বৃহস্পতিবার

ঢাকা, ১০ অক্টোবর ২০২৪

সর্বশেষ


ট্রেন্ডিং

বন্যা দুর্গত এলাকায় ওষুধ ও ত্রাণ পাঠানোর ড্রোন বানালো ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী

প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, দুপুর ১১:১৪

টেকওয়ার্ল্ড প্রতিবেদক

Card image

ছবি: সংগৃহীত

কয়েক দিনের ভয়াবহ বন্যায় ভিটল ও ড্রোন প্রযুক্তির সহায়তায় ফেনীর প্রায় দেড়শ জন মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছে তরুণদের একটি দল।

ড্রোন ব্যবহার করে ক্রেতার কাছে পণ্য পাঠানোর কাজ করেছে অ্যামাজন। ড্রোন ব্যবহার করেই করোনাভাইরাস মহামারীতে যুক্তরাজ্যের দ্বীপে ওষুধ পাঠিয়েছে একটি সংস্থা। একই ঘটনা দেখা গেল বাংলাদেশের ফেনী জেলায় বন্যা আক্রান্ত বিচ্ছিন্ন জনপদে।

কয়েক দিনের ভয়াবহ বন্যায় ভিটল ও ড্রোন প্রযুক্তির সহায়তায় ফেনীর প্রায় দেড়শ জন মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছে তরুণদের একটি দল। রেপটরএক্স নামের এই প্রকল্প নিয়ে কাজ করেছেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির পাঁচ শিক্ষার্থী মো. শায়েখ, শওনক শাহরিয়ার, সৈয়দ জয়, ফিরোজ ওয়াদুদ ও মো. সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী।

দলটির সদস্য সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরি জানান, ড্রোনের সক্ষমতা নিয়ে গবেষণা করার সময় আমরা বুঝতে পারি, বর্তমান পরিস্থিতিতে এটি ত্রাণ বিতরণের কাজে সহায়ক হতে পারে। এর মধ্যে বন্যার ব্যাপকতা বাড়ছিল। আমরা বুঝতে পারি, ভেতরের দিকে নৌকা পৌঁছানো সম্ভব নয়, তখনই আমরা পাঁচ জন সিদ্ধান্ত নিই, এই পরিস্থিতিতে আমাদের ড্রোন বাংলাদেশের মানুষের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।

ড্রোনটির কাজের সক্ষম বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের ড্রোনটি ফিক্সড-উইং ভিটিওএল বা ভিটল ড্রোন, যা উলম্বভাবে উঠতে ও নামতে পারে। এই যান অনুভূমিকভাবে দীর্ঘ দূরত্ব পাড়ি দিতে সক্ষম। এটি উড্ডয়নের সময় বিমানের মতো স্থিতিশীলতা ও গতি বজায় রাখতে পারে, যার ফলে দীর্ঘ সময় ধরে বেশি পরিসরে কাজ করার সুযোগ মেলে।

এর মধ্যে লাইডার নামের একটি প্রযুক্তি রয়েছে, যা সঠিকভাবে বিভিন্ন এলাকা জরিপ করতে সহায়ক। এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারে, যার ফলে জিপিএস পদ্ধতি ব্যবহার করে বিভিন্ন গন্তব্যে পণ্য বা ত্রাণ বিতরণ করা যায়।

পুরো কার্যক্রম পরিচালনায় চ্যালেঞ্জ নিয়ে সাজ্জাদ জানান, এ প্রকল্পের প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল সবাইকে এক সুতায় বাঁধা। এ ছাড়া, পরিবহন ব্যবস্থাপনা, রোড ম্যাপ ঠিক করা, এ প্রকল্পের ফিল্ডওয়ার্ক বাস্তবায়ন করার মতো চ্যালেঞ্জও ছিল এতে। ওখানে গিয়ে আমরা সবাই ট্রাক আর সিএনজি’তেই ঘুমিয়েছি।  

