মঙ্গলবার

ঢাকা, ১৫ অক্টোবর ২০২৪

সর্বশেষ


গ্যাজেট

বিবর্তনের ধারায় যেভাবে এলো আজকের আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্স

প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, দুপুর ১:৩২

টেকওয়ার্ল্ড প্রতিবেদক

Card image

ছবি: সংগৃহীত

প্রতিটি নতুন আইফোনে কী ধরনের নতুন উদ্ভাবন এসেছে, তা নিয়ে এ বছরের শুরুতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট ‘ফোন অ্যারিনা ডটকম’। এর মধ্যে রয়েছে শুরুর দিকের আইফোন থেকে সবচেয়ে সাম্প্রতিক ফোনগুলোও।

অ্যাপলের আইফোন সিরিজের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৭ সালে, যখন গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়ে রহস্যময় ‘থ্রি ইন ওয়ান’ ডিভাইসের ঘোষণা দিয়েছিলেন টেক জায়ান্ট কোম্পানিটির সে সময়ের সিইও স্টিভ জবস।

এতে প্রথমবারের মতো আইপডের মিউজিক প্লেয়ার, ইন্টারনেট সংযোগ এবং প্রচলিত ফোনের সমন্বয় দেখা গিয়েছিল, যা অনেকের কাছেই অ্যাপলের ‘অরিজিনাল আইফোন’। এর পর থেকে আইফোনে অনেক পরিবর্তন এলেও এর ভিত্তি একই ছিল, যার ফলে বছরের পর বছর ধরে নিজস্ব সাফল্য নিশ্চিতভাবে ধরে রাখতে পেরেছে আইফোন নির্মাতা কোম্পানিটি।

প্রতিটি নতুন আইফোনে কী ধরনের নতুন উদ্ভাবন এসেছে, তা নিয়ে এ বছরের শুরুতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট ‘ফোন অ্যারিনা ডটকম’। এর মধ্যে রয়েছে শুরুর দিকের আইফোন থেকে সবচেয়ে সাম্প্রতিক ফোনগুলোও। তাই অ্যাপলের আইফোন ইতিহাস একবার ঘেঁটে দেখা যাক-

প্রথম আইফোন (জুন ২০০৭)
“আইফোন তিনটি পণ্যকে সমন্বিত করে-বৈপ্লবিক মোবাইল ফোন, টাচ কন্ট্রোল’সহ ওয়াইডস্ক্রিন আইপড ও যুগান্তকারী ইন্টারনেট সংযোগের ডিভাইস, যেখানে ডেস্কটপ ধাঁচের ইমেইল, ওয়েব ব্রাউজিং, ম্যাপিং ও সার্চ করার সুবিধা রয়েছে, তাও একটি হালকা ওজনের ছোট হ্যান্ডহেল্ড ডিভাইসে।”

এ অরিজিনাল আইফোন থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই সকল আধুনিক স্মার্টফোন এসেছে। তবে, এর আগে স্মার্টফোনের অস্তিত্ব থাকলেও সেগুলো আইফোনের ধারে কাছেও ছিল না।

কারণ অ্যাপলের এ থ্রি-ইন-ওয়ান ডিভাইসে প্রথম অগ্রাধিকার ছিল ফোন, দ্বিতীয় আইপড ও তৃতীয় ‘কমিউনিকেটর’। তবে, বেশিরভাগ লোকজন সম্ভবত এর ‘কমিউনিকেটর’ হওয়ার বিষয়টিকেই এগিয়ে রাখবেন, যা আইফোন এবং অন্যান্য স্মার্টফোনকেও বিশেষ করে তুলেছে।

প্রথম আইফোনের ফিচারগুলো

>> ৩২০x৪৮০ পিক্সেলের রেজুলিউশন’সহ সাড়ে তিন ইঞ্চির ডিসপ্লে।

>> আইওএস, একটি মাল্টিটাচ ইন্টারফেইস, যা হাতের আঙ্গুল দিয়েই পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

>> ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি (২জি)’র সুবিধা, তাও নিজস্ব ইমেইল ক্লায়েন্ট এবং ওয়েব ব্রাউজার’সহ।

