২১ ঘন্টা আগে
২১ ঘন্টা আগে
১ দিন আগে
১ দিন আগে
ছবি: আনস্প্ল্যাশ
যেহেতু স্বয়ংচালিত গাড়ির উপস্থিতি বাড়ছে, রাইড-হেইলিং শিল্পের সামনে একটি মৌলিক রূপান্তরের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে
চালকের দিন কি তবে শেষের পথে? গাড়ি চালাতে আর কি ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রয়োজন হবে না? কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও চালকবিহীন যানবাহন প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতি এমন এক ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যেখানে মানুষের চালকের প্রয়োজন হয়তো একসময় আর থাকবে না।
স্বয়ংচালিত এসব গাড়িতে ব্যবহৃত এআই প্রযুক্তির মধ্যে রয়েছে কম্পিউটার ভিশন, সেন্সর ফিউশন, মেশিন লার্নিং ও ডিপ লার্নিং অ্যালগরিদম। গাড়িগুলো চারপাশের পরিবেশ বুঝতে ক্যামেরা, লাইডার ও রাডার ব্যবহার করে। এরপর এআই সিস্টেম পথচলা, যানবাহনের গতি, পথচারী ও প্রতিবন্ধকতা বিশ্লেষণ করে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেয়। মেশিন লার্নিং মডেলগুলো লাখ লাখ কিলোমিটারের ড্রাইভিং ডেটা বিশ্লেষণ করে আরও দক্ষ ও নিরাপদ হতে শেখে। এসব প্রযুক্তি মিলিয়ে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ, মানুষের মতো চিন্তাশীল ড্রাইভিং অভিজ্ঞতা তৈরি করে, যা ধীরে ধীরে চালকের বিকল্প হয়ে উঠছে।
আর ওয়েমো ও বাইদুর মতো বড় প্রতিষ্ঠানগুলো এই পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিচ্ছে, যারা বড় আকারে রোবোট্যাক্সি পরিষেবা চালু করে রাইড-হেইলিং মডেলকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে এবং গতানুগতিক পরিবহন কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা আরও বাড়িয়ে তুলছে।
অ্যালফাবেট ইনকরপোরেটেডের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান ওয়েমো বর্তমানে প্রতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো, লস অ্যাঞ্জেলেস, ফিনিক্স ও অস্টিন শহরে আড়াই লাখের বেশি রোবোট্যাক্সি রাইড পরিচালনা করছে। প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যে জাপানের টোকিওতে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে এবং ২০২৬ সালের মধ্যে আটলান্টা ও ওয়াশিংটন ডিসিতে কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনা করেছে।
অন্যদিকে, চীনের বাইদু তাদের অ্যাপোলো গো সেবার মাধ্যমে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত ৭০ লাখের বেশি রোবোট্যাক্সি রাইড সম্পন্ন করেছে। শুধু দ্বিতীয় প্রান্তিকে রাইডের সংখ্যা ছিল ৮ লাখ ৯৯ হাজারটি। উহানে এই পরিষেবা ২৪ ঘণ্টা চালু থাকে এবং এতে কোনো নিরাপত্তাকর্মী থাকে না। বর্তমানে বেইজিং ও শেনজেনসহ ১০টির বেশি শহরে এই সেবা চালু রয়েছে।
এই অগ্রগতির ফলে ট্র্যাডিশনাল রাইড-হেইলিং কোম্পানিগুলোও নতুন বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে। উবার সম্প্রতি মেই মোবিলিটির সঙ্গে অংশীদারত্ব করেছে, যারা ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার স্বয়ংচালিত গাড়ি চালু করতে যাচ্ছে। প্রথম পর্যায়ে আরলিংটন, টেক্সাসে সেবা শুরু হবে এবং ধীরে ধীরে চালকবিহীন পর্যায়ে যাওয়া হবে। মেই মোবিলিটি টয়োটা ও বিএমডব্লিউর বিনিয়োগে গঠিত এবং তারা লিফটের সঙ্গেও একটি স্বয়ংচালিত পরিষেবা চালু করতে যাচ্ছে আটলান্টায়।
