১৬ ঘন্টা আগে
১৭ ঘন্টা আগে
১৭ ঘন্টা আগে
ছবি: সংগৃহীত
এ মডেল ৩৬টি জেলার আরো ৫০টি ইউনিয়নে পিকেএসএফ এবং তার সহযোগী সংস্থা সবাই মিলে এটি স্কেলআপে আমাদের সাহায্য করে। এ মুহূর্তে বাংলাদেশের ৬৩টি ইউনিয়নে প্রায় পাঁচ লাখ পরিবারের ২০ লাখের বেশি মানুষ এ সেবা পাচ্ছেন।
উজ্জ্বল এ গমেজ
অধ্যাপক ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ আল মামুন। গবেষক ও ডিজিটাল হেলথ সিস্টেমের একজন বিশেষজ্ঞ। উদ্ভাবন করেছেন ক্লাউড বেজড মেডিকেল সিস্টেম ফর হেলথ মনিটরিং (সিমেড হেলথ) এবং বর্তমানে তত্ত্বাবধান করছেন পুরো প্রকল্পটি। ড. মামুন যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর পিএইচডি এবং কানাডার ইউনিভার্সিটি অব টরেন্টো থেকে পোস্ট ডক্টরাল ফেলোশীপ অর্জন করেন। বর্তমানে অধ্যাপনা করছেন বাংলাদেশের ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ)তে। যুক্ত আছেন পেশাভিত্তিক অনেক সংগঠনেও। তার আগ্রহের বিষয় হলো হেলথ সিস্টেম ডিজাইন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, হেলথ ইনফরমেটিকস অ্যান্ড টেলিমেডিসিন, মেডিকেল ডাটা অ্যানালিটিকস, এআই ইন হেলথ প্রভৃতি।
স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে কাজ করার লক্ষ্যে নিজ কর্মস্থল ইউআইইউতে প্রতিষ্ঠা করেছেন অ্যাডভান্সড ইন্টিলিজেন্ট মাল্টি ডিসিপ্লিনারি সিস্টেম ল্যাব (এইমস ল্যাব) ও ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ, ইনোভেশন, ইনকিউবেশন অ্যান্ড কমার্শিয়ালাইজেশন (আইরিক) ইউআইইউ। এখানে পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করছেন। স্বাস্থ্যসেবা, ডিজেবিলিটি ও শিক্ষা ক্ষেত্রের উপর নানান ধরনের গবেষণাও করছেন। সম্প্রতি, কিশোর-কিশোরীদের জন্য ‘সুস্বাস্থ্য ডট এআই’ নামে একটি জেনারেটিভ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ইঞ্জিন বা বাংলা মেডিকেল জিপিটি উদ্ভাবন করেছেন, যা যৌন, প্রজনন ও মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত প্রশ্নের রিয়েল টাইম ক্লিনিক্যালি ভ্যালিডেটেড উত্তর প্রদান করে।
সম্প্রতি তিনি টেকওয়ার্ল্ড বাংলাদেশের সঙ্গে মুখোমুখি হন। আলাপে উঠে আসে সিমেড হেলথ প্রকল্পের শুরু থেকে চিকিৎসাসেবায় এআইয়ের ব্যবহার ও স্বাস্থ্যসেবায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তি বাংলা মেডিকেল জিপিটির নানান দিক।
টেকওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ: আপনার হাত ধরে যাত্রা শুরু হয়েছে সিমেড হেলথ প্রকল্পের। এর শুরুর গল্পটা জানতে চাই।
ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ আল মামুন: কানাডা থেকে বাংলাদেশে ফিরে এসে একটা বিশ্বমানের রিসার্চ ল্যাব প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হই, যেখানে আন্তর্জাতিকমানের গবেষণা করা যায় এবং আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের উপকার করা যায়। সেই উদ্দেশ্য থেকেই ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে যোগদান করি। ২০১৪-এর ডিসেম্বরে আমরা ইউনিভার্সিটির ভিসি ড. রেজওয়ান খান ও প্রো ভিসি চৌধুরী মফিজুর রহমানের উৎসাহ ও সহযোগিতায় ল্যাবের কার্যক্রম শুরু করি। ইউনিভার্সিটি অব টরেন্টো এবং ইউনিভার্সিটি অব সাউদাম্পটন থাকা অবস্থায় আমার কিছু পূর্বের গবেষণা ছিল, সেগুলো দিয়েই এইমস ল্যাবের কার্যক্রম শুরু করি।
