ছবি: সংগৃহীত
মোবাইল সেবার মান উন্নয়নে ড্রাইভ টেস্টগুলো পরিচালিত হয় ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ জুনের মধ্যে। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক কমিশন বিটিআরসির নেতৃত্বে এগুলো রাজধানী ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকা, নারায়ণগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ এবং সাভার উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পরিচালিত হয়। ড্রাইভ টেস্টের জন্য জার্মানি থেকে কেনা হয় অত্যাধুনিক যন্ত্র। এর জন্য খরচ হয় ১৫ লাখ ইউরো।
সারা দেশের গ্রাহকদের উন্নত মোবাইল সেবা নিশ্চিত করতে ভয়েস কল ও ডেটা সেবার মান যাচাইয়ের জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) নেতৃত্বে সারা দেশে সব মোবাইল অপারেটরের যে ‘ড্রাইভ টেস্ট’ কার্যক্রম পরিচালিত হয় সেটি মোবাইল অপারেটরদের সন্তোষ্ট করতে পারেনি। অপারেটররা বলছেন, বিটিআরসি কৃর্তৃক পরিচালিত ড্রাইভ টেস্টের ফলাফলে মোবাইল নেটওয়ার্কের সঠিক কার্যকারিতা প্রতিফলিত হচ্ছে না। এটাকে আরও সঠিক করা সময়ের দাবি।
মোবাইল সেবার মান উন্নয়নে ড্রাইভ টেস্টগুলো পরিচালিত হয় ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ জুনের মধ্যে। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক কমিশন বিটিআরসির নেতৃত্বে এগুলো রাজধানী ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকা, নারায়ণগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ এবং সাভার উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পরিচালিত হয়। ড্রাইভ টেস্টের জন্য জার্মানি থেকে কেনা হয় অত্যাধুনিক যন্ত্র। এর জন্য খরচ হয় ১৫ লাখ ইউরো।
টেলিকম খাত বিশেষজ্ঞ ও পাবলিক পলিসি অ্যাডভোকেট আবু নাজাম এম তানভীর হোসেন বলেন, মোবাইলের কথা বলার সেবা মান বজায় রাখা একটি মৌলিক বিষয়, যা টেলিযোগাযোগ লাইসেন্সে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ২০১১ সাল থেকে লাইসেন্সধারীরা এই মানগুলোর জন্য পরামর্শ ও আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা করেছেন এবং সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনটি যদি সঠিক হয়, তাহলে এই লাইসেন্স গ্রহণের সময় করা প্রতিশ্রুতিগুলো রক্ষা করতে ব্যর্থতার একটি গুরুত্বপূর্ণ চিত্র তুলে ধরে।
জানা গেছে, আগস্ট মাসে রবির গ্রাহক সংখ্যা হয় ৫.৮ কোটি। অপারেটরটি সর্বোচ্চ পারফর্ম করেছে। তবে ৪০টির মধ্যে শুধুমাত্র চারটি অঞ্চলে পাঁচটি কি পারফরমেন্স ইনডিকেটরস সূচকে (কেপিআই) ব্যর্থ হয়েছে। দেশের টেলিকম খাতে শীর্ষ স্থানে রয়েছে গ্রামীণফোন। যার সাবস্ক্রাইবার ৮.৫ কোটি। এটিও ছয়টি কেপিআই-তে ব্যর্থ হয়েছে। বাংলালিংক ১৪টিতে এবং টেলিটক আশ্চর্যজনকভাবে ২৬টিতে ব্যর্থ হয়েছে।
ইন্টারনেট সেবার জন্য শুধুমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল অপারেটর কোম্পানি টেলিটক বিটিআরসির মানদণ্ড পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু রবি সবচেয়ে ভালো পারফর্ম করেছে। ঢাকা শহরে বাংলালিংকের গ্রাহক রয়েছে ৪.২ কোটি। অপারেটরটি ১০টি কেপিআইয়ের মধ্যে পাঁচটি পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। অপারেটরটির কল ড্রপের হার ঢাকা শহরে বিটিআরসির বেধে দেওয়া হারের তুলনায় বেশি ছিল। বিটিআরসির হার ২ শতাংশ। কিন্তু বাংলালিংকের কল ড্রপের হার ২.৫৯ শতাংশ।
