মালয়েশিয়ায় ‘সিলিকন রিভার’ ভিশন নিয়ে বাংলাদেশ
সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে বাংলাদেশের নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। দেশে এক ডজনেরও বেশি সেমিকন্ডাক্টর স্টার্টআপ ইতিমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে, যেগুলোর নেতৃত্বে রয়েছেন বিদেশফেরা অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়াররা। বুয়েট, চুয়েট, কুয়েট, আইইউটি ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের শীর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন নিজেদের ভিএলএসআই (Very Large Scale Integration) ল্যাব চালু করেছে। সম্প্রতি উদ্বোধন হয়েছে একটি পূর্ণাঙ্গ ভিএলএসআই ইনস্টিটিউট।
দেশে গবেষণা অবকাঠামো গড়ে ওঠার পাশাপাশি বিদেশেও বাংলাদেশের সক্ষমতা তুলে ধরা শুরু হয়েছে। মালয়েশিয়ার পেনাংয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাংলাদেশ সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসআইএ) তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক রোড শো। ‘সিলিকন রিভার বাংলাদেশ’ ভিশন নিয়ে আয়োজিত এই রোড শোয়ে তুলে ধরা হচ্ছে দেশের চিপ ডিজাইন, এআই-নির্ভর ইঞ্জিনিয়ারিং ও টেস্টিং সার্ভিস খাতে দ্রুত অগ্রগতির চিত্র।
রোড শো-এর উদ্বোধন করেন পেনাংয়ের উপ-মুখ্যমন্ত্রী ওয়াইবি জগদীপ সিং দেও। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার মঞ্জুরুল করিম খান চৌধুরী এবং বিএসআইএ সভাপতি এম এ জব্বার।
স্বাগত বক্তব্যে বিয়ার সামিটের আহ্বায়ক ও পার্ডু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুহাম্মদ মুস্তাফা হোসেন বলেন, “সেমিকন্ডাক্টর খাতে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া একসঙ্গে কাজ করতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় ও শিল্পখাতের মধ্যে আইপি শেয়ারিং, প্রশিক্ষণ সহযোগিতা, এমনকি যৌথ ‘সেন্টার অব এক্সেলেন্স’ ও ভেঞ্চার ল্যাব স্থাপন করা সম্ভব। এতে আইপি ও লাইসেন্সিং ব্যবস্থার জন্য ডিজিটাল টুইনও তৈরি করা যাবে।”
রোড শোতে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ছিল উলাকসেমি, নিউরাল সেমিকন্ডাক্টর, প্রাইম সিলিকন, সিলিকোনোভা লিমিটেড, আই-টেস্ট বাংলাদেশ ও ক্যাকটাস ম্যাটেরিয়ালস।
উলাকসেমি ও নিউরাল সেমিকন্ডাক্টর তাদের অ্যানালগ, আরএফ ও ফোটোনিক্স ডিজাইন তুলে ধরে, প্রাইম সিলিকন প্রদর্শন করে ডিজিটাল ইমপ্লিমেন্টেশন ও ফাউন্ড্রি প্রস্তুতি। সিলিকোনোভা এআই-ভিত্তিক ডিজাইন অটোমেশন ও ওএসএটি সহযোগিতা উপস্থাপন করে। চিপ টেস্টিং ও রিলায়েবিলিটি সেবা দেখায় আই-টেস্ট বাংলাদেশ। আর পাওয়ার ডিভাইস ও ফোটোনিক্স ক্ষেত্রে নিজেদের উদ্ভাবন তুলে ধরে ক্যাকটাস ম্যাটেরিয়ালস।
রোড শোতে উপস্থিত ছিলেন মালয়েশিয়ার বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, ইনভেস্ট পেনাং, সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন, ডেলয়েট, ইনফিনিয়ন, এএসই, টিএফ-এএমডি, ইনারি ও ইনফিনেক্সসহ বহু আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগ সংস্থার প্রতিনিধিরা।
বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, এই আয়োজন শুধু প্রযুক্তি প্রদর্শনের সুযোগই নয়, বরং দুই দেশের মধ্যে সেমিকন্ডাক্টর গবেষণা, প্যাকেজিং, টেস্টিং এবং সরবরাহ চেইন সহযোগিতা বাড়ানোর এক বাস্তব সম্ভাবনা তৈরি করেছে।