যেহেতু আমি স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে পড়াশোনা করেছি এবং স্বাস্থ্যখাতের অসঙ্গতি ও সমস্যাগুলোকে গবেষণা ও প্রযুক্তির মাধ্যমে কিভাবে সমাধান করা যায় এবং প্রযুক্তিনির্ভর প্রাথমিক ও প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবার মাধ্যমে কিভাবে আমরা স্বাস্থ্যখাতে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারি, এই স্বপ্ন নিয়ে কাজ শুরু করি। গবেষণা থেকে বাণিজ্যিকীকরণের (রিসার্চ টু কমার্সশিয়ালাইজেশন) মাধ্যমে মানুষ উপকৃত হবে এমন পণ্য বা সেবা কিভাবে উদ্ভাবন করা যায় এবং সেই উদ্ভাবন সফল বাণিজ্যিকীকরণের মাধ্যমে কিভাবে টেকসই করা যায়, সেই চিন্তার ধারাবাহিকতা থেকেই ২০১৬ সালে এইমস ল্যাবের গবেষণা থেকে পেটেন্ট ও বাণিজ্যিকীকরণের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে সিমেড হেলথ লিমিটেড। পরবর্তী সময়ে বাণিজ্যিকীকরণ হয় আইসিটি ডিভিশন এবং গ্রামীণফোন এক্সিলেটরের সহযোগিতায়। সংক্ষেপে বলা যায়, এটি বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের গবেষণার বাণিজ্যিকীকরণের একটি অন্যতম উদাহরণ। সিমেড হেলথের উদ্দেশ্য বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের জন্য একটি করে স্বাস্থ্য একাউন্ট ও ৪র্থ শিল্পবিপ্লব প্রযুক্তির মাধ্যমে হেলথ ইনক্লুসন নিশ্চিত করা। এটি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ আইওটি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সম্পন্ন ক্লাউড-ভিত্তিক ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা স্টার্টআপ।
টেকওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ: সিমেড কয়টি ব্যবসায়িক মডেল নিয়ে কাজ করে?
ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ আল মামুন: সিমেড মূলত, ‘সুস্বাস্থ্য’ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তিনটি ব্যবসায়িক মডেল নিয়ে কাজ করে। প্রথম মডেলটি জেনারেল প্র্যাকটিশনার বা জিপি মডেল। শহর ও গ্রামীণ এলাকার মানুষের জন্য দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে জেনারেল প্র্যাক্টিশনার (জিপি) মডেল একটি প্রতিরোধমূলক, প্রচারমূলক এবং প্রাথমিক ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা প্ল্যাটফর্ম। এটি স্বাস্থ্যসেবা দেয় এমন সরকারি, বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে বাস্তবায়ন করা হয়। মডেলটি ফোর আইআর প্রযুক্তি আইওটি ও এআই ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিরোধমূলক ও প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করে। প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীরা (এইচডব্লিউ) গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় আইওটি এবং এআইয়ের মাধ্যমে স্ক্রিনিং করে স্বাস্থ্য ঝুঁকি নির্ণয় করেন এবং প্রয়োজনে পরবর্তী স্তরের সেবাকেন্দ্রে রেফার করেন এবং ফলোআপ করেন।
দ্বিতীয়টি অফিস এবং ফ্যাক্টরিতে কর্মীর স্বাস্থ্যে সেবা ও স্বাস্থ্যকর কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত করার জন্য এন্টারপ্রাইজ ওয়েলনেস সমাধান। ডিজিটাল হেলথ কর্নার (ডিএইচসি) সলুউশনের মাধ্যমে কর্মীরা অফিস কিংবা ফ্যাক্টরিতে প্রাথমিক ও প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবা পেতে পারেন। প্রত্যেক কর্মীর জন্য থাকে একটি ডিজিটাল স্বাস্থ্য একাউন্ট। ডিজিটাল হেলথ কর্নার (ডিএইচসি) সল্যুশনসের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কর্মীর স্বাস্থ্যগত বিষয়ে অবগত থাকতে পারবে।
