৯ ঘন্টা আগে
১০ ঘন্টা আগে
ছবি: টেকওয়ার্ল্ড
এখন পর্যন্ত আমাদের পেনিট্রেশন মাত্র ১০%। আমরা বলতেছি ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত করবো। সেটা করতে গেলে তো ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পেনিট্রেশনকে ৬০% এর কাছাকাছি নিয়ে যেতে হবে। এটা যদি নিয়ে যাওয়া সম্ভব না হয় তাহলে সরকার যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার রূপকল্প ঘোষণা করেছে, সেটা বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
সময়ের পালা-বদলে বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল যুগ পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৬ সালের পর স্বল্পোন্নত আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি তথ্যপ্রযুক্তি খাত নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সরকারের রূপকল্প ২০৪১ সাল নাগাদ স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের নেপথ্যের অন্যতম নায়ক হিসেবে ভূমিকা পালন করছে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেক্টর। কিন্তু এই সেক্টর আজ নানাভাবে অবহেলিত। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট আপারেটদের ঘাড়ে ভ্যাট, ট্যাক্সের করবোঝাটা চাপানো রয়েছে। তাঁদের ঘাড় থেকে যতদিন না এই করবোঝাটা নামানো সম্ভব হবে, ততদিন স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে নানা বাধার মুখে পড়তে হবে।
সম্প্রতি টেকওয়ার্ল্ড বাংলাদেশের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট আপারেটরদের বাণিজ্যিক সংগঠন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি)-এর সভাপতি মো. ইমদাদুল হক। আলাপে উঠে এসেছে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেটে আইসটি সেক্টর, বিশেষ করে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেক্টরের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দীর্ঘ আলাপের চুম্বক অংশ টেকওয়ার্ল্ড বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য এখানে তুলে ধরা হলো।
টেকওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ: ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেক্টর উন্নয়নে সংগঠনের পক্ষ থেকে কেমন বাজেট প্রত্যাশা করেন?
মো. ইমদাদুল হক: সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা হলো, আমরা যাতে সংগঠনের প্রত্যেকজন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট আপারেটর সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে সারাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সার্ভিসটা পৌঁছে দিতে পারি। এই ধরনের একটা ইতবাচক, সহনীয় ও সময়োপযোগী বাজেট প্রত্যাশা করছি। এখন সারাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট আপারেটদের ঘাড়ে ভ্যাট, ট্যাক্সের করবোঝা রয়েছে। এর জন্য ছোট ছোট উদ্যোক্তারা ব্যবসায় ঝুঁকি নিয়ে ইনভেস্ট করতে ভয় পায়। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট আপারেটদের ঘাড় থেকে ভ্যাট, ট্যাক্সের করবোঝাটা নামানো হলে আমরা সারাদেশের মানুষকে মানসম্পন্ন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সার্ভিস দিতে পারবো। তাহলে সরকারের ২০২৬ সালের পর স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়া এবং সেসাথে রূপকল্প ২০৪১ অনুযায়ী স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখতে পারবো।
টেকওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ: স্মার্ট বাংলাদেশ রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে ইন্টারনেট সেক্টরের ভূমিকা কতটুকু রয়েছে বলে মনে করেন?
