১৬ ঘন্টা আগে
১৬ ঘন্টা আগে
১৬ ঘন্টা আগে
ছবি: সংগৃহীত
উৎক্ষেপণের আগেই বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ফ্রিকোয়েন্সি সমন্বয় করার প্রয়োজন থাকলেও এখনও তা করা হয়নি। এখন পর্যন্ত নিরীক্ষার আওতায় আসা কোনো অর্থবছরেই স্যাটেলাইটটির পরিচালনাকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল) লাভ করতে পারেনি বলে জানা গেছে।
২০১৮ সালে ৫৭তম দেশ হিসেবে স্যাটেলাইটের ক্লাবে যুক্ত হয় বাংলাদেশের নাম। প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে। সে সময় সরকারের পক্ষ থেকে স্যাটেলাইটটির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয়সহ নানা সুফলের কথা বলা হয়েছিল। তবে ঘটেছে উল্টো। বছর ঘুরতেই লোকসানের বোঝা ঘাড়ে নিয়ে ধুঁকতে শুরু করে স্যাটেলাইট দিয়ে আয়ের আশা।
এদিকে উৎক্ষেপণের আগেই বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ফ্রিকোয়েন্সি সমন্বয় করার প্রয়োজন থাকলেও এখনও তা করা হয়নি। এখন পর্যন্ত নিরীক্ষার আওতায় আসা কোনো অর্থবছরেই স্যাটেলাইটটির পরিচালনাকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল) লাভ করতে পারেনি বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের আয়ের চেয়ে ব্যয় অনেক বেশি। ফলে লোকসানে আছে স্যাটেলাইট কোম্পানিটি। বিএসসিএলের সর্বশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদন (২০২১-২২) অনুযায়ী, কোম্পানিটির মুনাফা ৮৫ কোটি টাকা। যদিও মুনাফার এই হিসাব করার ক্ষেত্রে স্যাটেলাইটের অবচয় বা ডেপ্রিসিয়েশন ধরা হয়নি। অবচয় ধরা হলে মুনাফার বদলে লোকসান দাঁড়াবে প্রায় ৬৬ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরেও প্রায় সমপরিমাণ লোকসান ছিল।
১৫ বছর মেয়াদের বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সম্পদমূল্য দেখানো হয়েছে ২ হাজার ৭৮৪ কোটি টাকা। এতে বছরে অবচয় (স্ট্রেইট লাইন মেথড) দাঁড়ায় প্রায় ১৮৬ কোটি টাকা। যদিও একই অর্থবছরে বিটিআরসির নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট বাবদ কোনো সম্পদ দেখানো হয়নি। আগের অর্থবছরগুলোতে দেখানো হয়েছিল। ২০২১-২২ অর্থবছরে বিটিআরসি স্যাটেলাইটের সম্পদের বিপরীতে অবচয় ঠিকই দেখিয়েছে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) প্রকল্পের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি এর মালিকানা হস্তান্তর করা হয় নতুন কোম্পানি বিএসসিএলের কাছে। তাদের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে (২০২১-২২) স্যাটেলাইটের সম্পদের বিপরীতে অবচয় দেখানো হয়নি।
স্যাটেলাইট থেকে আয় দেখিয়েছে বিএসসিএল। ফলে এর মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৮৫ কোটি টাকা। যদিও ১৮৬ কোটি টাকা অবচয় বিবেচনায় নিলে কোম্পানিটি ওই অর্থবছরে লোকসান করেছে (৬৬ কোটি টাকা)। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, কোম্পানির লাভ-লোকসানের হিসাব নিয়ে শুরু থেকেই লুকোচুরি করা হতো।
এদিকে, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের আয়-ব্যায়ের হিসাব খোঁজ করা হলে বিএসসিএল ২০২১-২২ অর্থবছরের নিরীক্ষা প্রতিবেদন পাঠিয়ে দেয়। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়, সমাপ্ত হওয়া ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরের নিরীক্ষা প্রতিবেদন এখনো তৈরি হয়নি।
বিএসসিএলের ২০২১-২২ অর্থবছরের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে দেখা যায়, মোট আয় হয়েছে ১৩০ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরে যা ছিল ১২৯ কোটি টাকার মতো। আয়ের প্রায় পুরোটা আসে দেশে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ও বিদেশি কিছু চ্যানেলের কাছে ব্যান্ডউইথড বিক্রি করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের অবচয় বিটিআরসি তার হিসাবে দেখাচ্ছে।
অন্যদিকে সেই অবচয় না দেখানোর কারণে বিএসসিএল লাভজনক কোম্পানি হিসেবে গণ্য হচ্ছে। যদিও স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে প্রকল্পের অর্থ ও দৈনন্দিন খরচ মিলিয়ে যে ব্যয় তা উঠছে না।
লোকসান বিষয়ে বিএসসিএলের সাবেক চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শাহজাহান মাহমুদ বলেন, এটা লোকসানের প্রকল্প না। যেভাবে এখন আয় হচ্ছে, তাতে আরেকটি স্যাটেলাইট করার জন্য সরকারের কাছে হাত পাততে হবে না।
তবে বিএসসিএলের হিসাব বলছে, বছরে তাদের যে আয় হয়, তা অপচয়ের টাকার পরিমাণের চেয়ে কম, অন্যান্য খরচ দূরে থাক। অবচয় না ধরে তারা মুনাফা দেখিয়ে সেই টাকা রিটেইন্ড আর্নিংস বা অবিতরণকৃত আয় হিসেবে দেখায়।
বিএসসিএলের মহাব্যবস্থাপক (বিক্রয় ও বিপণন) শাহ আহমেদুল কবির বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত অবচয়ের হিসাব বিটিআরসি ধরত। পরের অর্থবছর থেকে এটি স্যাটেলাইট কোম্পানির হিসাবে চলে এসেছে। তিনি দাবি করেন, বিএসসিএল লোকসান করে। তবে পরিমাণ কমে আসছে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্প নিয়ে বিটিআরসির প্রকল্প প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্যাটেলাইটির ৪০টি ট্রান্সপন্ডার রয়েছে। এর মধ্যে ২০টি বাংলাদেশের জন্য এবং ২০টি দেশের বাইরের জন্য ব্যবহার করা যাবে। বিএসসিএল বলছে, ৪০টির মতো টেলিভিশন চ্যানেল স্যাটেলাইটটির সেবা নেয়। বাংলাদেশে সম্প্রচারের ক্ষেত্রে ভারতীয় চারটি চ্যানেল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ব্যবহার করে। সেগুলো হলো স্টার, সনি, জি নেটওয়ার্ক ও কালারস টিভি।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের আওতার মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, আফগানিস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়া রয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের বছরে ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনে ট্রান্সপন্ডার বিক্রির জন্য চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু দেশ দুটির বাজার ধরা যায়নি।
উজ্জ্বল এ গমেজ
অধ্যাপক ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ আল মামুন। গবেষক ও ডিজিটাল হেলথ সিস্টেমের একজন বিশেষজ্ঞ। উদ্ভাবন...