তৃতীয়টি স্মার্ট সুস্বাস্থ্যকর্মী (এস এস কে) মডেল বা সুস্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র, যা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ফার্মেসিতে দেওয়া একটি রিটেইল ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা সমাধান। দেশের ৬৫ শতাংশের বেশি মানুষ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ফার্মেসিতে গিয়ে ওষুধ কেনেন। ‘সুস্বাস্থ্য’ অ্যাপের মাধ্যমে, একজন স্বাস্থ্যকর্মী স্বাস্থ্যসেবা এজেন্ট অ্যাপ এবং স্মার্ট মেডিকেল ডিভাইসের সমন্বয়ে তার স্মার্টফোন ব্যবহার করে এলাকার সাধারণ মানুষকে সহজেই ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করতে পারেন। ডিজিটাল পদ্ধতির সহায়তায় ফার্মেসি থেকেই টেলিমেডিসিন পদ্ধতিতে চিকিৎসকের সঙ্গে রোগীর যোগাযোগের ব্যবস্থা করা হয়। চিকিৎসক রোগীর উপসর্গ শুনে ব্যবস্থাপত্র দেন, যা ডিজিটাল পদ্ধতিতেই ফার্মেসি এবং রোগীর কাছে পৌঁছে যায়। আমরা চাই প্রতিটি এলাকায় অন্তত একটা করে ফার্মেসি গড়ে উঠুক, যিনি হবেন ওই এলাকার মানুষের স্বাস্থ্যের অভিভাবক।
টেকওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ: আপনি বলেছেন প্রতিটি মানুষের একটি ডিজিটাল হেলথ অ্যাকাউন্ট থাকবে। এতে কী ধরনের সুবিধা থাকছে?
ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ আল মামুন: ২০০০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রচুর সেলফোন ইনক্লুশন হয়েছে। যার ফলে ঘরে ঘরে এখন সেলফোন। সেলফোন মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সহজতর করেছে, যোগাযোগের উন্নতি ঘটিয়েছে। একইভাবে ২০১০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে আমরা দেখেছি যে, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন হয়েছে। এ সেবার মাধ্যমে জনগণ টাকা পাঠানো থেকে শুরু করে অন্যান্য লেনদেন খুব সহজে করতে পারছে। যে মডেলটা নিয়ে কাজ করছি তাতে আমরা বলছি, ২০২১ থেকে ২০৩০ সাল আমাদের এসডিজি অর্জনের যে ১০ বছর আছে সেখানে হেলথ ইনক্লুশন নিশ্চিত করা জরুরি।
প্রতিটি মানুষের হেলথ অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে। সেই ডিজিটাল হেলথ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে নিয়মিত ব্যক্তির স্বাস্থ্য মনিটরিং হবে। আমাদের যেমন, একটা জাতীয় পরিচয়পত্র আছে, তেমনই প্রত্যেক নাগরিকের একটা ডিজিটাল স্বাস্থ্য একাউন্ট থাকবে। একজন নাগরিক যেখান থেকেই স্বাস্থ্যসেবা নিন না কেন, সব তথ্য ওই একাউন্টে বা হিসাবে সংরক্ষিত থাকবে। এতে দুটি লাভ হবে। প্রথমত, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পুরোনো স্বাস্থ্য তথ্য বিবেচনায় নিয়ে পরে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার কাজটি সহজ হবে। দ্বিতীয়ত, কোন এলাকায় কোন রোগের প্রকোপ বেশি, তা নির্ণয় করা যাবে। তাতে সরকারের পক্ষে স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিভিন্ন নীতিমালা তৈরি সহজ হবে।