>> ভিডিও রেকর্ড করার সক্ষমতা ছাড়া দুই মেগাপিক্সেলের ফটো ক্যামেরা।

>> লাইট সেন্সর, প্রক্সিমিটি সেন্সর।

>> অনস্ক্রিন কিবোর্ড।

>> চার জিবি/ আট জিবি/ ১৬ জিবি স্টোরেজ মডেল।

>> ইউটিউব ও গুগল ম্যাপস অ্যাপ্লিকেশন, গুগল সার্চ।

>> আইটিউনস সুবিধা’সহ আইপড মিউজিক/ ভিডিও প্লেয়ার।

আইফোন ৩জি (জুলাই ২০০৮)
অ্যাপলের দ্বিতীয় প্রজন্মের হ্যান্ডসেট আইফোন ৩জি উন্মোচনের মাত্র একদিন আগে অর্থাৎ ২০০৮ সালের ১০ জুলাই নিজেদের আনুষ্ঠানিক ব্যবসায়িক যাত্রা শুরু করেছিল অ্যাপ স্টোর।

আইফোন ৩জি’তে মূল আইফোনের মতো আকারে একই স্ক্রিন রাখা হলেও এর মধ্যে নতুন, চকচকে প্লাস্টিকের নকশা এমনকি ৩জি সংযোগের সুবিধাও যোগ হয়, যার ফলে ওয়েব পেইজ লোড হতেও আগের চেয়ে কম সময় লাগে। আর ‘জিপিএস’ সুবিধাওয়ালা প্রথম ফোন ছিল এটি, যে স্যাটেলাইট যোগাযোগ ব্যবস্থা দিয়ে ব্যবহারকারী নিজের একেবারে সঠিক অবস্থান পাওয়ার পাশাপাশি আগের চেয়ে ভালো ম্যাপ ও ন্যাভিগেশনের অভিজ্ঞতা পেতেন।

আইফোন ৩জিএস (জুন ২০০৯)
আইফোন ৩জিএস এর আগের মডেল থেকে একেবারে আমূল পরিবর্তন নয়, বরং এটি ছোট একটি আপগ্রেড ছিল। তবে, এতে ফোনের গতি বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ৩জি সংযোগও আগের চেয়ে দ্রুত হয়েছিল।

৩জিএস-এর মধ্যে ‘এস’ বর্ণটির পূর্ণরূপ ছিল ‘স্পিড’, যেখানে ফোন আগের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এমনকি এতে ভিডিও রেকর্ডিংয়ের সুবিধাও যোগ হয়েছিল, যেখানে ফোনের তিন মেগাপিক্সেলের ক্যামেরায় এসেছিল ভিডিও মোড নামের ফিচার, যা দিয়ে ৪৮০ পিক্সেল রেজুলিউশনে ভিজিএ ফরম্যাটের ভিডিও রেকর্ড করা যেত।

এ ছাড়া, ডিজিটাল কম্পাসের সুবিধাওয়ালা প্রথম আইফোন ছিল এটি, যেখানে ম্যাপস অ্যাপ ব্যবহারকারী নিজের সঠিক অবস্থান ও দিক দেখার সুবিধা পেতেন।

আইফোন ৪ (জুন ২০১০)
অনেক গ্রাহকের কাছেই আইফোনের সর্বকালের সেরা নকশা ছিল আইফোন ৪। সেবারই প্রথম আইফোনের নকশায় বড় পরিবর্তন এসেছিল, যেখানে স্টিলের ফ্রেমের মধ্যে কাঁচের ব্যবহার দেখা গিয়েছিল।

এ ছাড়া, ‘রেটিনা’ ডিসপ্লে’র প্রথম আইফোনও ছিল এটি, যেটির ৬৪০x ৯৬০ পিক্সেলের নতুন রেজুলিউশন এতটাই সুক্ষ্ম ছিল যে অ্যাপল একে তুলনা করেছিল মানব রেটিনার প্রাকৃতিক সীমাবদ্ধতার সঙ্গে।

