ছবি: সংগৃহীত
বেশ কিছু দিন মন্দা যাওয়ার পর ঈদুল ফিতরকে ঘিরে ই-কমার্স সেক্টর ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। এই খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিগত কয়েক মাসের তুলনায় ই-কমার্সে কেনাকাটার পরিমাণ বেড়েছে। তবে গত বছরের ঈদুল ফিতরের তুলনায় এবারের বেচাকেনা কম। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন ধরনের ছাড় ও অফার দিচ্ছেন ই-কমার্স উদ্যোক্তারা।
যেকোনো দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির প্রভাব পড়ে সব সেক্টরে। গত বছরে জুলাই অভ্যুত্থানের পর এর প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ ই-কমার্স সেক্টরে। এর সাথে রয়েছে বৈশ্বিক বাজারে ডলারের দামের অস্থিতিশীল অবস্থা। সব মিলিয়ে গত বছরের শেষের দিকে এসে মন্দা যাচ্ছে দেশের ই-কমার্সের বাজার। দেশীয় উদ্যোক্তাদের ব্যবসাও ভাল যাচ্ছে না। সময়ের পরিবর্তনে ই-কমার্সে বেচাকেনা বাড়লেও দুশ্চিন্তা কমছে না উদ্যোক্তাদের।
কথা বলে জানা গেছে, বেশ কিছু দিন মন্দা যাওয়ার পর ঈদুল ফিতরকে ঘিরে ই-কমার্স সেক্টর ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। এই খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিগত কয়েক মাসের তুলনায় ই-কমার্সে কেনাকাটার পরিমাণ বেড়েছে। তবে গত বছরের ঈদুল ফিতরের তুলনায় এবারের বেচাকেনা কম। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন ধরনের ছাড় ও অফার দিচ্ছেন ই-কমার্স উদ্যোক্তারা।
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে কেমন হচ্ছে বেচাকেনা জানতে চাইলে পিকাবুর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মরিন তালুকদার টেকওয়ার্ল্ড বাংলাদেশকে বলেন, ‘যেকোনো বড় উৎসব আসলে সেটিকে ঘিরে আমাদের বেচাকেনা স্বাভাবিক ভাবেই বাড়ে। ই-কমার্সের এটা স্বাভাবিক রীতি। তবে দেশের পরিস্থিতির প্রভাবও এই সেক্টরে পড়ে। সে দিক থেকে গত বছরের তুলনায় এবারে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বেচাকেনা কম। তবে ধীরে ধীরে বাড়ছে। এখনও সামনে বেশ কিছু দিন আছে। আশা করছি বিক্রির পরিমাণ বাড়বে।’
ফুডপ্যান্ডা বাংলাদেশের হেড অব পাবলিক অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস অফিসার জাহেদুল ইসলাম টেকওয়ার্ল্ড বাংলাদেশকে বলেন, ‘রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে সর্বোচ্চ ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড় দিচ্ছে প্যান্ডামার্ট। পাশাপাশি ভাউচার ব্যবহারের সুবিধা থাকায় ক্রেতারা তুলনামূলক সাশ্রয়ী দামে কেনাকাটা করতে পারছেন। প্যান্ডামার্টে খুব দ্রুত ডেলিভারি সুবিধা থাকায় গ্রাহকেরা ঘরে বসেই স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটা করতে পারছে ন৷ সামগ্রিকভাবে সুবিধা, বৈচিত্র্য ও মূল্য সাশ্রয়ের এই সমন্বয় রমজান মাসে ফুডপ্যান্ডার বিক্রিতে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি এনেছে।’
এই রমজানের পণ্য বিক্রির তুলনা করে দশীয় ই-কমার্স প্লাটফর্ম প্রিয়শপ.কমের সহ প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আশিকুল আলম খান টেকওয়ার্ল্ড বাংলাদেশকে বলেন, ‘ঈদ বাংলাদেশের খুচরা বাজারে সবচেয়ে বড় উৎসবমুখর সময়। আমাদের লক্ষ্য ছিল দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের সময়মতো পণ্য সরবরাহ ও আর্থিক সুবিধা পৌঁছে দিয়ে তাদের বিক্রি বাড়াতে সহায়তা করা। আমরা ঈদ উপলক্ষে সাপ্লাই চেইনে গতি আনার পাশাপাশি, বিভিন্ন অফার, ডিসকাউন্ট ও ক্রেডিট সুবিধা চালু করেছি। যার ফলে ঈদের সেলসে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। এবারের ঈদে প্রিয়শপ ১০৫,০০০-এর বেশি রিটেইলারকে ২৭৪টিরও বেশি ব্র্যান্ডের পণ্য সরবরাহ করেছে। এভাবে আমরা শুধু সেলস বাড়াইনি, বরং ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলোকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় এনে তাদের ব্যবসা এবং বাণিজ্যিক বিকাশে অবদান রেখেছি।’
দারাজ বাংলাদেশ থেকে গত পহেলা জানুয়ারি দেশীয় ব্র্যান্ড প্রাণ-আরএফএল গ্রুপে নতুন দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন খন্দকার তাসফিন আলম। তিনি বর্তমানে সেখানে এক্সিকিউটিভি ডিরেক্টর ট্রান্সফরমেশন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে খন্দকার তাসফিন আলম টেকওয়ার্ল্ড বাংলাদেশকে বলেন, ‘দেখুন, গত বছরে জুলাই অভ্যুত্থানের পর এর প্রভাব পড়েছে সব সেক্টরে। এর সাথে রয়েছে ডলারের দামের অস্থিতিশীল অবস্থা। সব মিলিয়ে মন্দা যাচ্ছিল দেশের ই-কমার্স সেক্টরও। তবে রমজানে আসন্ন ঈদুল ফিতরের কেনাকাটায় ই-কমার্সে গ্রাহকদের কেনাকাটার পরিমাণ অনেকটা বেড়েছে। এই সময়ে সর্বোচ্চ গ্রাহক আকর্ষণে নানা অফারও ঘোষণা করছে প্রতিষ্ঠানগুলো। জুলাই অভ্যুত্থানের পর গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বিক্রি বেড়েছে। আবার তিন মাসের তুলনায় রমজান মাসে সবচেয়ে বেশি বিক্রি বেড়েছে। তবে তবে গত বছরের ঈদুল ফিতরের কেনাকাটার সঙ্গে যদি তুলনা করা হয়, তাহলে বিক্রি কমেছে এর অর্ধেক। ঈদের এখন এক সপ্তাহ বাকি। এ সময়ে সবাই বোনাস পাবেন। কেনাকাটা করবেন। আমি মনে করি, এ কয়দিনে বিক্রির পরিমাণ আরও বাড়বে।’
ই-কমার্স বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত কয়েক বছরে ই-কমার্স শিল্পের উন্নতি হয়েছে। অনলাইন থেকে পছন্দের পণ্য কেনায় মানুষের মানসিকতায়ও পরিবর্তন এসেছে। প্রতিদিনকার জীবনে ব্যস্ততা বৃদ্ধির কারণে অনলাইন কেনাকাটার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে ই-কমার্স গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ব্যবসায়ীরা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে তাদের পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করতে উৎসাহিত হচ্ছে। তবে দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে দেশীয় ই-কমার্স প্লাটফর্মগুলোর বেচাকেনা কমেছে। আগের মতো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যেতে আরও সময় লাগবে।
উজ্জ্বল এ গমেজ
অধ্যাপক ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ আল মামুন। গবেষক ও ডিজিটাল হেলথ সিস্টেমের একজন বিশেষজ্ঞ। উদ্ভাবন...