ঢাবি শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নে যৌথভাবে কাজ করবে এটুআই ও আইসিটি বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের প্রস্তুতি জোরদার করতে এসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) কর্মসূচি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ যৌথভাবে কাজ করবে।
গতকাল (১১ নভেম্বর) আইসিটি বিভাগে ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি’ শীর্ষক এক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। এতে আইসিটি বিভাগ, এর বিভিন্ন প্রকল্প, এটুআই এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)-এর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দক্ষতা ও কর্মসংস্থানযোগ্যতা বাড়াতে কীভাবে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তা নিয়ে আলোচনা করেন।
স্বাগত বক্তব্যে এটুআই-এর যুগ্ম প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. রশিদুল মান্নাফ কবীর বলেন,‘আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে চাই, যাতে প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও জনসেবার সুযোগ সরাসরি শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে যায়। যেন তারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে এমন দক্ষতা নিয়ে যেতে পারে, যা বাস্তব কর্মবাজারের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান দ্রুত পরিবর্তনশীল কর্মবাজারের সঙ্গে উচ্চশিক্ষার সামঞ্জস্য রক্ষার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীদের এমন এক বাস্তবতায় প্রস্তুত থাকতে হবে, যেখানে প্রযুক্তি, তথ্য ও উদ্ভাবন প্রায় সব পেশারই কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছে।’
তিনি উল্লেখ করেন, এটুআই ও আইসিটি বিভাগের যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে পাঠদানের পদ্ধতি আধুনিকায়ন, হালনাগাদ পাঠক্রম প্রণয়ন এবং এমন সব কর্মসূচি তৈরি করা সম্ভব, যা শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা, সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা, যোগাযোগ দক্ষতা ও প্রযুক্তির নৈতিক ব্যবহারে সক্ষম করে তুলবে।
সমাপনী বক্তব্যে সভার সভাপতি হিসেবে আইসিটি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী তরুণদের উন্নয়নে সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে আমরা আজ আমাদের তরুণ প্রজন্মকে কতটা সঠিকভাবে প্রস্তুত করতে পারছি তার ওপর। আইসিটি বিভাগ এমন উদ্যোগগুলোকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে, যা সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় ও শিল্পখাতকে আরও ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত করে।’ তিনি জানান, ইতিমধ্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই সহযোগিতাকে আরও অগ্রসর করার জন্য কাজ করা হবে।
আইসিটি বিভাগের চলমান প্রকল্প ও উদ্যোগের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কীভাবে কাজ করা যায়, সে বিষয়ে সম্ভাব্য সহযোগিতার ক্ষেত্র চিহ্নিত করতে আলোচনা পর্বটি সঞ্চালনা করেন এটুআই-এর প্রোগ্রাম ম্যানেজমেন্ট লিড আব্দুল্লাহ আল ফাহিম। তিনি বলেন,‘ইতোমধ্যে অনেক কর্মসূচি চালু রয়েছে যার মাধ্যমে আমরা ঢাবির সাথে যুক্ত হতে পারি।’ তিনি এটুআই-এর ‘ইয়াং প্রফেশনালস কর্মসূচি’র উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, এখানে নতুন স্নাতকেরা জাতীয় গুরুত্বসম্পন্ন প্রকল্পে কাজ করার মাধ্যমে নিজেরাও পেশাগত দক্ষতা অর্জনের সুযোগ পান। তিনি প্রস্তাব করেন, ইন্টার্নশিপ, প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা উন্নয়নমূলক কর্মসূচির মাধ্যমে এটুআই এর উদ্যোগগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য আরও বেশি উন্মুক্ত করা উচিত, যাতে তারা বাস্তব দক্ষতা ও কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে পারে।