আইফোনে এত উচ্চ রেজুলিউশন এর আগে কখনোই আসেনি, যা নিজের অবস্থান ধরে রেখেছিল এর পরের দুই বছর পর্যন্তও।

আইফোন নিয়ে বড় স্ক্যান্ডালও ঘটেছিল, যা সে সময় ‘অ্যান্টেনা-গেইট’ নামে পরিচিতি পায়। এতে অভিযোগ ছিল, ফোনকে একটি সুনির্দিষ্ট উপায়ে ধরে রাখলে এর সেলুলার সংকেত হাত দিয়েই আটকে দেওয়া যায়।

আইফোন ৪-এ উদ্ভাবনের তালিকা অনেক দীর্ঘ। একবার দেখে নেওয়া যাক:

>> ‘রেটিনা’ ডিসপ্লে, সে সময়ের সর্বোচ্চ ফোন রেজুলিউশন।

>> সম্মুখদিকে তাক করা সেলফি ক্যামেরাওয়ালা প্রথম আইফোন।

>> নতুন পাঁচ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা, যা ৭২০ পিক্সেল পর্যন্ত এইচডি ভিডিও রেকর্ডিংয়ে সক্ষম।

>> আগের চেয়ে ছোট, মাইক্রো সিম কার্ড স্লট।

>> কাঁচ ও ধাতুর নতুন নকশা।

>>নয়েজ ক্যান্সেলেশনের সুবিধা দিতে সেকেন্ডারি মাইক।

আইফোন ৪এস (সেপ্টেম্বর ২০১১)
২০১১ সাল সম্ভবত অ্যাপলের জন্য সবচেয়ে কষ্টের ও বেদনাদায়ক বছর ছিল। কারণ ওই বছরের ৫ অক্টোবর আইফোন ৪এস উন্মোচনের মাত্র একদিন পরই মারা যান নিজের অনন্য দূরদর্শীতা দিয়ে অ্যাপলকে একাই কোম্পানির রূপ বদলে দেওয়া স্টিভ জবস। তবে, এর আগে তিনি অ্যাপলের লজিস্টিক্স বিভাগের সাবেক প্রধান টিম কুকের ওপর কোম্পানির সিইও’র দায়িত্ব দিয়ে যান, যিনি আইফোন ৪এস উন্মোচনেও উপস্থাপনা করেছিলেন।

এর বড় ফিচার ছিল স্মার্ট ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট সিরি। এর পাশাপাশি, অ্যালার্ম সেট করা ও ক্যালেন্ডারে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করার মতো ফিচারও এসেছিল এতে। তবে, ফোনের আকার আগের মতো সাড়ে তিন ইঞ্চিই ছিল, যা বিভিন্ন প্রতিযোগী অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের চেয়ে আকারে ছোট।

আইফোন ৫ (সেপ্টেম্বর ২০১২)
আইফোন ৫-এ নিজেদের আগের আইফোনগুলোর তুলনায় আকারে বড় ও লম্বা ডিসপ্লে এনেছিল অ্যাপল। তবে, অনেক ব্যবহারকারীর কাছেই তা বড় কোনো পরিবর্তন ছিল না। কারণ এর স্ক্রিনের আকার সাড়ে তিন ইঞ্চি থেকে বেড়ে চার ইঞ্চি হয়েছিল, যার সঙ্গে ১৬:৯ অ্যাসপেক্ট রেশিও’তে ভিডিও করার সুবিধাও ছিল, যেখানে আগের ফোনগুলোয় ভিডিও করা যেত ৩:২ অ্যাসপেক্ট রেশিও’তে।

এ ছাড়া, ফোনটি অ্যাপলের জন্য একটি যুগান্তকারী মুহুর্তও ছিল। কারণ এটিই প্রথম ফোন, যেখানে কোম্পানি কোয়ালকম থেকে বেরিয়ে ফোনে নিজস্ব চিপ বসিয়েছিল। আর এর নকশাও অনেক পাতলা ও হালকা ধাঁচের ছিল।