কেরানীগঞ্জ উপজেলার মধ্যে সব অপারেটরের কল ড্রপের হার ২জি ভয়েস কলের জন্য বিটিআরসির ২ শতাংশের উপরে ছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ পারফর্ম করেছে বাংলালিংক। অপারেটরটির কল ড্রপের হার ছিল ৪.২৫ শতাংশ। তবে, ওই উপজেলার ৪ জি ভয়েস কলের জন্য শুধুমাত্র বাংলালিংক পরীক্ষায় পাস করেছে। রবি সবচেয়ে খারাপ পারফর্ম করেছে। অপারেটরটির কল ড্রপের হার ছিল ৩.৯৮ শতাংশ।
চারটি অপারেটরই সাভারে ২ জি ভয়েস কলের জন্য কল সেটআপের সময় ৭ সেকেন্ডের বিটিআরসির বেধে দেওয়যা সময় সীমা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। কেরানীগঞ্জে বাংলালিংক ও টেলিটকও ব্যর্থ হয়েছে। অন্যদিকে, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে টেলিটক নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি।
কল সেটআপ সফলতার হার ৯৭ শতাংশের কম হওয়া উচিত নয়। কেরানীগঞ্জে গ্রামীণফোন ছাড়া সব অপারেটরই ব্যর্থ হয়েছে। ২জি ভয়েস কলের জন্য ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জে শুধুমাত্র রবি কল সেটআপ সফলতার হার পূরণ করেছে।
মোবাইল অপারেটররা ২০২২ সালের মার্চ থেকে নির্ধারিত উচ্চ ব্যান্ডের স্পেকট্রাম সম্পূর্ণরূপে ব্যবহার না করার কারণে গ্রাহকরা তাদের আশানুরূপ মানসম্পূর্ণ মোবাইল সেবা পাচ্ছে না। অপরদিকে, অপারেটররা কম পরিমাণ ব্যান্ডউইথের ওপর নির্ভর করছে, যা অল্প স্টেশনের মাধ্যমে আরও বড় পরিসরে কভারেজ দেওয়ার চেষ্টা করছে।
উচ্চগতির বেশি পরিমাণে ব্যান্ডউইথ উন্নত ট্রান্সমিশন ক্ষমতা দিতে সক্ষম কিন্তু বেস স্টেশনগুলোর ঘনত্ব বেশি থাকে। বিটিআরসির একটি উপস্থাপনা অনুযায়ী, জুন মাসে বাংলালিংক ২ হাজার ৩০০ ব্যান্ডে ৪০ মেগাহার্জ স্পেকট্রাম কিনেছিল। কিন্তু শুধুমাত্র ৭.০৭ শতাংশ সাইটে স্পেকট্রাম ব্যবহার করেছে।
গ্রামীণফোন ও রবি ২ হাজার ৬০০ ব্যান্ডে ৬০ মেগাহার্জ স্পেকট্রাম কিনেছে। কিন্তু অপারেটর দুটি যথাক্রমে ১১.৯২ শতাংশ এবং ১৭.৭৬ শতাংশ সাইটে স্পেকট্রাম ব্যবহার করেছে। যদি অপারেটররা উচ্চ ব্যান্ডে ডেটা সার্ভিসের চাপ কমিয়ে দেয়, তাহলে নিম্ন ব্যান্ড স্পেকট্রাম মুক্ত হবে এবং উন্নত ২জি ভয়েস পরিষেবা প্রদান করতে সক্ষম হবে। শুধুমাত্র অপারেটররা সঠিক পরিমাণে স্পেকট্রাম ব্যবহার করার কারণে গ্রাহকদের খারাপ সিগন্যাল, ঘন ঘন কল ড্রপ এবং মিউট কলের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
গত দশ বছরে বিটিআরসি টেলিকম খাতের অবকাঠামোগত উন্নয়নে ও মোবাইল সেবার মান বৃদ্ধিতে বিভিন্ন কোম্পানিকে লাইসেন্স দেওয়ার মতো নানা ধরনের কাজ করেছে। তবুও, মোবাইল অপারেটরদের সেবার মান গ্রাহকদের প্রত্যাশার পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক কমিশন হিসেবে বিটিআরসির দায়িত্ব মোবাইল ব্যবহারকারীদের জন্য মানসম্পন্ন ও সন্তোষজনক সেবা এবং ট্যারিফ নিশ্চিত করা।