মো. ইমদাদুল হক: ইন্টারনেট দুই প্রকার। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ও মোবাইল ইন্টারনেট। আমি স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ভূমিকার সার্বিক বিষয়টা নিয়ে কথা বলতে চাই। ওয়্যারলেস ইন্টারনেটের ব্যবহারে বিষয়ে আমরা আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তুলছি। আমরা বলে থাকি, বর্তমানে ১১ কোটির বেশি গ্রাহককে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছি। মূলত, এটা দিয়ে অনলাইনে তাৎক্ষণিক কিছু কাজ করা যায়। যেমন, সোশ্যাল মিডিয়া চালানো, অফিসিয়াল ই-মেইল চেক করা, পাঠানো, ছবি বা ভিডিও পাঠানো, ইউটিউবে নাটক, সিনেমা দেখা এসব সাধারণ কাজ করা যায়।
যেহেতু ডিজিটাল বাংলাদেশের পুরো কাজটাই ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীল, তাই সরকারের উচিৎ এই খাতটাকে ভাল মতো দেখভাল করার। কেননা এখন পর্যন্ত আমাদের পেনিট্রেশন মাত্র ১০%। আমরা বলতেছি ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত করবো। সেটা করতে গেলে তো ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পেনিট্রেশনকে ৬০% এর কাছাকাছি নিয়ে যেতে হবে। এটা যদি নিয়ে যাওয়া সম্ভব না হয় তাহলে সরকার যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার রূপকল্প ঘোষণা করেছে, সেটা বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
অন্যদিকে, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ভূমিকাটা ভিন্ন মাত্রার। আমাদের প্রতিদিনকার জীবনে যেকোনো ভারি কাজগুলো করতে গেলে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হয়। ইন্টারনেট এখন মানুষের প্রতিদিনকার অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গ্রাহকের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এখন আমাদের ব্যান্ডউইথ ব্যবহারের পরিমাণ ৪ হাজার ৪০০ গিগাবাইট পার সেকেন্ড (জিবিপিএস) চলে গেছে। যে ব্যান্ডউইথটা যাচ্ছে তার ৬০% ব্যান্ডউইথ আমরা ১ কোটি ৫০ লাখ গ্রাহকের কাছে দিচ্ছি। অন্যদিকে ৪০% ব্যান্ডউইথ যাচ্ছে ১১ কোটির বেশি মোবাইল অপারেটর গ্রাহকের কাছে। এর মানে হলো হেডি ইউজার যারা, তাঁরা পুরোটাই ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীল।
সারাদেশের স্কুল-কলেজ, সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত, ব্যাংক, গার্মেন্টস সেক্টর, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা সেক্টর, হার্ডওয়্যার, আইটি ও সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি, ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি, ফ্রিল্যান্সার যেখানেই যে কাজ করছেন, সব কাজেই ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহার হচ্ছে। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ছাড়া গ্রাহকরা এসব কাজ করতে পারবেন না। কেননা, মোবাইল ডাটা লিমিটেড। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট আনলিমিটেড। ২০ এমবিপিএস একটা ব্যান্ডউইথ নিলে সারা মাস ইচ্ছে মতো যত খুশি ডাউনলোডের কাজ করা যায়। ব্যবহারকারীকে নির্দিষ্ট পরিমাণ বিলের বাইরে বাড়তি কোন টাকা দিতে হয় না। মোবাইল ইন্টারনেটে এর ভিন্ন রূপ। গ্রাহক যত বেশি ডাটা ব্যবহার করবেন, তত বেশি টাকা খরচ করতে হয়। একটা পরিবারে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের সংযোগ থেকে কম করে ৪-৫ জন ব্যবহার করে থাকেন। অন্যদিকে, একটা মোবাইল সিম নিলে একজনই ব্যবহার করতে পারেন।
যেহেতু ডিজিটাল বাংলাদেশের পুরো কাজটাই ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীল, তাই সরকারের উচিৎ এই খাতটাকে ভাল মতো দেখভাল করার। কেননা এখন পর্যন্ত আমাদের পেনিট্রেশন মাত্র ১০%। আমরা বলতেছি ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত করবো। সেটা করতে গেলে তো ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পেনিট্রেশনকে ৬০% এর কাছাকাছি নিয়ে যেতে হবে। এটা যদি নিয়ে যাওয়া সম্ভব না হয় তাহলে সরকার যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার রূপকল্প ঘোষণা করেছে, সেটা বাধা হয়ে দাঁড়াবে। কেননা, যেকোনো দেশের উন্নয়নের সূচকগুলি তো নির্ধারণ হয়ে থাকে কালেকটিভলি। একটা সেক্টরে এগিয়ে গেল, আরেকটা অনেক পিছিয়ে গেলে সেটা হবে না।
টেকওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ: তাহলে এখন আমাদের করণীয় কী?