আইফোন ৫এস ও আইফোন ৫সি (সেপ্টেম্বর ২০১৩)
বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানি এরইমধ্যে আকারে বড় ফোন বাজারে আনতে থাকায় ২০১৩ সালের শেষ নাগাদ সবার নজর ছিল অ্যাপলের দিকে। সবার প্রত্যাশা ছিল কোম্পানিটি হয়ত আকারে বড় ফোন আনবে। তবে এর জন্য প্রস্তুত ছিল না অ্যাপল। সে সময় কোম্পানিটি আইফোন ৫এস উন্মোচন করে, যার আকার ও নকশা আগের ফোনের মতোই ছিল।

তবে আইফোন ৫এস ‘আইওএস’-এর জন্য নতুন যুগের সূচনা ছিল। এর আগে ২০১৩ সালের জুন মাসে ‘ডব্লিউডব্লিউডিসি’ আয়োজনে আইওএস’র নকশায় আমূল পরিবর্তন এনে ‘আইওএস ৭’ চালু করার ঘোষণা দিয়েছিল অ্যাপল।

সুপরিচিত নকশাবিদ জনি আইভের নকশা করা নতুন ইন্টারফেইসে আইওএস’র বিভিন্ন পুরোনো উপাদান সরিয়ে ফেলা হয়, যা তখন বড় এক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল।

এদিকে, আইফোন ৫সি’র কথাও ভুলে গেলে চলবে না, যেখানে রঙিন প্লাস্টিকে মোড়ানো আইফোনটি এতটাই সাশ্রয়ী ছিল যে তখন তা অনেকেই কিনেছিলেন।

আইফোন ৬ ও আইফোন ৬ প্লাস (সেপ্টেম্বর ২০১৪)
২০১৫ সালে প্রায় বছরখানেকের দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে বড় স্ক্রিনওয়ালা আইফোনের প্রথম ঝলক দেখায় অ্যাপল। তাও একটি নয় দুটি। চার দশমিক সাত ইঞ্চির আইফোন ৬ এবং সাড়ে পাঁচ ইঞ্চির আইফোন ৬ প্লাস।

গ্যালাক্সি এস ও গ্যালাক্সি নোটের কাছ থেকে বড় প্রতিযোগিতা পেলেও ফোন দুটি খইয়ের মতো বিক্রি হয়েছে। কারণ এদের নকশা তুলনামূলক ভাল ছিল, যেখানে ফোনের কাঠামোটিও পাতলা ও টেকসই অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে তৈরি।

সে সময় স্যামসাংয়ের সস্তা ধাঁচের প্লাস্টিকের নকশার তুলনায় এর নকশা অনন্য এক স্তরের বলে মনে হয়েছিল। তাই নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, বিভিন্ন ফ্ল্যাগশিপ ফোনে প্রিমিয়াম, ধাতব নকশা আনার ক্ষেত্রে আইফোন ৬ একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ ছিল।

ফোনগুলোতে আগের চেয়েও উন্নত ক্যামেরা এনেছিল অ্যাপল, যার মধ্যে ছিল দ্রুত অটো-ফোকাসিং ও ভিডিও’তে একটানা অটো-ফোকাস সমর্থনের মতো সুবিধাও।

এ ছাড়া, ফোনের স্টোরেজ অপশনেও পরিবর্তন এসেছিল। আইফোন ৬’র বেইজ মডেল তখনও ১৬ জিবি রাখা হলেও এর চেয়ে বেশি জায়গা ব্যবহার করতে চাওয়া ব্যবহারকারীদের জন্য ৬৪ জিবি ও ১২৮ জিবি ব্যবহার করার অপশনও ছিল এতে।

আইফোন ৬এস ও আইফোন ৬এস প্লাস (সেপ্টেম্বর ২০১৫)
২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো আইফোনের পুরুত্ব বাড়ায় অ্যাপল। এর প্রধান কারণ ছিল, ফোনে নতুন একটি ডিসপ্লে প্রযুক্তি যোগ করা, যার মাধ্যমে ফোনে টাচের তীব্রতা আঁচ করা যায়। সে সময় এই প্রযুক্তিকে ‘থ্রিডি টাচ’ বলে আখ্যা দিয়েছিল অ্যাপল, যা নিজস্ব অনেক অ্যাপেও চালু করেছিল কোম্পানিটি। এটি অনেকটা রাইট ক্লিকের মতো কাজ করে, যা অনেক অ্যাপে প্রবেশের বেলায় একটি সময় সাশ্রয়ী শর্টকাট হিসেবেও বিবেচিত।

