সোমবার

ঢাকা, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সর্বশেষ


বিশেষ প্রতিবেদন

বেসিসের কাছে বিডিবিএল’র পাওনা ৩-৪ কোটি টাকা, শিগগিরই হচ্ছে সমাধান

প্রকাশ: ১২ জানুয়ারী ২০২৫, দুপুর ১০:৫৫

উজ্জ্বল এ গমেজ

Card image

ছবি: সংগৃহীত

বিডিবিএল ভবন কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে টাকা পাবে এ কথা সত্যি। এই টাকার হিসেব নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে বকেয়ার পরিমাণ যতটা বলা হচ্ছে, ততটা নয়, বরং পরিমাণটা ৩-৪ কোটি টাকার মতো হবে। আমরা এই টাকা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) কাছে ভবনের বিভিন্ন ফ্লোর ভাড়া, বিদ্যুৎ ও পানির বিল এবং গাড়ি পার্কিং বিল বাবদ বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক পিএলসির (বিডিবিএল) পাওনা জমেছে প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি টাকা বলে সম্প্রতি একটি অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, দীর্ঘ সময় ধরে এ টাকা পরিশোধের জন্য বেসিসকে একাধিকবার চিঠি দিয়েও কোনো সুরাহা পায়নি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক বিডিবিএল। এদিকে বিডিবিএল’র পাওনা টাকার বিষয়ে বেসিস কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে ভিন্ন কথা।

বেসিস কর্তৃপক্ষ বলছে, বিডিবিএল ভবন কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে টাকা পাবে এ কথা সত্যি। এই টাকার হিসেব নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে বকেয়ার পরিমাণ যতটা বলা হচ্ছে, ততটা নয়, বরং পরিমাণটা ৩-৪ কোটি টাকার মতো হবে। আমরা এই টাকা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি। ইতিমধ্যেই বিডিবিএল এবং বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষকে নিয়ে একটা সভার আয়োজন করা হয়েছে। সভায় বিষয়টি আলোচনা করে শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে টাকাটা দিয়ে দেওয়া হবে।

জানা গেছে, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক (এসটিপি) প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ম্যানেজিং অ্যাজেন্ট হিসেবে বেসিস এর পরিচালনার কাজে সহায়তা করে আসছে।বেসিস এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের তত্ত্বাবধানে এসটিপি ব্যবস্থাপনা কমিটি অপারেশনাল বিষয়গুলো দেখভাল করছে। দায়িত্ব হিসেবে বেসিস সাধারণত নিরাপত্তা, পরিষ্কার এবং পার্কিং স্থান ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে। এছাড়াও তারা ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে ভাড়া ও ইউটিলিটি বিল আদায়ের কাজটি করে আসছে।

উল্লেখ, বেসিস, বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এবং বিডিবিএলের মধ্যে স্বাক্ষরিত ত্রিপক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ী এই সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের নিয়ন্ত্রক হলো বাংলাদেশ হাই-টেকপার্ক কর্তৃপক্ষ (বিএইচটিপিএ), বাংলাদেশ উন্নয়ন ব্যাংক (বিডিবিএল) হলো এই ভবনের মালিক এবং বেসিস হলো এর ব্যবস্থাপনা অ্যাজেন্ট।  

এ প্রসঙ্গে বেসিস সহায়ক কমিটির চেয়ারম্যান ও ডিএনএস সফটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাফেল কবির টেকওয়ার্ল্ড বাংলাদেশকে বলেন, বিডিবিএল ভবনের বেসিসের এসটিপি প্রজেক্ট শুরু হয়েছে ২০০২ সালে। তখন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি), তৎকালীন শিল্প ঋণ সংস্থা (বিএসআরএস) এবং বর্তমান বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক পিএলসির (বিডিবিএল) ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে এই প্রজেক্ট শুরু হয়।পরবর্তীতে বিসিসির সাথে চুক্তি শেষে এর দায়িত্ব বাংলাদেশ হাইটেকপার্ক কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তৎকালীন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খানের উদ্ভাবনী চিন্তার ফসল হিসেবে সফটওয়্যার ইনকিউবেশন সেন্টার নামে এটির যাত্রা শুরু হয়। উদ্দেশ্য ছিল নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট সেবাসহ সরকারি সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে দেশের সফটওয়্যার ব্যবসায়ীদের, বিশেষ করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সহায়তা করা। যাতে তারা বাজার প্রতিযোগীতায় নিজেদেরকে দক্ষ করে তুলতে পারে। এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর প্রতিষ্ঠানগুলো এই ভবন ত্যাগ করে বাণিজ্যিকভাবে তারা তাদের নিজস্ব ব্যবসার কার্যক্রম শুরু করবে। অন্যদিকে, ইনকিউবেশনের খালি জায়গায় আসবে নতুন স্টার্টআপ। যদিও সে উদ্দেশ্য কতটা সফল হয়েছে  তা নিয়ে রয়েছে নানান বিতর্ক।  