মো. ইমদাদুল হক: আমি বলবো এর জন্য প্রয়োজন আমাদের সারাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌঁছানোর নানান ধরনের বাধা রয়েছে। এসব বাধাগুলি হলো, আমরা ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্কের জন্য নেশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন)-এর উপর নির্ভরশীল। তাঁদের প্রত্যেকেরই নিজস্ব ব্যবসা আছে। তারা ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্কের ব্যবসা করে, ব্যান্ডউইথ আমদানি করে, হোলসেল ও রিটেইলও তাঁরা করে। তাঁদের সব ধরনের লাইসেন্স দেয়া আছে। এই জায়গায় সরকারের পলিসিগত কিছু সীমা থাকা উচিত।
না থাকলে সরকার এই যে সারাদেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা পৌঁছানোর জন্য ৩ হাজার ব্রডব্যান্ট ইন্টারনেট আপারেটরকে লাইসেন্স দিয়েছে, একটা সময় গিয়ে তাঁরা আর প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে না। তাঁরা ঝরে যাবে। এখন তাঁরা ঝরে গেলে দুইটি বা তিনটি কোম্পানির হাতে যদি পুরো ব্রডব্যান্ট ইন্টারনেট সার্ভিস ডোমেইনটা চলে যায়, তাহলে দেখবেন সেখানে তাঁরা মানুষের পকেট কাটছে। এখন সারাদেশে ৩ হাজার ব্রডব্যান্ট ইন্টারনেট আপারেটর প্রতিযোগিতা করে ব্রডব্যান্ট ইন্টারনেট সার্ভিস দিচ্ছে। সরকার বলছে, তুমি ৫ এমবিপিএস দিবে ৫০০ টাকায়, আমাদের আপারেটররা গ্রাহক বাড়ানোর জন্য ১০ এমবিপিএস দিচ্ছে ৫০০ টাকায়। মাঝখান থেকে গ্রাহকরা লাভবান হচ্ছে। এটাকে চলমান রাখতে হবে, যাতে ব্রডব্যান্ট ইন্টারনেট আপারেটররা কোয়ালিটিফুল সার্ভিস দিতে পারেন।
ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্কের জন্য আমাদের যে এনটিটিএন লাইসেন্স আছে, সেটার সংখ্যাও বাড়াতে হবে। যদি লাইসেন্সের সংখ্যা বাড়ানো না যায়, সেখানে কোন প্রতিযোগিতা থাকবে না। সরকার যদি নেশনওয়াইড দিতে না পারে, তাহলে ডিভিশনাল এনটিটিএন দিক। ডিভিশনাল এনটিটিএনকে বলা হোক, তোমরা ডোর টু ডোর যাও। এটা না হলে সারাদেশের যেসব ওভারহেড ক্যাবল আছে সেগুলি আমরা নামাতে পারবো না।
ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের একটা গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোন কান্ট্রির ব্রডব্যান্ড পেনিট্রেশন যদি ১০% বাড়ে, তাহলে জিডিবিতে ১% প্রবৃদ্ধি হয়। আমরা ইতিমধ্যে ব্রডব্যান্ড পেনিট্রেশন ১০% পর্যন্ত নিয়ে যেতে পেরেছি। এখন যদি ২০% এর মধ্যে নিয়ে যেতে পারি, তাহলে জিডিবিতে আরও ১% প্রবৃদ্ধি যোগ করতে পারবো। আমাদের ছোট দেশে অনেক মানুষের বাস। আমাদের জিডিটাল জীবনযাপনের প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের কোন বিকল্প নেই। আর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের নেপথ্যে যারা কাজ করছেন তাঁরা হলেন এই ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্ণধাররা।
আর একটা গুরুত্ব পূর্ণ বিষয় হলো, সারাদেশের জেলা, ডিভিশনের যেসব ছোট ছোট উদ্যোক্তারা ভালভাবে ইন্টারনেট সার্ভিস দিচ্ছেন, তাঁদের লাইসেন্সের আপগ্রেডেশন করা দরকার। তাঁদের লাইসেন্সের আপগ্রেডেশন প্রক্রিয়াটা এখন বন্ধ রয়েছে। এটা চলমান রাখতে হবে। এটা যেনো বিটিআরসি ও মন্ত্রণালয় পুনর্বিবেচনা করে।
টেকওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ: বর্তমানে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেক্টর জিডিবিতে কেমন ভূমিকা রাখছে?
মো. ইমদাদুল হক: ইন্টারনেট সেক্টর একটা সম্ভাবনাময় ও উদীয়মান সেক্টর। এখানে ব্যবসার অনেক সুযোগ আছে। ব্রডব্যান্ডই একমাত্র মাধ্যম, যাতে ব্যবহারকারীরা সঠিক পরিমাণে ব্যান্ডউইথ পায়। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের একটা গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোন কান্ট্রির ব্রডব্যান্ড পেনিট্রেশন যদি ১০% বাড়ে, তাহলে জিডিবিতে ১% প্রবৃদ্ধি হয়। আমরা ইতিমধ্যে ব্রডব্যান্ড পেনিট্রেশন ১০% পর্যন্ত নিয়ে যেতে পেরেছি। এখন যদি ২০% এর মধ্যে নিয়ে যেতে পারি, তাহলে জিডিবিতে আরও ১% প্রবৃদ্ধি যোগ করতে পারবো। আমাদের ছোট দেশে অনেক মানুষের বাস। আমাদের জিডিটাল জীবনযাপনের প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের কোন বিকল্প নেই। আর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের নেপথ্যে যারা কাজ করছেন তাঁরা হলেন এই ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্ণধাররা।
টেকওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ: ব্রডব্যান্ড পেনিট্রেশন ২০% এর মধ্যে নিয়ে যেতে হলে করণীয় কী?