আইফোন ৬এস ও ৬এস প্লাস প্রথম আইফোন ছিল, যার মধ্যে ৪কে ভিডিও রেকর্ড করা যেত। তবে এর বেশ কয়েক বছর আগেই অ্যান্ড্রয়েড ফোনগুলোয় এ সুবিধা চালু হয়েছিল। তবে, সেগুলোতে পাঁচ মিনিটে বেশি দীর্ঘ ভিডিও ক্লিপ রেকর্ড করা যেত না এমনকি ফোনে ৪কে ফুটেজ এডিট করার সক্ষমতাও ছিল না। আইফোন ৬এস দেরিতে এলেও তারা সমস্যাগুলোর সমাধান এনেছিল। উদাহরণ হিসেবে, ফোনে বিভিন্ন ভিডিও দেখতে খুবই বাস্তবিক হওয়ার পাশাপাশি উচ্চ বিট-রেটেও ভিডিও রেকর্ড করা যেত এতে। এ ছাড়া, অ্যাপল নিজস্ব ‘আইমুভি’ ফিচারটিতে আপডেট এনে সর্বোচ্চ দুটি পর্যন্ত ৪কে ভিডিও চ্যানেল দেখার সুবিধাও চালু করেছিল।

সে সময়, অনেক ল্যাপটপেও ৪কে ভিডিও এডিট করা চ্যালেঞ্জিং বিষয় ছিল, আর সে সক্ষমতাও এই ফোন ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

আইফোন ৬এস’র অন্যান্য নতুন ফিচারের মধ্যে ছিল ‘হেই সিরি’ সমর্থনের বিষয়টি, এ ‘হ্যান্ডস-ফ্রি’ ভয়েস কমান্ড থেকে ‘স্মার্ট আইফোন অ্যাসিস্ট্যান্ট’ ফিচারটি সক্রিয় করার সুবিধা মিলত।

আইফোন এসই (এপ্রিল ২০১৬)
আইফোন এসই’র প্রথম প্রজন্মে ফিরে এসেছিল ফোনের পুরোনো চার ইঞ্চির কাঠামো। তবে এর সবচেয়ে রোমাঞ্চকর বিষয়টি ছিল এর দাম। এটিই প্রথম সত্যিকারের সাশ্রয়ী আইফোন, যার ১৬ জিবি’র বেইজ মডেলের দাম ছিল কেবল চারশ ডলার।

তৎকালীন ফ্ল্যাগশিপ ৬এস ও এর পূর্বসূরি ফোনগুলোতে যে শক্তিশালী চিপ ছিল, এতেও ওই একই চিপ বসায় অ্যাপল। এমনকি এর প্রধান ক্যামেরার কার্যকারিতাও প্রায় একই। তবে, আইফোনের আকারে বড় অন্যান্য মডেলের তুলনায় এর ব্যাটারির আয়ু কমিয়ে দিয়েছিল কোম্পানিটি।

আইফোন ৭ ও ৭ প্লাস (সেপ্টেম্বর ২০১৬)
২০১৭ সালে আইফোনে সবচেয়ে বড় দুটি পরিবর্তন ছিল, ফোনে হেডফোন জ্যাক রাখার সুযোগ বন্ধ করে উভয় আইফোনেই পানি নিরোধি সুবিধা চালু করা। এ ‘সাহসী’ পদক্ষেপে অ্যাপল সাড়ে তিন মিলিমিটারের হেডফোন জ্যাক সমর্থন বন্ধ করে দেয়। এ নিয়ে ব্যপক আওয়াজ উঠলেও তা ফোনের বিক্রিতে কোনো প্রভাব ফেলেনি। এমনকি অ্যাপলের এর আগের সকল বিক্রির রেকর্ড ভেঙে দিয়েছিল আইফোন ৭। তবে, এ পদক্ষেপে ব্যবহারকারীদের একটি অংশ বিরক্তও হয়েছিল বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ফোন অ্যারিনা ডটকম।