এ প্রসঙ্গে বিটিআরসির চেয়ারম্যান এমদাদ উল বারী বলেছেন, দেখুন আমি গত ১০ সেপ্টেম্বর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছি। এখনও ড্রাইভ টেস্টের ফলাফল দেখিনি। তবে মঙ্গলবার টেলিকম অপারেটরদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের সাথে মোবাইল সেবার মান নিয়ে আলোচনা করেছি।
তিনি বলেন, আমরা অপারেটরদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের মোবাইল সেবার মান নিশ্চিত করার পথ খুঁজে বের করতে বলেছি। আগামী ১০ অক্টোবর মোবাইল সেবার মান উন্নয়নে টেলিকম ইন্ডাস্ট্রির স্টেইক হোল্ডারদের সাথে বিটিআরসি একটি আলোচনা সভা করবে বলেও জানান তিনি।
রবি ও বাংলালিংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, বিটিআরসির নতুন অত্যাধুনিক যন্ত্র দ্বারা পরিচালিত ড্রাইভ টেস্টের ফলাফল তাদের নিজস্ব পরীক্ষার তুলনায় বিভিন্ন প্যারামিটারে ভিন্ন। অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (অ্যামটব)-এর মাধ্যমে অপারেটররা ড্রাইভ টেস্টের ফলাফল নিয়ে তাদের উদ্বেগ এবং মতামত প্রকাশ করেছে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি কৃর্তৃক পরিচালিত ড্রাইভ টেস্টের ফলাফলগুলো সঠিক চিত্র প্রদর্শন করছে না, বলেছেন রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম।
সাহেদ আলম বলেন, আমরা আশা রাখি এই ড্রাইভ টেস্টের ফলাফলের একটি গ্রহণযোগ্য সমাপ্তি হবে। রবি এই বছর ৩৫ শতাংশ সাইটে ২ হাজার ৬০০ মেগাহার্জ ব্যান্ড চালু করার পরিকল্পনা করেছে এবং প্রয়োজন ও ট্রাফিক পূর্বাভাসের ভিত্তিতে আরও সাইটে এটি চালু করতে থাকবে।
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার তাইমুর রহমান বলেন, বিটিআরসি কৃর্তৃক পরিচালিত ড্রাইভ টেস্টের ফলাফলে মোবাইল নেটওয়ার্কের সঠিক কার্যকারিতা প্রতিফলিত হচ্ছে না এবং এটি মোবাইল গ্রাহকদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে।
তিনি বলেন, বাংলালিক মোবাইল অপারেটর বর্তমানে ২ হাজার ৩০০ মেগাহার্জ ব্যান্ড সম্পূর্ণরূপে ব্যবহার করছে।
গ্রামীণফোন একটি বিবৃতিতে বলেছে, অ্যামটব, বিটিআরসি এবং ড্রাইভ টেস্ট সরবরাহকারীরা অপারেটরদের ড্রাইভ টেস্টের ফলাফল এবং টেলিকম নিয়ন্ত্রকের ফলাফলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য দেখা দেওয়ায় কেপিআইI নির্ধারণের জন্য একটি একক পদ্ধতিতে কাজ করছে।
২ হাজার ৬০০ মেগাহার্জ ব্যান্ড থেকে স্পেকট্রাম কম ব্যবহারের বিষয়ে গ্রামীণফোন বলেছে, ট্রাফিক এবং সেবার মান চাহিদার ভিত্তিতে ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এই ব্যান্ডে ৬০ মেগাহার্জ স্পেকট্রাম অধিগ্রহণ করা হয়েছে। চাহিদাগুলো ব্যবহারকারী আচরণ, ব্যবহার প্রফাইল, ব্যবহারকারীর ঘনত্ব এবং হ্যান্ডসেট প্রবেশের মতো বিভিন্ন ইকোসিস্টেমের উপাদানের দ্বারা নির্ধারিত হয়।
বিবৃতিতে যোগ করা হয়েছে, গ্রামীণফোন ট্রাফিক চাহিদা প্রায় রিয়েল-টাইমে পর্যবেক্ষণ করে এবং প্রয়োজন হলে সক্ষমতা সম্প্রসারণ বা নতুন স্পেকট্রাম স্থাপন শুরু করে।
উজ্জ্বল এ গমেজ
অধ্যাপক ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ আল মামুন। গবেষক ও ডিজিটাল হেলথ সিস্টেমের একজন বিশেষজ্ঞ। উদ্ভাবন...