তবে নৌকা দিয়ে বন্যাদুর্গত দুর্গম এলাকাগুলোয় যাওয়ার আগে সেনাবাহিনীর অনুমতি নিতে হয়েছে দলটিকে, যার মাধ্যমে সেইসব এলাকার লোকজনের কাছে তারা সফলভাবে ড্রোন দিয়ে ওষুধ ও শুকনো খাবার পৌঁছাতে পেরেছিলেন। আর লোকেশন ট্র্যাক করতে ভিটল দিয়ে ম্যাপিং করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে দলটি। এ পন্থা অবলম্বণ করে তারা দেড়শ প্যাকেট খাবার ও মেডিসিন প্যাক বিতরণ করতে পেরেছেন।

তাদের ব্যবহার করা ভিটলের (VTOL) ভার উত্তোলন সক্ষমতা ছিল ১০ কেজি ও ড্রোনের বেলায় তা আধা কেজি।

সাজ্জাদ আরও জানান, ত্রাণ পৌঁছাতে ভিটল ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি, যদিও এর ভর তোলার ক্ষমতা বেশি ছিল। ভিটল দেখে দুর্গত এলাকার লোকজন ভয় পেয়েছেন। সম্ভবত এর বড় আকারের কারণে।

দুর্গত এলাকায় কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে সাজ্জাদ বলেন, আমরা প্রথমে ছাগলনাইয়া গিয়ে সেখানে মসজিদে রাত কাটাই ও সকালে মিশন শুরু করি। আমরা গ্রামগুলোতে নজরদারি করি এবং দেখতে পাই, শহরের দিকে কিছু ত্রাণ পৌঁছালেও ভেতরের দুর্গম এলাকাগুলোতে তেমন কিছু পৌঁছায়নি। সেইসব এলাকায় আমরা ড্রোন দিয়ে ত্রাণ পৌঁছানোর চেষ্টা করি।

তিনি বলেন, আমরা সার্ভেইলেন্সের জন্য ভিটল ব্যবহার করি, যা দীর্ঘ পরিসরে বিভিন্ন এলাকা নজরদারি করতে সক্ষম। যেসব দুর্গম এলাকায় ত্রাণ পৌঁছানো প্রয়োজন ছিল, সেখানে আমরা ‘কোয়াড’ ড্রোন ব্যবহার করেছি, যা বিভিন্ন ছোট এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করতে পারে। আর, সিলোনিয়া ও দাগোনভূঞায় আমরা সফলভাবে ত্রাণ ড্রপ করি, যেখানে শুকনো খাবার, ওষুধ, এবং স্যানিটারি প্যাড ছিল।

ভিটিওএল বা ভিটল ড্রোনের সুবিধা কী?

>> উলম্বভাবে ওঠানামা করার ক্ষমতার পাশাপাশি এর রয়েছে বিমানের মতো গতি এবং দীর্ঘ পরিসরে উড্ডয়ন করার ক্ষমতা, যা বড় এলাকায় নজরদারি বা ত্রাণ বিতরণের জন্য উপযুক্ত।

>> এটি দুর্গম বা ছোট এলাকায়ও সহজে উড়তে এবং অবতরণ করতে পারে, যেখানে প্রচলিত বিমানের মতো রানওয়ের প্রয়োজন পড়ে।

>> স্বয়ংক্রিয় ফ্লাইট এবং মিশন পরিকল্পনার মাধ্যমে এটি নির্দিষ্ট গন্তব্যে সঠিকভাবে পণ্য বা ত্রাণ পৌঁছাতে সক্ষম।

>> এ ধরনের ড্রোন নজরদারি, মানচিত্র তৈরি, ত্রাণ বিতরণ, কৃষি কাজ, এবং নিরাপত্তার কাজগুলোতে বিশেষভাবে কার্যকরী।

সংবাদটি পঠিত হয়েছে: ৬৭ বার

এ সম্পর্কিত আরও খবর


Card image

বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ আজ, কখন হবে?

প্রকাশ: ২ অক্টোবর ২০২৪