আইফোন এক্স, আইফোন ৮ ও ৮ প্লাস (সেপ্টেম্বর ২০১৭)
২০১৭ সালে তিনটি নতুন আইফোন উন্মোচন করে রেকর্ড গড়েছিল অ্যাপল। তখন আইফোন ৭, ৬এস ও এসই সিরিজের বিক্রি অব্যাহত রেখে আইফোনের সবচেয়ে বড় পোর্টফোলিও তৈরি করেছিল কোম্পানিটি।

ওই বছরই প্রথমবারের মতো আইফোনের দাম এক হাজার ডলারে পৌঁছাতে দেখা যায়, যা আগের ‘প্লাস’ সাইজের সাড়ে সাতশ ডলার দামের আইফোনের চেয়ে অনেক বেশি।

আর আইফোন এক্স ভবিষ্যতের জন্য সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছিল, যেখানে এটিই প্রথম বেজেল ছাড়া ‘এজ-টু-এজ’ স্ক্রিনওয়ালা ফোন ছিল। এ ছাড়া, এটিই প্রথম ওলেড ডিসপ্লের আইফোন ছিল। তবে, এর ফলে ‘টাচ আইডি’ ফিঙ্গারপ্রিন্ট রিকগনিশন সুবিধাটি বন্ধ হয়ে যায় এবং ‘ফেইস আইডি’ নামের নতুন ব্যবস্থা চালু হয়। এই চেহারা শনাক্তকরণ ব্যবস্থাটি আগের চেয়েও নিরাপদ ছিল ও এটি ব্যবহার করাও তুলনামূলক সহজ ছিল।

আইফোন এক্সআর, এক্সএস ও এক্সএস ম্যাক্স (সেপ্টেম্বর ২০১৮)
২০১৮ সালেও অ্যাপল নিজেদের তিনটি নতুন ফোন আনার সংস্কৃতি অব্যাহত রাখে। তবে ভবিষ্যতের কথা বিবেচনায় নিয়ে এবার নতুন সব ফোনে ‘জেসচার ন্যাভিগেশন’ ও ‘ফেইস আইডি’ সিস্টেম চালু করে কোম্পানিটি।

আইফোন এক্সএস ও এক্সএক্স ম্যাক্সের দাম পূর্বসূরী আইফোন এক্স-এর মতোই এক হাজার ডলারের বেশি, যেগুলোতে পরবর্তী প্রজন্মের অ্যামোলেড ডিসপ্লেও ব্যবহার করা হয়। এর পাশাপাশি, উভয় ক্যামেরাতেই ডুয়াল ক্যামেরা সিস্টেম যোগ হয়, যার মধ্যে একটি প্রধান ও একটি ২X জুম টেলিফটো লেন্সও ছিল।

আইফোন ১১, ১১ প্রো ও ১১ প্রো ম্যাক্স (সেপ্টেম্বর ২০১৯)
২০১৯ সালে অ্যাপল আবারও তিনটি নতুন আইফোন বাজারে আনে। এর মধ্যে মূল পরিবর্তন এসেছিল ফোনের ক্যামেরায়, যেখানে তিন আইফোনেই যোগ হয়েছিল নতুন ‘আল্ট্রা-ওয়াইড’ ক্যামেরা, যা দিয়ে ব্যবহারকারী অবিশ্বাস্য ল্যান্ডস্কেপ এমনকি বিভিন্ন আটসাট জায়গাতেও ছবি তোলার সুবিধা পেতেন।