স্বাস্থ্যকর্মী বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিভিন্ন হেলথ প্যারামিটার চেক করবেন, তার কোনো সমস্যা আছে কিনা সেটি নির্ণয় করতে পারবেন এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবেন। তার মানে এই হেলথ সিস্টেমে ঘরে বসেই প্রিভেনটিভ ও প্রাইমারি হেলথ কেয়ার, রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট, রিস্কের ওপর ভিত্তি করে তাকে পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য রেফারেলে সহায়ক হবে। এই পুরো কাজটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স এবং আইওটি প্রযুক্তির মাধ্যমেই হবে।
এখানে দুটো বিষয় রয়েছে। যেমন, হেলদি লিভিং, কীভাবে সুস্থ থাকা যায় এবং প্রিভেনশন, নিয়মিত মনিটরিং করে কীভাবে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া যায়। অন্যটি হলো অসুস্থ হলে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা। সেজন্য হাসপাতালের ওপিডি, আইপিডি যেখানে দরকার যেতে হবে। এ পুরো প্রসেস সহজ করার জন্য সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে একটা কম্প্রিহেনসিভ, সর্বজনীন মডেল তৈরি করছি। এর মাধ্যমে প্রতিটি মানুষকে স্বাস্থ্যসেবাটা দিতে পারব এবং তাদের উৎপাদনশীলতাও বাড়াতে পারব।
টেকওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ: এই স্বাস্থ্যসেবা মডেল নিয়ে কখনও কোনো পাইলটিং প্রকল্প করেছেন কি না?
ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ আল মামুন: ২০১৮ সালে আমরা এই মডেল নিয়ে পিকেএসএফ ও সজাগের সঙ্গে যৌথভাবে কার্যক্রম শুরু করি। প্রথমে ধামরাইয়ের সোমভাগ ইউনিয়নে শুরু করি। এই মডেলের অধীনে আমরা একটা ইউনিয়নে কাজ করেছি। সেখানে একজন চিকিৎসক ও দুজন প্যারামেডিক বা হেলথ অফিসার ও একজন প্যারামেডিকের অধীনে সাতজন করে হেলথ ভিজিটর ছিলেন। সেই হেলথ ভিজিটর আইওটি বেজড স্মার্টহেলথ কিট এবং এআই বেইসড স্মার্টফোন অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে দৈনিক ২০টি বাড়ি ভিজিট করেন। হেলথ চেকআপ করে স্বাস্থ্যসেবা এবং টেলিমেডিসিন সেবা দেন। প্রয়োজনবোধে হেলথ অফিসার জিপি চিকিৎসকের কাছে রেফার করেছেন। সেখানে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা, প্রাথমিক ল্যাব পরীক্ষা, ও ঔষধ দেওয়া হয়।
ওই ইউনিয়নের সাত হাজার পরিবারের ৩২ হাজার মানুষের সবার হেলথ অ্যাকাউন্ট তৈরি হয়েছে আমাদের প্লাটফর্ম ব্যবহার করে। বর্তমানে নিয়মিতভাবে তাদের চেকআপ হচ্ছে, ঝুঁকি নির্ণয় হচ্ছে। শুধু স্বাস্থ্য নয়, তাদের আর্থ-সামাজিক, জনমিতিক পরিবেশগত সব তথ্য পাচ্ছি আমরা। ব্যক্তি, পরিবার, পরিপার্শ্ব সব মিলিয়ে প্রায় ১০০টির মতো প্যারামিটার সংগ্রহ করা হয়।
এর মাধ্যমে আমরা দেখতে পারি, ওই ইউনিয়নে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে কোন রোগটি বেশি হচ্ছে, কোন সমস্যা বেশি হচ্ছে, তারা নিরাপদ পানি পান করে কি না, স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ব্যবহার করে কি না, তাদের আয়ক্ষমতা কেমন, তাদের ওষুধের খরচ কত প্রভৃতির একটা ব্যাপকভিত্তিক চিত্র আমরা নিয়ে আসছি। ২০১৯ সালে এসব তথ্য সংবলিত একটা প্রতিবেদন প্রকাশ করি আমরা। সবাই এটা পছন্দ করে। এরপর এ মডেল ৩৬টি জেলার আরো ৫০টি ইউনিয়নে পিকেএসএফ এবং তার সহযোগী সংস্থা সবাই মিলে এটি স্কেলআপে আমাদের সাহায্য করে। এ মুহূর্তে বাংলাদেশের ৬৩টি ইউনিয়নে প্রায় পাঁচ লাখ পরিবারের ২০ লাখের বেশি মানুষ এ সেবা পাচ্ছেন। আমরা এখান থেকে বসে পুরো কার্যক্রমটি দেখতে পারি। এছাড়াও আমরা ইউনিসেফের তত্ত্বাবধানে, পিএইচডি এবং নারীমৈত্রীর অংশীদারিত্বে, সিডার সহযোগিতায় দেশের ৪টি সিটি কর্পোরেশন একালায় ৬টি আরবান জিপি মডেলের মাধ্যমে প্রাথমিক ও প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করছি, যেটি আলো ক্লিনিক নামে পরিচিত। ইতোমধ্যে, আলো ক্লিনিকের মাধ্যমে ৫ লক্ষ ৩০ হাজার মানুষকে সেবা দেওয়া হয়েছে।
