সোমবার

ঢাকা, ১৯ মে ২০২৫

সর্বশেষ


খবর

ইন্টারনেটকে নাগরিক অধিকারের স্বীকৃতি দিয়ে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ অনুমোদন

প্রকাশ: ৭ মে ২০২৫, দুপুর ১২:১৭

টেকওয়ার্ল্ড প্রতিবেদক

Card image

ছবি: প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে মঙ্গলবার তাঁর কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ’-এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। ছবি: পিআইডি

সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে শাস্তি কমানো হয়েছে। সর্বোচ্চ শাস্তি দুই বছরের কারাদন্ড। তবে মিথ্যা মামলার শাস্তি বাড়ানো হয়েছে

দীর্ঘ আলোচনা ও খসড়া সংশোধনের পর ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ’ নামে আইন চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইন বদলে গতকাল মঙ্গলবার নতুন এই আইনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।

প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে এই প্রথম ইন্টারনেটকে নাগরিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া এতে সাইবার নিরাপত্তা আইনের নয়টি ধারা বাদ দেওয়া হয়েছে। ধর্মীয় উসকানিমূলক বক্তব্য বা কনটেন্ট, যেটি সহিংসতা উসকে দিতে পারে, সেটিকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে প্রস্তাবিত আইনে রাখা হয়েছে। অনলাইন জুয়াও নিষিদ্ধ করা হয়েছে এই অধ্যাদেশে।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে তাঁর কার্যালয়ে গতকাল মঙ্গলবার সকালে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ’-এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে সংবাদ সম্মেলন করে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

সাইবার নিরাপত্তা আইনের নয়টি ধারা বাদ

সাইবার নিরাপত্তা আইনের নয়টি ধারা বাদ দিয়ে অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন করা হয়েছে বলে জানান আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। এই নয়টি কুখ্যাত ধারা ছিল বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সাইবার নিরাপত্তা আইনের ৯৫ শতাংশ মামলাই এসব ধারায় হয়েছিল। এই মামলাগুলো এখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে। এ ছাড়া ইতিপূর্বে বিভিন্ন ধারায় যেসব মামলা করা হয়েছিল, সেগুলোও বাতিল হয়ে যাবে।

প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে সাইবার নিরাপত্তা আইনের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকা সম্পর্কে বিদ্বেষ, বিভ্রান্তি ও কুৎসামূলক প্রচারণার দণ্ড নিয়ে বিধান বিলুপ্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া মানহানিকর তথ্য প্রকাশ, প্রচার, ইত্যাদি সংক্রান্ত ধারা সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়েছে।

নতুন খসড়ায় নতুন যা থাকছে

প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে সাইবার জগতে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং যৌন হয়রানিকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে বলে জানান আসিফ নজরুল। আরও কিছু পরিবর্তনের উল্লেখ করেন তিনি। মতপ্রকাশের অপরাধের ক্ষেত্রে দুটি অপরাধ প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো, নারী ও শিশুর প্রতি যৌন নির্যাতনমূলত কনটেন্ট প্রকাশ ও হুমকি দেওয়া। আরেকটি হলো, ধর্মীয় ঘৃণা ছড়ানোর মধ্যে দিয়ে সহিংসতাকে উসকে দেওয়া। এ ক্ষেত্রে ভুল-বোঝাবুঝি ও হয়রানি রোধে ধর্মীয় ঘৃণাকে সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করার কথাও জানান আইন উপদেষ্টা। সহিসংতা উসকে দিতে পারে এমন যেকোনো ধর্মীয় উসকানিমূলক বক্তব্য বা কনটেন্টকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। এই দুটি ধারার ক্ষেত্রে কিছু রক্ষাকবচও রাখা হয়েছে বলে জানান আসিফ নজরুল।

প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে সাইবার অপরাধ করা হলে সেটি শাস্তিযোগ্য করা হয়েছে বলে জানান উপদেষ্টা।

সাইবার নিরাপত্তা কাউন্সিলে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের রাখার বিধান রয়েছে বলেন জানান আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, কনটেন্ট অপসারণের পর আদালতের অনুমতি নিতে হবে। আদালত যদি বলেন এই কনটেন্ট অপসারণ করা যাবে না, তাহলে তা পুনর্বহাল করতে হবে। যে কনটেন্ট অপসারণ করা হবে, সেটি সম্পর্কে মানুষকে জানাতে হবে।

অধ্যাদেশের খসড়া তৈরি করতে বিভিন্ন পর্যায়ে পরামর্শ করার কথা বলতে গিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, ২৫ বার খসড়া পরিবর্তন করা হয়েছে। সবশেষে বড় সমালোচক সুশীল সমাজের সঙ্গে তিন ঘণ্টা বসে খসড়াটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। আজকে (মঙ্গলবার) উপদেষ্টা পরিষদের সভায় ওঠে। এখন আইন মন্ত্রণালয়ের আইনি যাচাইয়ের পর অধ্যাদেশ জারি হবে। এ সপ্তাহের মধ্যে এটি কার্যকর হবে বলে তাঁরা আশা করছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে শাস্তি কমানো হয়েছে। সর্বোচ্চ শাস্তি দুই বছরের কারাদন্ড। তবে মিথ্যা মামলার শাস্তি বাড়ানো হয়েছে।

সংবাদটি পঠিত হয়েছে: ৫৭ বার