতিষ্ঠানটি এখন পর্যন্ত ৮০ হাজার মানুষকে এই বিজনেসের সাথে কানেক্ট করেছে সোয়াপ। বর্তমানে আমাদের রেজিস্টার্ড গ্রাহকে সংখ্যা প্রায় ৭ লক্ষ ৫০ হাজারের মতো। সাড়ে ছয় লাখেরও বেশিবার ডাউনলোড করা হয়েছে আমাদের অ্যাপটি। একদম প্রথম মাসে মাত্র ১৭ লাখ টাকা আয় হলেও গত জুন মাসে সোয়াপের আয় বেড়ে দাঁড়ায় ২৫ কোটি টাকায়। প্রতি মাসে প্ল্যাটফর্মটির সেল বাড়ছে প্রায় ১৫ শতাংশ।

টেকওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ: রি-কমার্স বিজনেসে আপনারা কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন?

পারভেজ হোসেন: দেখুন, আমাদের দেশের মানুষ ই-কমার্সের সাথে পরিচিত। অনলাইনে ওয়েবসাইটে পণ্য দেখে অর্ডার করলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অর্ডার করা পণ্যটা ঠিকানা অনুসারে পৌঁছে যাবে। কিন্তু মানুষ রি-কমার্সের সাথে তেমনভাবে পরিচিত না বা অভ্যস্ত না। ঢাকার মানুষ জানলেও সারাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ এটা জানেনই না। এই মানুষগুলোকে রি-কমার্স সম্পর্কে ধারণা দেওয়াই একটা চ্যালেঞ্জ। কেননা রি-কমার্স হলো পুরানো পণ্য কাস্টমারের কাছ থেকে কেনা এবং সেগুলি বিক্রি করা। যেখানে কাস্টমার ই-কমার্স থেকে নতুন পণ্য কিনছেন, সেখানে আমরা কাস্টমারের কাছ থেকে পুরানো পণ্য কিনে আবার সেগুলি বিক্রি করার প্লাটফর্ম দিচ্ছি। এছাড়াও কাস্টমাররা জানেন না পণ্য বিক্রির প্রক্রিয়াটা কি, কিভাবে বিক্রি করতে হবে, বিক্রি করলে টাকাটা কিভাবে পাবে, এসব বিষয় কাস্টমারদের শেখানো, বুঝানোটাও একটা চ্যালেঞ্জ। সবচেয়ে বড় বিষয়টা হলো, আমাদের প্লাটফর্মে যে সার্ভিস দিচ্ছি এটা যেন গুণগত মানসম্পন্ন হয়। কাস্টমার যেন সন্তুষ্ট হয়। সার্ভিসে যেন তারা বিশ্বাস করতে পারে যে, এই না প্লাটফর্ম থেকে মোবাইলটা কিনেছি, ঠকে যাইনি। মূল্য অনুসারে মোবাইলটা ঠিক আছে। যেমন, আশা করেছিলাম, পুরানো মোবাইল হলেও এটা তেমনই ভাল। কাস্টমারের এই বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে শুরু থেকেই সার্ভিসের কোয়ালিটির দিকে নজর রেখেছি। আমাদের টিমের জন্য এটাও একটা অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ।

টেকওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ: পরিবেশ গবেষকদের ভাষ্যমতে বর্তমানে ই-বর্জ্যের কার্বন ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। দেশের ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কীভাবে ভূমিকা রাখছে সোয়াপ?

পারভেজ হোসেন: ই-বর্জ্য কমিয়ে সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি পণ্য বিক্রি করার সময় গ্রাহকদের সুবিধা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে সোয়াপ। এই প্ল্যাটফর্মটি অনেক নিম্ন-আয়ের পরিবারকে পণ্য ক্রয়, বিক্রয় এবং বদল করতে সক্ষম করছে পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং প্রযুক্তিতে তাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করছে। আড়াই বছরে প্রতিষ্ঠানটি  কার্বন পদচিহ্ন কমানোর অঙ্গীকারের অংশ হিসাবে ৩৬৫০ মেট্রিক টন কার্বন নিঃসরণ কমাতে সাহায্য করেছে এবং ৩৮৬ মেট্রিক টন ই-বর্জ্য কমিয়েছে।