বেসিসের কাছে বিডিবিএল’র প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি টাকা পাওয়ার অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে রাফেল কবির বলেন, ২০২০ সালে বৈর্শ্বিক মহামারি করোনার পর পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য কিছু ভাড়াটিয়া ভাড়া না দিয়েই চলে গেছে। ফলে বেশি কিছু ফ্লোর ফাঁকা হয়ে যায়। তখন বিডিবিএল ভবন কর্তৃপক্ষ ওই খালি ফ্লোরগুলোর ভাড়া কমানোর দাবি অগ্রাহ্য করে। পার্শ্ববর্তী অন্যান্য ভবনের তুলনায় অপেক্ষাকৃত বেশি ভাড়া এবং ব্যবসায়িক পরিবেশ অবনতির কারণে আগ্রহ হারাতে থাকে ভাড়াটিয়ারা। ৪০ বছরের পুরানো ভবনের পুরানো লিফটের অব্যবস্থাপনা, অপর্যাপ্ত জেনারেটর সাপোর্ট, গ্যারেজে গাড়ি পার্কিংয়ে সমস্যা, ঝড়, বৃষ্টির কারণে অফিসের জানালার ভাঙা গ্লাস, ইত্যাদি মেরামতের সমস্যাসহ বিভিন্ন ফ্লোরে  বাথরুম ব্যবহার অনুপযোগী। এসব বিষয় মেরামত করতেও নানান হয়রানি।  আমরা এগুলো মেরামত করার জন্য একাধিকবার  বিডিবিএল ভবন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। কিন্তু এসব সমস্যা সমাধানে কোন প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করে নাই। এ কারণে ক্রমান্বয়ে খালি হতে থাকে বিভিন্ন ফ্লোর। আমরা ফ্লোর ভাড়া দেওয়ার জন্য আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালন করি, কিন্তু ভাড়া বেশি হওয়ায় ব্যবসায়ী মহলে এই ভবনের প্রতি আগ্রহ কমতে থাকে। বিডিবিএল ভবন কর্তৃপক্ষ মনে করেন ভাড়াটিয়ারা চলে গেলে বা ফ্লোর খালি থাকলেও বেসিসকে সেগুলোর ভাড়া দিতে হবে। এবং সেই হিসেবে বকেয়ার হিসেবে লিপিবদ্ধ করেন। বেসিসের সাথে বিডিবিএল ভবন কর্তৃপক্ষের এসব বিষয়ে সেভাবে সরাসরি কোনো চুক্তিও করা হয়নি। তাই, হিসেবে অন্য ফ্লোরের ভাড়াকেও গণনায় এনে এবং বেসিসের সাথে অনাদায়যোগ্য বাড়িভাড়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হওয়ার পরেও বিডিবিএল ভবন কর্তৃপক্ষ প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি টাকার দাবি করছে।

গত মেয়াদের কার্যনির্বাহী কমিটির আলোচনা সভার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে রাফেল কবির বলেন, এসব বিষয়ে বিডিবিএল’র সঙ্গে গত মেয়াদের কার্যনির্বাহী কমিটি একটা আলোচনা সভা করেছিল, যেখানে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হয়েছে ভবনের যে জায়গাগুলো খালি হবে কিন্তু পুনরায় ভাড়া না হলে, সেই ফ্লোরের ভাড়া বেসিসকে দিতে হবে না। এবং যারা ভাড়া না দিয়ে চলে যাবে, সেই অনাদায়ী ভাড়া আদায়ে বেসিস সহযোগিতা করবে, কিন্তু বিফল হলে, তার দায় ভার বেসিসের নয়। যদি বেসিস ভাড়া তুলতে পারে, তাহলে ভবন কর্তৃপক্ষকে দিবে। বর্তমানে বেসিস পুরো বিডিবিএল ভবন থেকে যে ভাড়াটা পাচ্ছে সেটা মিলিয়ে প্রায় ৩-৪ কোটি টাকার মতো হয়। সে টাকাটা আমাদের অ্যাকাউন্টে আছে। আমরা পরিশোধ করার জন্য প্রস্তুত আছি। এটা দিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা ইতিমধ্যে  বিডিবিএল ভবন কর্তৃপক্ষের সাথে একটা সভার আয়োজন করেছি। কিন্তু সভার সময়ের সমন্বয়ের অভাবে সভাটি আগামী ১৫-১৬ জানুয়ারির দিকে হবে। আশা করছি, সভায় আলোচনার মাধ্যমে আমরা একটা স্থায়ী সমাধানের দিকে যেতে পারবো। বিডিবিএল আইনগতভাবে যে টাকা পায় সেটা আমরা অবশ্যই দিয়ে দিবো।

এ প্রসঙ্গে বিডিবিএল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জসিম উদ্দিন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘বকেয়ার বিষয়টি জানিয়ে বেসিসকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। দুই পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে শিগগিরই সুরাহা হবে।’

প্রসঙ্গত, রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক পিএলসির নিজস্ব ভবনের পশ্চিমাংশে লেভেল ৩ থেকে ৯ পর্যন্ত এবং লেভেল ১১-তে মোট ৬৮ হাজার ৫৬৩ বর্গফুট ফ্লোর স্পেস এবং ভবনের বেজমেন্টে ২৫টি কার পার্কিংয়ের জায়গা বরাদ্দ নিয়েছিল বেসিস।
 

সংবাদটি পঠিত হয়েছে: ৪৭৫ বার

এ সম্পর্কিত আরও খবর