রবিবার

ঢাকা, ১৬ মার্চ ২০২৫

সর্বশেষ


টেলিকম

২৫ পয়সা কলরেটে ফিরছে সিটিসেল

প্রকাশ: ৯ নভেম্বর ২০২৪, দুপুর ১০:৩৬

টেকওয়ার্ল্ড প্রতিবেদক

Card image

ছবি: সংগৃহীত

কোম্পানির কাছে সরকারের পাওনা ছিল প্রায় ৪৭৭ কোটি টাকা। তবে পরবর্তীতে সিটিসেল ২৪৪ কোটি টাকা পরিশোধ করে এবং তাদের বকেয়া দাঁড়ায় ২৩৩ কোটি টাকা। পরে একটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, সিটিসেলকে ১০ মেগা হার্জ তরঙ্গ বরাদ্দ দেয়ার কথা ছিল, কিন্তু সিটিসেলকে মাত্র ৮ দশমিক ৮২ মেগা হার্জ তরঙ্গ বরাদ্দ করা হয়েছে। সে কারণে সরকারের কাছে সিটিসেলের বাকি পাওনা কমে এসে দাঁড়ায় ১২৮ কোটি টাকায়।

বাংলাদেশের প্রথম সিডিএমএ প্রযুক্তি ব্যবহারকারী মোবাইলফোন অপারেটর সিটিসেল আবারো সাশ্রয়ী কলরেটের মাধ্যমে দেশের টেলিকম বাজারে ফিরে আসছে।

সম্প্রতি রাজধানীর মহাখালীতে সিটিসেলের প্রধান কার্যালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে নতুন করে কার্যক্রম শুরু করার মাধ্যমে গ্রাহকদের আরো সাশ্রয়ী কলরেটের সুযোগ দিতে প্রস্তুত হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

১৯৮৯ সালে বিটিআরসি থেকে মোবাইলফোন সেবা চালুর অনুমতি পায় বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড (বিটিসিএল)। পরবর্তী সময়ে ১৯৯০ সালে হংকং ভিত্তিক হাচিসন টেলিকমিউনিকেশন লিমিটেড এই কোম্পানিতে বিনিয়োগ করলে নাম পরিবর্তন হয়ে যায় হাচিসন বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড (এইচবিটিএল)। ১৯৯৩ সালে এর মালিকানায় আরো পরিবর্তন আসে এবং প্যাসিফিক মটরস ও ফারইস্ট টেলিকম সিটিসেলের শেয়ার কিনে নেয়। এরপরই কোম্পানির নাম পরিবর্তন হয়ে সিটিসেল হিসেবে পরিচিতি পায়। ২০০৪ সালে সিঙ্গাপুরের সিংটেল গ্রুপ সিটিসেলে বিনিয়োগ করে।

তবে সিটিসেলের পথচলা সহজ ছিল না। ২০০৭ সালে সিটিসেল তাদের নতুন লোগো উন্মোচন করে, কিন্তু গ্রাহক সংখ্যায় পিছিয়ে পড়ে। ২০১৬ সালে, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সরকারের সিদ্ধান্তে সিটিসেলের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় এবং তার লাইসেন্স বাতিল করা হয়। ২০১৬ সালের ২০ অক্টোবর বিটিআরসি সিটিসেলের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়, যেটি পরে ৩ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আদেশে সাময়িকভাবে পুনরায় চালু করা হয়েছিল। তবে ৬ নভেম্বর ফের বন্ধ হয়ে যায়। ২০২৩ সালে চূড়ান্তভাবে সিটিসেলের লাইসেন্স বাতিল হয়।

সিটিসেলের বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বিটিআরসির এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কোম্পানির কাছে সরকারের পাওনা ছিল প্রায় ৪৭৭ কোটি টাকা। তবে পরবর্তীতে সিটিসেল ২৪৪ কোটি টাকা পরিশোধ করে এবং তাদের বকেয়া দাঁড়ায় ২৩৩ কোটি টাকা। পরে একটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, সিটিসেলকে ১০ মেগা হার্জ তরঙ্গ বরাদ্দ দেয়ার কথা ছিল, কিন্তু সিটিসেলকে মাত্র ৮ দশমিক ৮২ মেগা হার্জ তরঙ্গ বরাদ্দ করা হয়েছে। সে কারণে সরকারের কাছে সিটিসেলের বাকি পাওনা কমে এসে দাঁড়ায় ১২৮ কোটি টাকায়।

গত ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) কর্তৃপক্ষকে একটি চিঠি পাঠিয়ে সিটিসেল তাদের অপারেটিং এবং রেডিও ইকুইপমেন্ট লাইসেন্স দুটি ফেরত চেয়েছে। চিঠিতে সিটিসেল দাবি করেছে যে, রাজনৈতিক কারণে তাদের তরঙ্গ স্থগিত করা হয়েছিল এবং তারা সাবেক টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমকে দায়ী করেছে।

সিটিসেল আরো জানায়, ২০১৬ সাল থেকে তাদের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় তারা প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এছাড়া, ৮ বছর ধরে ব্যবসা বন্ধ থাকার কারণে সরকারের প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়নি এবং সরকারের ৪৩০ কোটি টাকা কর ও ফি থেকে বঞ্চিত হয়েছে। সিটিসেল এখন বিটিআরসি থেকে তাদের লাইসেন্স বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার পাশাপাশি প্রযুক্তি নিরপেক্ষ লাইসেন্সের আবেদন করেছে, যার মধ্যে ফাইভজি সেবা অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

সিটিসেলের চিফ স্ট্রেটিজিক অ্যাডভাইজার মেহবুব চৌধুরী বলেন, আমরা কোন কিছু আইনের বাইরে গিয়ে কাজ করিনি। আমাদের ফ্রিকুয়েন্সি ১০ মেগা হার্জ পাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু বাস্তবে ৮ দশমিক ৮২ মেগা হার্জ দেওয়া হয়। সিটিসেল সরকারকে ১০ মেগা হার্জের জন্য যথাযথ অর্থ পরিশোধ করেছে, কিন্তু তারপরও আমরা কম ফ্রিকুয়েন্সি পেয়েছি।

এ বিষয়ে সিটিসেলের হেড অব ট্রেজারি মাকসুদা হাবিব জানান, ২০১৬ সাল থেকে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে সিটিসেল, এবং এর ফলে কোম্পানিটির ব্যান্ড ভ্যালু ক্ষুণ্ণ হয়েছে। এর পাশাপাশি প্রায় ৫ লাখ মানুষ সিটিসেলের বন্ধ হওয়া কার্যক্রমের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী জানিয়েছেন, সিটিসেল তাদের আবেদন পাঠিয়েছে এবং তারা শীঘ্রই কোম্পানির সাথে আলোচনা করবে। এরপর আবেদন পর্যালোচনা করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সংবাদটি পঠিত হয়েছে: ১১০ বার

এ সম্পর্কিত আরও খবর