আমরা মনে করি, এ মডেলকে কিছুটা পরিমার্জিত করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা বিশেষ করে প্রিভেনটিভ ও প্রাইমারি কেয়ার নিশ্চিত করতে পারি। তখন আমরা সেকেন্ডারি ও টারশিয়ারির দিকে চিন্তা করতে পারব। আমরা দেখছি, পুরো প্যাকেজটিতে একটি পরিবার মাসে ১০০ টাকার বিনিময়ে স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারে। বিশ্বের যেকোনো দেশে এর চেয়ে সাশ্রয়ী মডেল আর নেই।
টেকওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ: এসব মডেলের চিকিৎসাসেবায় কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছেন কী?
ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ আল মামুন: বড় চ্যালেঞ্জ হলো, স্বাস্থ্য যে জীবনের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ সে বিষয়ে আমাদের জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হয়নি। এ জায়গায় আমরা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছি।
এছড়াও দেশের মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা খোঁজার এবং স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রবণতা সীমিত। প্রাথমিক ও প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যের পেছনে অর্থ খরচের অনীহা এবং স্বাস্থ্যসেবার প্রতি মানুষের মানসিকতা ও আচরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বাধা। আমরা মনে করি, এ মডেল নিয়ে আমরা যদি সরকারের সঙ্গে কাজ করতে পারি এবং ব্যাপকভাবে মানুষকে সচেতন করে তুলতে পারি, তাহলে আমাদের লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে। আমরা বিশ্বকে দেখাতে পারব ১০০ টাকা দিয়ে মানুষের কম্প্রিহেনসিভ প্রিভেন্টিভ এবং প্রাইমারি হেলথ কেয়ার দেয়া সম্ভব।
টেকওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ: আপনি দেশে প্রথম বাংলা মেডিকেল জিপিটি বানিছেন। এ বিষয়ে যদি কিছু বলতেন।
ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ আল মামুন: সুস্বাস্থ্যএআই কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রশ্নের ক্লিনিক্যালি স্বীকৃত উত্তর প্রদানের জন্য একটি এআই-ইঞ্জিন (বাংলা মেডিকেল জিপিটি), যা বিল অ্যান্ড মিলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের ‘গ্লোবাল গ্রান্ড চ্যালেঞ্জ- ক্যাটালাইজিং ইকুইটেবল আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স’ ও এআই সারস, আইডিআরসি কানাডা অনুদানে ডেভলপ করা হয়েছে।
বাংলাদেশে কিশোর-কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকালীন যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য, অধিকার এবং মানসিক স্বাস্থ্য (এসআরএমএইচ) বিষয়ক সমস্যাগুলো সমাজের ট্যাবু ও কুসংস্কারের কারণে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখা দেয়। এই প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করার জন্য সিমেড হেল্থ ‘সুস্বাস্থ্য.এআই: SuSastho.AI’ নামে একটি জেনারেটিভ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ইঞ্জিন উদ্ভাবন করেছে যাতে স্বাস্থ্যসেবাকে সবার হাতের নাগালে পৌঁছে দেওয়া যায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ‘স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা’ এর স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে সিমেড হেলথ এই সমাধানটি উদ্ভাবন করে, যা সুস্বাস্থ্য অ্যাপের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীদের যৌন, প্রজনন ও মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত প্রশ্নের রিয়েল টাইম ক্লিনিক্যালি ভ্যালিডেটেড উত্তর প্রদান করে।
