মঙ্গলবার

ঢাকা, ৮ জুলাই ২০২৫

সর্বশেষ


সফটওয়্যার

এআই কোড লিখে দিলে কম্পিউটার বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ কী?

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৫, দুপুর ২:৪২

টেকওয়ার্ল্ড প্রতিবেদক

Card image

ছবি: পেকজেলস

অ্যানথ্রোপিকের মতো স্টার্টআপেও এখন আর জুনিয়র পর্যায়ের কোডার নিয়োগ দেওয়া হয় না। সেই জায়গা নিয়ে নিয়েছে এআই।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) কেবল কম্পিউটার প্রোগ্রামারদের কাজে সাহায্যই করে না, এখন নিজে নিজে কোডও লেখে। দ্য আটলান্টিকের প্রতিবেদন বলছে, মাইক্রোসফট ও অ্যালফাবেটের মতো বড় মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায় ২৫ শতাংশ কোড এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা লিখে থাকে।

সফটওয়্যার তৈরির সব পর্যায়ে এখন জেনারেটিভ টুল যুক্ত রয়েছে। এতে প্রোডাক্টিভিটি বেড়েছে ঠিকই, তবে নতুনদের কাজ নিয়ে নিচ্ছে কি না, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

কর্মসংস্থান নিয়ে করা প্রতিবেদনগুলোতে এখন সফটওয়্যার তৈরিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভূমিকার স্পষ্ট প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। দ্য আটলান্টিকের ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও গণিতবিষয়ক চাকরিতে ২২ থেকে ২৭ বছর বয়সীদের নিয়োগের হার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ৮ শতাংশ কমেছে। এর পেছনে যদিও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যাপক কর্মী ছাঁটাইয়ের প্রভাব আছে, তবে মূল ভূমিকা অটোমেশনের।

কোড লেখায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বিভিন্ন সময়ে স্বীকার করেছেন মাইক্রোসফট ও অ্যালফাবেটের মতো শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাহীরা। এমনকি অ্যানথ্রোপিকের মতো স্টার্টআপেও এখন আর জুনিয়র পর্যায়ের কোডার নিয়োগ দেওয়া হয় না। সেই জায়গা নিয়ে নিয়েছে এআই।

সবচেয়ে ঝুকিতে সফটওয়্যার-সংক্রান্ত কাজগুলো

ভয়টা কেবল ব্যবস্থাপক বা অ্যাকাডেমিকদের বেলায় নয়। পিউ রিসার্চ সেন্টারের ২০২৫ সালের এক জরিপে দেখা যায়, আমেরিকানদের ৪৭ শতাংশ মনে করে, সামনের বছরগুলোতে এআইয়ের কারণে যে পেশার মানুষ সবচেয়ে বেশি কাজ হারাবে, সফটওয়্যার প্রকৌশল সেগুলোর একটি। পরিমাণটা শিক্ষক, সাংবাদিক বা হিসাবরক্ষকের চেয়ে বেশি। যেখানে অটোমেশনের কারণে শ্রমজীবীরা সবচেয়ে বেশি কাজ হারাবে বলে ধারণা করা হতো, সেই ঝুঁকিটা এখন হাই-স্কিলড কর্মজীবীদের বেলাতেও প্রযোজ্য। বিশেষ করে প্রযুক্তি খাতে।

কম্পিউটার বিজ্ঞান নিয়ে পড়ায় অনীহা

প্রযুক্তি খাতের কর্মজীবীরা এআইয়ের প্রভাব নিয়ে যেমন দুশ্চিন্তায় আছে, তেমনই এর প্রভাব পড়েছে শিক্ষার্থীদের ওপরও। বিগত বছরগুলোতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কম্পিউটার বিজ্ঞান ছিল চাহিদার শীর্ষে। এখন সেই চাহিদায় ভাটা পড়েছে।

প্রিন্সটন বা স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিকে একসময় সিলিকন ভ্যালির পাইপলাইন মনে করা হতো। মানে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা বিশ্বের শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজ করে থাকে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কম্পিউটার বিজ্ঞানে শিক্ষার্থী ভর্তির হার কমে গিয়েছে। প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের পূর্বানুমান হলো, আগামী দুই বছরের মধ্যে বিষয়টিতে শিক্ষার্থী ভর্তির হার ২৫ শতাংশ কমে যাবে।

মেটা, মাইক্রোসফট ও গুগলের মতো বড় প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যাপক কর্মী ছাঁটাইয়ের পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা দুশ্চিন্তা দেখা গেছে। তারা এখন আর চোখ বন্ধ করে কম্পিউটার বিজ্ঞান বেছে নেয় না। পশ্চিমা দেশগুলোতে ভিসায় কড়াকড়ির ভূমিকাও আছে এতে।

ভবিষ্যৎ তাহলে কী?

এই পরিস্থিতে এখন নতুন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে—তাহলে কি ইউনিভার্সিটিগুলোর উচিত কম্পিউটার বিজ্ঞানে শিক্ষার্থী ভর্তি কমিয়ে দেওয়া? সে ক্ষেত্রে কি একাধিক মেজর নিয়ে পড়াশোনা ভালো? যেমন কম্পিউটার বিজ্ঞানের সঙ্গে নৈতিকতা, বায়োইনফরমেটিকস কিংবা ডিজাইন?

শিক্ষার্থীদের জন্যও একটি প্রশ্ন—এআই যদি আপনার কাজ নিয়ে নেয়, তবে কোন দক্ষতাটি আপনাকে অনন্য করে তুলতে পারে? এ ক্ষেত্রে কারিগরি দক্ষতার সঙ্গে সৃজনশীলতা, কৌশল আর মানবকেন্দ্রিক ডিজাইনের মেলবন্ধন ঘটানো যেতে পারে। পরবর্তী প্রজন্মের প্রকৌশলীরা হয়তো কোডের চেয়ে ‘সিস্টেমস থিংকিং’ নিয়ে বেশি ভাববে।

সত্যি বলতে কী, কম্পিউটার বিজ্ঞান এখনই বিলুপ্ত হচ্ছে না। বরং এর বিকাশ হচ্ছে। যেমন এআই জানা প্রকৌশলী, মেশিন লার্নিং বিশেষজ্ঞ এবং সাইবারনিরাপত্তা পেশাজীবীর চাহিদা কিন্তু কমেনি।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

সংবাদটি পঠিত হয়েছে: ৭২ বার

এ সম্পর্কিত আরও খবর