মো. ইমদাদুল হক: ব্রডব্যান্ড পেনিট্রেশন বাড়ানোর জন্য সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে কয়েকটি কাজ করতে হবে। প্রথমত, প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেসব ছোট ছোট মিডরেঞ্জের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদাতা অপারেটর উদ্যোক্তাগুলি রয়েছে, তাঁদের কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। আমাদের টার্গেট হলো সারাদেশের প্রান্তিক পর্যায়ে গ্রামে-গঞ্জে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ছড়িয়ে দেয়া। আর গ্রামে-গঞ্জে ইন্টারনেট ছড়িয়ে দেয়ার পেছনে আমাদের ছোট উদ্যোক্তারাই বেশি ভূমিকা পালন করছে। তাঁদের যদি কাজ করার মতো উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দেয়া না হয় বা সুযোগ না দেয়া হয়, তাহলে তাঁরা মানসম্পন্ন সার্ভিস দিতে পারবে না। এর জন্য আমি মনে করি, সরকারের পক্ষ থেকে তাঁদের কিছু সুযোগ-সুবিধা দেয়া উচিত। এই কারণেই আইটিইএস সেবার অন্তর্ভুক্ত করাটা খুবই জরুরি।
দ্বিতীয়ত, পলিসিতে পরিবর্তন আনতে হবে। এখানে এনটিটিএন-এর জন্য ন্যাশনওয়াইড লাইসেন্স যদি না দেয়া যায়, তাহলে কমপক্ষে ডিভিশনাল এনটিটিএন লাইসেন্স যাতে দেয়া হয়। তাহলে শহরে, গ্রামে-গঞ্জে যেসব ওভারহেড ক্যাবলের ছড়াছড়ি রয়েছে সেগুলি ধীরে ধীরে কমে যাবে। গ্রাম ও নগরীর রাস্তার সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পাবে। তৃতীয়ত, সারা বিশ্বের সব দেশেই এক্টিভ শেয়ারিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। আমাদের মোবাইল অপারেটররাও এক্টিভ শেয়ারিং করতে পারে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো শুধু ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেক্টরে কেন যেনো এক্টিভ শেয়ারিংটা হচ্ছে না। এই জায়গায়ও এক্টিভ শেয়ারিংয়ের অনুমতি দিলেও আমাদের ওভারহেড ক্যাবলের পরিমাণটা কমে যেত।
টেকওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ: ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সার্ভিস অপারেটরদের ইকুইপমেন্টের উপরে ভ্যাট, ট্যাক্স কেমন হওয়া উচিত বলে মনে করেন?
মো. ইমদাদুল হক: ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সংযোগ দেয়ার জন্য ওয়াইনিউ একটা ডিভাইস লাগে। এই ডিভাইসে আমরা এখনও পর্যন্ত সবকিছু মিলিয়ে ৫৭ % ভ্যাট, ট্যাক্স দিচ্ছি। এই ডিভাইসসহ রাউটারও জনগণকে কিনে নিতে হয়। যখন ডায়ালআপের যুগ ছিল তখন ইন্টারনেট ডায়ালআপ মডেমের উপর ৬০% ভ্যাট, ট্যাক্স ছিল। পরে শুধু ইন্টারনেট পেনিট্রেশন বাড়ানোর জন্য সরকার সেটিকে ৫% নিয়ে আসে। সময়ের পরিবর্তনের টেকনোলজি চেঞ্জ হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ডায়ালআপ মডেমের উপর সেই ভ্যাট, ট্যাক্স রয়ে গেছে। এখন তো সেটি আর ব্যবহার করা হয় না।
এটাকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি। নতুন করে সংজ্ঞায়িত করা হলে এই ওয়াইনিউ ওএনটি এগুলির উপর ট্যাক্স কমবে। কেননা, আমাদের একটা ওয়াইনিউ ডিভাইস কিনতে ১২-১৪শ, ১৫শ টাকা লাগে। এটা ব্যবহারকারীও দেয় না। একটা রাউটার আনতে প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা লাগে। ওইখানে আমরা সাবসিডি দেই। আবার ইন্টারনেট সংযোগের জন্য ক্যাবল লাগে। এটার টাকা তো কেউ দেয় না। বর্তমানে ৫০% ক্যাবল দেশে উৎপন্ন হয়। বাকি ৫০% ক্যাবল এখনও বাইরের দেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আমি বলতে চাই আমাদের এই ইকুইপমেন্টের উপরে সরকারের ভ্যাট, ট্যাক্স কমানো উচিত। করবোঝা যত কম হবে আমাদের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সার্ভিস দিতেও তত সুবিধা হবে।
টেকওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ: গত বছরের ঘোষিত বাজেট ইন্টারনেট সেবাখাতের উন্নয়নে কেমন ভূমিকা রেখেছে?