আইফোন ১১, ১১ প্রো ও ১১ প্রো ম্যাক্স তিনটি ফোনেই উচ্চমানের অ্যামোলেড স্ক্রিন বসিয়েছিল অ্যাপল। ২০১৯ সালে অ্যাপল ব্যবহারকারীদের বেশ কয়েক বছর ধরে অনুরোধ করা কয়েকটি সুবিধা এনেছিল। এর মধ্যে রয়েছে আকারে বড় ব্যাটারি, যার ফলে প্রো ও বিশেষ করে প্রো ম্যাক্স মডেলে ব্যাটারির আয়ু সর্বোচ্চ পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছায়।

ফোনগুলোর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ফিচার ছিল ‘নাইট মোড’। এ নতুন ক্যামেরা মোডে খুবই চতুরভাবে একটি ‘লং এক্সপোজার’-এর ছবিকে একাধিক ছবির সঙ্গে সমন্বিত করার সুযোগ মিলত। ফলে, কম আলোতেও ভালো ছবি ধারণ করা যেত।

আইফোন এসই ২০২০ (২০২০)
২০২০ সালের শুরুতে নিজস্ব ‘এসই’ ব্র্যান্ডিং আবারও ফিরিয়ে আনে অ্যাপল, যখন করোনা মহামারির কারণে অর্থনীতিতে বড় বিপর্যয় দেখা যায়। তবে, ফোনটির দাম চারশ ডলার হওয়ায় তা তাৎক্ষণিকভাবেই সাফল্য পায়। আর এতে নিজেদের সে সময়কার সবচেয়ে আধুনিক এ১৩ চিপ বসিয়েছিল অ্যাপল, যা একই দামের অন্যান্য অ্যান্ড্রয়েড ফোনের চেয়েও শক্তিশালী ছিল।

আইফোন ১২ মিনি, ১২, ১২ প্রো ও ১২ প্রো ম্যাক্স (অক্টোবর ২০২০)
২০২০ সালের শেষে প্রথমবারের মতো একই সময় চারটি নতুন আইফোন উন্মোচন করেছিল অ্যাপল। বেশ কয়েক বছর ধরে একই ধরনের নকশায় অনড় থাকার পর নতুন সিরিজের ফোনে পুরোপুরি নতুন নকশা আনে কোম্পানিটি। ফোনগুলোর বিভিন্ন পাশ চ্যাপ্টা হওয়ার পাশাপাশি এদের কাঠামোও অনেক পাতলা ছিল।

আইফোন ১২ সিরিজের চারটি ফোনেই ৫জি সংযোগ ছিল, যা যেকোনো আইফোনের বেলায় প্রথম এমন ঘটনা।

এ সিরিজের সবচেয়ে বিক্রি হওয়া ফোন ছিল আইফোন ১২। তবে, এর প্রো মডেলগুলোর বিক্রিও ভালো ছিল, যার মূল উদ্দীপক হিসেবে কাজ করেছে ফোনগুলোর টেলিফটো ক্যামেরা ও ‘র’ ক্যাপচারের মতো উন্নত ফিচার।

আইফোন ১৩ মিনি, ১৩, ১৩ প্রো ও ১৩ প্রো ম্যাক্স (সেপ্টেম্বর ২০২১)
বৈশ্বিক চিপ চাহিদায় ঘাটতি থাকার পরও অ্যাপল সময়মতোই আইফোন ১৩ সিরিজের চারটি মডেল একই সময়ে উন্মোচন করেছিল।

২০২১ সালে উন্মোচিত আইফোনগুলোয় নিশ্চিতভাবেই বড় আপগ্রেড ছিল এর ব্যাটারির আকার বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি। চার ফোনেই এর পূর্বসূরি ফোনগুলোর তুলনায় বড় ব্যাটারি এসেছে, যেখানে মিনি’তে বেড়েছে ১০ শতাংশ। আর প্রো ম্যাক্স মডেলে ব্যাটারির সক্ষমতা বেড়েছিল প্রায় ২০ শতাংশ।

আইফোন এসই ২০২২ (মার্চ ২০২২)
দ্বিতীয় প্রজন্মের এসই মডেল প্রকাশের দুই বছর পর অর্থাৎ ২০২২ সালে এই শ্রেণির নতুন ফোন উন্মোচন করে অ্যাপল। এ ফোন নিয়ে তেমন উচ্চাকাঙ্ক্ষা না থাকলেও এতে কিছু আপডেট এসেছিল। অবশেষে এর দামও কিছুটা বাড়িয়েছিল অ্যাপল, যেখানে ফোনগুলোর দাম শুরু ৪৩০ ডলার থেকে।