টেসলা তাদের সাইবারক্যাব রোবোট্যাক্সি পরিষেবা ২০২৫ সালের মধ্যেই অস্টিনে চালু করতে যাচ্ছে এবং ২০২৬ সালে পূর্ণ উৎপাদন শুরু করবে। ওয়েমোও ব্যক্তিগত মালিকানাধীন গাড়িতে তাদের প্রযুক্তি সংযোজনের জন্য টয়োটার সঙ্গে অংশীদারিত্বের পরিকল্পনা করছে, যা রাইড-হেইলিং সেবার বাইরে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।
চীনের আরেক প্রতিষ্ঠান পনি ডট এআই তাদের স্বয়ংচালিত প্রযুক্তির উৎপাদন খরচ ৭০% কমিয়ে এনেছে, ফলে প্রতিটি গাড়ির খরচ কমে এসেছে প্রায় ৪১ হাজার ১৬৫ মার্কিন ডলারে। প্রতিষ্ঠানটি ২০২৫ সালের মধ্যে তাদের যানবাহনের সংখ্যা ৩০০ থেকে বাড়িয়ে ১০০০ করার পরিকল্পনা করেছে।
এই পরিবর্তনগুলো ইঙ্গিত দেয়, শহরাঞ্চলে ভবিষ্যতে চালকের প্রয়োজনীয়তা কমে আসবে। কোম্পানিগুলো নিরাপত্তা বৃদ্ধি, খরচ কমানো ও ব্যবহারকারীর চাহিদা পূরণে এআই ও স্বয়ংচালিত প্রযুক্তিতে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে। তবে নিয়ন্ত্রকের বাধা, জনসাধারণের গ্রহণযোগ্যতা ও প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা এখনও রয়ে গেছে।
যেহেতু স্বয়ংচালিত গাড়ির উপস্থিতি বাড়ছে, রাইড-হেইলিং শিল্পের সামনে একটি মৌলিক রূপান্তরের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। যারা এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে এবং কৌশলগত অংশীদারত্ব গড়ে তুলবে, তারাই ভবিষ্যতের এই গতিশীল পরিবহন খাতে নেতৃত্ব দিতে পারবে।
এআই প্রযুক্তির এই উত্থানে হয়তো লাখ লাখ চালকের জীবনে এক অনিশ্চয়তার ছায়া নেমে আসবে—যারা দিনের পর দিন স্টিয়ারিং হাতে রোদ, বৃষ্টি, ট্রাফিক আর ক্লান্তির সঙ্গে যুদ্ধ করেছে, তারা হঠাৎ করেই নিষ্প্রয়োজন হয়ে উঠবে। যেন জীবনের মানচিত্র থেকে এক পেশার নাম মুছে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।
তবু, অন্য এক প্রান্তে, এই একই প্রযুক্তি খুলে দিচ্ছে সম্ভাবনার নতুন দরজা—যে বৃদ্ধ একা বাড়ি থেকে বের হতে সাহস পেতেন না, বা যে ব্যক্তি হুইলচেয়ারে আবদ্ধ, তারাও হয়তো একদিন নিজের গাড়ি নিয়ে শহরের আলো ছুঁয়ে দেখতে পারবেন। এআই একই সঙ্গে জন্ম দিচ্ছে বিষাদ ও নীরব আশার আলো।
হয়তো কোনো এক রাতের শহর তখনও জেগে, ট্রাফিক লাইটের নিচে দাঁড়িয়ে আছে একটা গাড়ি, ভেতরে যাত্রী—কিন্তু স্টিয়ারিং হুইলে কেউ নেই। গাড়ির পাশ দিয়ে ফুটপাতে হেঁটে যাচ্ছেন একজন বেকার হয়ে যাওয়া চালক, যার হাত এখনও স্বাভাবিকভাবেই স্টিয়ারিংয়ের কল্পনায় বাঁক নেয়। তিনি থেমে যান, নীরবে ছলছল তাকিয়ে থাকেন। হঠাৎ কোনো ক্লাসিক জ্যাজ গান ফুরিয়ে যাওয়ার পর নিস্তব্ধতা নেমে আসে পুরো শহর জুড়ে।
মোহাম্মদ আমিনুল হাকিম বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরামের (বিআইজিএফ) চেয়ারপার্সন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি আইএসপিএবি'র সাবেক...