সুস্বাস্থ্য.এআই একটি মাল্টি-লেয়ারড প্ল্যাটফর্ম যা যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য, অধিকার এবং মানসিক স্বাস্থ্যের শিক্ষা, স্ক্রীনিং, রেফারেল এবং ডেটা অ্যানালিটিক্সের জন্য ওয়েব, অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ব্যবহার করা যায়। অটোমেটেড স্পিচ রিকগনিশন (এএসআর) এবং টেক্সট টু স্পিচ (টিটিএস) প্রযুক্তির সমন্বয়ে এটি একটি চিকিৎসাগতভাবে প্রশিক্ষিত চ্যাটবট হিসেবে কাজ করে যা কিশোর-কিশোরীদের এসআরএমএইচ বিষয়ক তথ্য প্রদান করে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও সচেতনতা তৈরিতে সহায়তা করে, এবং সমস্যা শনাক্তকরণ ও ঝুঁকি মূল্যায়ন করে উপযুক্ত স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের সাথে সংযুক্ত করার পাশাপাশি প্রয়োজন অনুযায়ী টেলিমেডিসিন সেবা প্রদান করে। এই প্ল্যাটফর্ম ভবিষ্যতে নীতি-নির্ধারকদের স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে এবং কার্যকরভাবে রিসোর্স বরাদ্দ করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন কর্রবে।
টেকওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ: বাংলা মেডিকেল জিপিটি ইঞ্জিনটি নিয়ে আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?
ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ আল মামুন: প্রাথমিকভাবে আমরা একদল দক্ষ ও ডায়নামিক মেডিকেল ও এআই এক্সপার্ট টিম নিয়ে এটির যাত্রা শুরু করেছি। আমরা এটিকে নিয়ে আরও অনেক দূর যেতে চাই। বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিন যেসব তথ্য দেয়, তা অনেকসময় ভুল বা অপ্রসঙ্গিক। বাংলা মেডিকেল জিপিটি ক্লিনিক্যালি ভ্যালিডেটেড তথ্য দেয় যা তিন স্তরে ভ্যারিফাইড। বর্তমানে এটি শুধুমাত্র কিশোর-কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকালীন যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং মানসিক স্বাস্থ্য (এসআরএমএইচ) বিষয়ক সমস্যাগুলোর সমাধান দিচ্ছে। আমাদের পরিকল্পনা আছে আগামীতে এমন একটা এআই ইঞ্জিন তৈরি করার যেখানে পর্যায়ক্রমে সকল বয়সী মানুষ যেনো তাদের যেকোনো স্বাস্থ্য সমস্যার বিষয়ে সার্চ করলে ক্লিনিক্যালি ভ্যালিডেটেড উত্তর পেতে পারেন যা স্বাস্থ্য শিক্ষা ও সচেতনতা তৈরিতে সহায়তা করবে, এবং স্বাস্থ্য সমস্যা শনাক্তকরণ ও ঝুঁকি মূল্যায়ন করে উপযুক্ত স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের সাথে সংযুক্ত করবে। আমরা একদল ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার এখানে যুক্ত আছি। এখন সাংবাদিকদেরও আমাদের সাথে যুক্ত হবার আহ্বান জানাচ্ছি। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে এআইয়ের মাধ্যমে বিপ্লব ঘটাতে চাই।
উজ্জ্বল এ গমেজ
অধ্যাপক ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ আল মামুন। গবেষক ও ডিজিটাল হেলথ সিস্টেমের একজন বিশেষজ্ঞ। উদ্ভাবন...