আইফোন ১৪, ১৪ প্লাস, ১৪ প্রো ও ১৪ প্রো ম্যাক্স (সেপ্টেম্বর ২০২২)
এবার নিজেদের আইফোন সিরিজে ‘মিনি’ মডেল বন্ধ করে এর বিপরীতে ছয় দশমিক সাত ইঞ্চির আইফোন ১৪ প্লাস মডেল উন্মোচন করে অ্যাপল।

ফলে, নতুন লাইনআপে আইফোন ১৪’র দাম আটশ ডলার, প্লাস মডেলের দাম নয়শ ডলার, প্রো মডেলের দাম এক হাজার ডলার ও প্রো ম্যাক্স মডেলের দাম এক হাজার একশ ডলার রাখে কোম্পানিটি।

আইফোন ১৫, ১৫ প্লাস, ১৫ প্রো ও ১৫ প্রো ম্যাক্স (সেপ্টেম্বর ২০২৩)
আইফোন ১৫, ১৫ প্লাস, ১৫ প্রো ও ১৫ প্রো ম্যাক্স উন্মোচিত হয়েছিল ২০২৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর।

এর মধ্যে প্রো ও প্রো ম্যাক্স মডেলে আপগ্রেডের তালিকা তুলনামূলক বড়। এতে নতুন ও টেকসই টাইটেনিয়ামের ফ্রেম বসানো হয়। এমনকি এগুলোর ওজনও আগের মডেলের তুলনায় অনেক কম। এমনকি ৫X জুম ক্যামেরাও এসেছিল, যা শুধু প্রো ম্যাক্স মডেলে ব্যবহার করা যেত। অন্যদিকে তুলনামূলক ছোট প্রো সংস্করণে এসেছিল ৩X জুম ক্যামেরা।

আইফোন এসই চতুর্থ প্রজন্ম ২০২৪ (২০২৪)
অ্যাপল ২০২৪ সালে নিজেদের পরবর্তী প্রজন্মের আইফোন এসই (চতুর্থ প্রজন্ম) উন্মোচন করতে পারে, এমনই খবর চাউর হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ফোনটি মার্চে উন্মোচনের কথা থাকলেও তা সম্ভবত আইফোন ১৬ সিরিজের সঙ্গে উন্মোচিত হবে।

মার্কিন বাণিজ্য প্রকাশনা ব্লুমবার্গের নতুন এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, অ্যাপলের বেশ কিছু পণ্য আপগ্রেড করা লাগবে, যেগুলোর স্টক ফুরিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে আইফোন এসই ৩ও। এর থেকে ইঙ্গিত মেলে, আইফোন ৪ এসই হয়ত শিগগিরই উন্মোচিত হবে।

বর্তমানে আইফোন এসই দুই বছরের আপডেট চক্রে আছে। তাই আশা করা হচ্ছে, এই বছর প্রচলিত আপগ্রেডের চেয়েও বড় আপগ্রেড আসবে ফোনটিতে।

আইফোন ১৬, ১৬ প্লাস, ১৬ প্রো ও ১৬ প্রো ম্যাক্স (সেপ্টেম্বর ২০২৪)
সোমবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার কুপারটিনোর অ্যাপল পার্কে ‌‘ইটস গ্লো টাইম’ নামে ইভেন্টে   নতুন মডেলের আইফোনের ঘোষণা দিলেন অ্যাপল ইনকরপোরেটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টিম কুক। আইফোনের নতুন চারটি মডেল হলো আইফোন ১৬, আইফোন ১৬ প্লাস, আইফোন ১৬ প্রো ও আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্স।

সংবাদটি পঠিত হয়েছে: ৬৯ বার

এ সম্পর্কিত আরও খবর


Card image

ইউগ্রিন রোবোটিক মোবাইলফোন চার্জার

প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২৪