সরকারের প্রস্তাবিত নীতিতে ইন্টারনেটের দাম ২০ শতাংশ বাড়বে : আইএসপিএবি

Staff Reporter

নিজস্ব প্রতিবেদক

সোমবার, ৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৫:১৭

সরকারের প্রস্তাবিত নীতিতে ইন্টারনেটের দাম ২০ শতাংশ বাড়বে : আইএসপিএবি

টেলিকম খাতের নতুন খসড়া গাইডলাইনে বিভিন্ন ফি ও চার্জ আরোপের কারণে গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবার খরচ প্রায় ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি)।

আজ সোমবার রাজধানীর মহাখালীর রাওয়া ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি আমিনুল হাকিম এই আশঙ্কার কথা জানান।

আইএসপিএবির মহাসচিব নাজমুল করিম ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে নতুন ও পুরোনো নীতিমালার পার্থক্য তুলে ধরে ইন্টারনেটের দাম বাড়ার কারণ ব্যাখ্যা করেন আমিনুল হাকিম।

তিনি বলেন, ‘নতুন গাইডলাইন অনুযায়ী ফিক্সড ইন্টারনেটের মূল্য বাড়বে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) প্রস্তাবিত নিয়মে ইন্টারনেট সেবাদাতাদের ওপর নতুন করে রেভিনিউ শেয়ার, উচ্চ লাইসেন্স ফি ও অন্যান্য চার্জ আরোপ করা হচ্ছে, যা সরাসরি ব্রডব্যান্ড প্যাকেজের দাম বাড়াবে। এতে সাধারণ গ্রাহকসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা ও ডিজিটাল জীবনযাত্রা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

আইএসপিএবি'র সভাপতি আমিনুল হাকিম জানান, প্রস্তাবিত নীতিমালা অনুযায়ী ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদাতা বা এফটিএসপি (ফিক্সড টেলিকম সার্ভিস প্রোভাইডার) অপারেটরদের ক্রয়মূল্য ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। ফলে বর্তমানে ৭০০ টাকায় পাওয়া ২০ এমবিপিএস প্যাকেজের দাম বেড়ে সাড়ে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় পৌঁছাবে।

তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, প্রস্তাবিত গাইডলাইন পুনর্বিবেচনা করে এই অতিরিক্ত খরচের বোঝা কমানো হোক।’

ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আপনাদেরই সেবা দিচ্ছি। তাই অনুরোধ করছি, আমাদের পাশে থাকুন। এই দাবি আসলে আপনাদের ভবিষ্যতের জন্যই।’

সংবাদ সম্মেলনে আইএসপিএবির পক্ষ থেকে আরও কয়েকটি প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা হয়। সংগঠনটির দাবি, প্রস্তাবিত খসড়া নীতিমালায় মোবাইল কোম্পানিগুলোকে ফিক্সড ওয়্যারলেস একসেস (এফডব্লিউএ) এবং লাস্ট মাইল ফাইবার সংযোগের মাধ্যমে ফিক্সড কানেক্টিভিটি দেওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে দেশীয় বিনিয়োগে গড়ে ওঠা আইএসপিগুলোর জন্য তৈরি হবে ‘চরম অসম প্রতিযোগিতা’।

আইএসপিএবির মতে, অযৌক্তিক ফি বৃদ্ধি এবং মোবাইল কোম্পানিগুলোর অতিরিক্ত সুবিধা দেশীয় উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগকে ঝুঁকিতে ফেলবে। নতুন গাইডলাইনের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে সাধারণ গ্রাহকের ওপর।

সংগঠনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রস্তাবিত ফি ও চার্জের ফলে গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট খরচ ২০ শতাংশ পর্যন্ত এবং এফটিএসপি অপারেটরদের ক্রয়মূল্য ১৪ শতাংশ বাড়বে।

আমিনুল হাকিম বলেন, ‘এই নীতিমালা কার্যকর হলে গ্রামের ব্রডব্যান্ড সেবাদাতারা ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হবেন। তিন মাস পর যে সরকার নির্বাচিত হয়ে আসবে, তাদের পক্ষে এই অস্থিরতা সামাল দেওয়া কঠিন হবে। এতে দেশজুড়ে ডিজিটাল শাটডাউনের আশঙ্কা রয়েছে।’

তিনি ইন্টারনেট খাতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘ইন্টারনেটের মূল্য নির্ধারণের দায়িত্ব তাদের (বিটিআরসি) হাতে ছেড়ে দিন। দেশের সব রাজনৈতিক দলকে অনুরোধ করছি, এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করুন। জনগণের পাশে দাঁড়ান, দেশীয় উদ্যোক্তাদের রক্ষা করুন।’

আইএসপিএবির মহাসচিব নাজমুল করিম ভূঁইয়া অভিযোগ করেন, ‘সরকার মোবাইল অপারেটরদের অযথা সুবিধা দিচ্ছে। দেশীয় ব্রডব্যান্ড সেবাদাতাদের ২৫ লাখ টাকা একুইজিশন ফি দিতে হয়, কিন্তু স্টারলিংককে দিতে হয় মাত্র ১২ লাখ টাকা। এটি স্পষ্ট বৈষম্য।’

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নতুন খসড়া গাইডলাইনে লাইসেন্স নবায়নের ফি আড়াই গুণ এবং বার্ষিক ফি সাড়ে তিন গুণ বাড়ানো হচ্ছে। ফলে মেট্রোপলিটন এলাকায় ফিক্সড ইন্টারনেটের দাম বাড়বে অন্তত ১১ শতাংশ এবং অন্য এলাকায় ১৮ দশমিক ৪০ শতাংশ পর্যন্ত।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সহসভাপতি নেয়ামুল হক খান, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব আলম ও ফুয়াদ মুহাম্মদ শরফুদ্দিন এবং কোষাধ্যক্ষ মঈন উদ্দিন আহমেদ।