রি-সাইক্লিং ও ই-ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের জন্য একটা বড় অংকের বাজেট লাগবে। বাজেটের কারণে এটা করার জন্য আমরা এখনও প্রস্তুত না। ভবিষ্যতে যদি ফান্ড পাই তাহলে এটা নিজেরাই করার পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যেই আমরা চেষ্টা করছি দেশের যেসব মোবাইল ফোন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি ও ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও রিসাইক্লিং কোম্পানি আছে তাদের সাথে যুক্ত হতে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে মানুষের ঘরে পড়ে থাকা বাতিল, ব্যবহারের অনুপযোগী মোবাইল ফোন বা ই-বর্জ্য সংগ্রহ করে আমরা যদি তাদেরকে দিয়ে যদি রি-ইউজ ও রিসাইক্লিং করাতে  পারি  তাহলে আমি মনে করি দেশের ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় একটা নতুন পালক যোগ হবে।

টেকওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ: প্রত্যন্ত অঞ্চলে মানুষের ঘরে পড়ে থাকা বাতিল মোবাইল ফোন বা ই-বর্জ্য সংগ্রহে এখনও কোনো কার্যকর পদ্ধতি চালু হয়নি। এসব বাতিল ফোন সংগ্রহে আপনাদের কোন পরিকল্পনা রয়েছে কি না?  

পারভেজ হোসেন: ১৭ কোটি মানুষের এই দেশে ১৮.৫১ কোটি মুঠোফোন গ্রাহক রয়েছে। এখন স্থানীয় ও গ্লোবাল মিলে ১৬টি কোম্পানি মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদন করছে। জনবহুল এই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অসংখ্য মানুষের ঘরে ঘরে অচল, বাতিল বা ব্যবহারের অনুপযোগী মোবাইল ফোন ই-বর্জ্য হিসেবে পড়ে আছে। অন্যদিকে, বর্তমানে দেশে জেআর সলিউশন্সসহ ১০ কোম্পানি ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও রিসাইক্লিং করার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে লাইসেন্স পেয়েছে। এখান থেকে ছয়টি কোম্পানি সক্রিয়ভাবে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ করছে। এখন আমরা যেহেতু মোবাইল ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও রি-সাইক্লিংয়ের কাজ করি না। আমরা চাই ওই ১০টি রিসাইক্লিং ও ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কোম্পানির সাথে এক হয়ে কাজ করতে।

একটি স্মার্টফোন সম্পূর্ণ খুলে প্রায় ২০০ টাকা মূল্যের ২৬ ধরনের আইটেম পাওয়া যায়। মোবাইল ফোন ম্যানুফ্যাকচারিং বা উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলিতে  বিভিন্ন ধরনের পার্টস লাগে। আমরা যদি এগুলি তাদের কাছে সরবরাহ করতে পারি এবং তারা যদি এগুলিকে ব্যবহার করতে পারে, ইন্ডাস্ট্রিতে এভাবে আমরা একত্রিত হয়ে কাজ করতে চাই।

টেকওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ: আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

পারভেজ হোসেন: আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো সারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কাস্টমারদের কাছে এই সেবাটি পৌঁছে দেওয়ার। প্রথমে ঢাকা থেকে এটি শুরু করেছিলাম। এখন আমরা ৩৫টি জেলায় কাজ করছি। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে চলতি বছরের মধ্যে ৬৪টি জেলায় সেবাটি পৌঁছে দেওয়ার। রাজধানীতে পুরনো পণ্য বিক্রির সুযোগ রয়েছে। কিন্তু প্রত্যন্ত অঞ্চলে এ সুযোগটা নেই। আমরা এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ইতিমধ্যেই বিভিন্ন লজিস্টিক কোম্পানি, ফোন কোম্পানি, বাইক ও গাড়ি ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির সঙ্গে কাজ করছি। আমাদের বিশ্বাস, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই এই স্বপ্ন সফল হবে।

সংবাদটি পঠিত হয়েছে: ৩৭৮ বার

মুখোমুখি সম্পর্কিত নিউজ


Card image

দারাজে জমজমাট বৈশাখী মেলা

প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারী ২০২১