আলোচনায় ডাকসু’র সহ-সভাপতি (ভিপি) মো. আবু সাদিক কায়েম তুলে ধরেন, কীভাবে এটুআই আইসিটি বিভাগের বিভিন্ন উদ্যোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধি কার্যক্রমে সহায়ক হতে পারে। তিনি তথ্যপ্রযুক্তি-নির্ভর দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ, উদ্ভাবনকেন্দ্রিক পাঠক্রম, ইন্টার্নশিপের সুসংগঠিত পথ তৈরি, কর্মসংস্থান মেলা, উদীয়মান প্রযুক্তি নিয়ে যৌথ গবেষণা এবং ‘নাগরিক সেবা বাংলাদেশ’-এর আদলে বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি বিভিন্ন সেবা এক জায়গা থেকে দেওয়ার জন্য ওয়ান স্টোপ সেবা কেন্দ্র স্থাপনের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেন।
কায়েম বলেন,‘আমাদের শিক্ষার্থীরা মেধাবী ও উদ্যমী। এটুআই ও আইসিটি বিভাগের অংশীদারিত্ব থাকলে আমরা একাডেমিক পাঠদানকে বাস্তবধর্মী ও ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থানের সঙ্গে আরও সরাসরি যুক্ত করতে পারবো।’
তিনি আরও বলেন, ডিজিটাল রূপান্তর-সংক্রান্ত এসব উদ্যোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রমকে দ্রুততর করতে পারে, শিক্ষার্থীদের সেবার মান উন্নত করতে পারে এবং সামগ্রিকভাবে দেশের অগ্রগতিতেও অবদান রাখতে পারে। দ্রুত অগ্রসর হওয়ার লক্ষ্যে তিনি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রস্তাব করেন।
ডাকসুর নির্বাহী সদস্য রায়হান উদ্দিন ‘কর্মসংস্থানের পথ সৃষ্টিতে ডিজিটাল রূপান্তর’ শীর্ষক একটি ধারণাপত্র সম্ভাব্য সহযোগিতার ক্ষেত্র হিসেবে উপস্থাপন করেন। তিনি জানান, বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। প্রযুক্তি দ্রুত এগিয়ে চললেও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি অবকাঠামো ও সম্পদ সবসময় সেই গতির সঙ্গে তাল মেলাতে পারে না। এ প্রেক্ষাপটে ডাকসুর পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আবাসিক হলগুলোতে ২০টি কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন, দক্ষতা উন্নয়নমূলক কর্মসূচি চালু, ইন্টার্নশিপের সুযোগ বাড়ানো এবং দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতার মাধ্যমে অবকাঠামো, প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের মধ্যে সুসংহত সংযোগ গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য তথ্য ও গবেষণা উপকরণ সহজলভ্য করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট হালনাগাদ এবং বিভিন্ন সেবা ধাপে ধাপে ডিজিটাল পদ্ধতিতে রূপান্তরের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
ডাকসুর সহকারী সাধারণ সম্পাদক মুহা. মহিউদ্দিন খান, ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক মো. মাজহারুল ইসলাম এবং মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক ফাতেমা তাসনীম জুমাসহ অন্যান্য প্রতিনিধিরাও আলোচনায় অংশ নেন। তারা শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়ন, ক্যারিয়ার গঠন ও বর্তমান কর্মবাজারের সঙ্গে দৃঢ় সংযোগ তৈরিতে কাঠামোবদ্ধ সহায়তার প্রয়োজনীয়তার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
সেমিনারে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের বিভিন্ন শাখা ও উদ্যোগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা হ্যাকাথন, মেন্টরশিপ, উদ্ভাবনী উদ্যোগের জন্য অনুদান, তথ্যপ্রযুক্তি-সংক্রান্ত প্রশিক্ষণসহ সম্ভাব্য সহযোগিতার নানা প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানের শেষাংশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, আইসিটি ও এটুআই-এর মধ্যে যৌথ অংশীদারিত্বের একটি রূপরেখা প্রণয়নের বিষয়ে নীতিগতভাবে সম্মতি গৃহীত হয়।