মো. ইমদাদুল হক: গত বছরের ৭ এপ্রিল ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের তৃতীয় সভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইএসপি সেবাকে আইটি ও আইটিইএস সেবায় অন্তর্ভুক্ত করতে নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী তার টাস্কফোর্স মিটিংয়ে এটা বাস্তবায়নের আশ্বস্তও করেছিলেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে এটি বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। ওই সভায় আমি তুলে ধরেছিলাম যে, আইএসপি সেক্টরটা বিশেষ করে যারা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা দিয়ে থাকেন তাদেরকে যেনো আইটিইএস সেবার অন্তর্ভুক্ত কার হয়। এই সেক্টরের সেবাকে আইটিইএস-এ সংজ্ঞায়িত করার জন্য জোর দিয়েছিলাম।
আইএসপি সেবাকে আইটিইএস সেবার অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সেটি মিনিটস আকারেও এসেছিল। কিন্তু দুঃজনক বিষয় হলো, প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ওই নির্দেশনাটা গত বছরের বাজেটে বাস্তবায়ন করা হয় নাই। মানে আইএসপি সেবাকে আইটিইএস সেবার অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এ জন্য ইন্টারনেট সার্ভিস অপারেটররা হতাশ হয়েছি।একদিকে প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হয়নি, অন্যদিকে বাজেটে আইএসপিগুলির উপর আরো ১০% অ্যাডভান্স ইনকাম ট্যাক্স (এআইটি) নির্ধারণ করা হয়েছে। এর ফলে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পেনিট্রেশনে বাধার সৃষ্টি করছে।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার একটা জাতীয় কমিটি রয়েছে। চলতি বছরের শুরুতেও সে কমিটির একটা সভায় আমি আইএসপি সেবাকে আইটিইএস সেবার অন্তর্ভুক্ত করার কথা তুলে ধরেছিলাম। সব কিছুই নির্দেশনা হয়। শেষে কোন এক অদৃশ্য কারণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সেটি বাস্তবায়ন করে না। এই জায়গায় সরকার যদি গুরুত্ব না দেয়, আমাদের ছোট ছোট উদ্যোক্তা বা যারা প্রান্তিক পর্যায়ে কাজ করে, তাঁদেরকে যদি আইটিইএস সেবার অন্তর্ভুক্ত করা না হয়, তাঁদেরকে যদি ট্যাক্স সুবিধা দেয়া না হয়, একটা সময়ে গিয়ে তারা হতাশ হয়ে যাবে। নেটওয়ার্কও বৃদ্ধি হবে না। তখন আমাদের যে লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পেনিট্রেশন ৬০% এর কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া, সেটা থেকে আমরা পিছিয়ে থাকবো। আমরা পিছিয়ে থাকতে চাই না। আমরা চাই এগিয়ে থাকতে।
টেকওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ: ইন্টারনেট সেক্টরে এবারের বাজেটে কোন বিষয়গুলিকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া জরুরি বলে মনে করেন?
মো. ইমদাদুল হক: আমি এমন একটা বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি যেখানে গ্রাম গ্রামই থাকবে। শহর শহরই। কিন্তু প্রত্যেকটা মানুষ শহরের সমস্ত সুযোগ-সুবিধা গ্রামে বসেই পাবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে ঘোষণা, মানুষের পাঁচটা মৌলিক অধিকারের মধ্যে ইন্টারনেট একটা। আমি চাই সরকার অচিরেই এই ঘোষণা করে দিক। ইন্টারনেট মানুষের ভোগ্যপণ্য না। তবে প্রত্যেকের নিত্যপ্রয়োজনীয় উপাদান। এটা ঘোষণার পর এটার গুরুত্ব হয়তো আরেটু বেড়ে যাবে। আমরাও অরেটু উদ্দীপিত হবো।
আমরা চাই প্রত্যেকটা ঘরে ঘরে কমপক্ষে এক জিবিপিএস ট্রান্সমিশন পৌঁছে দিতে। যাতে মানুষ নিত্যদিনের সমস্ত কাজ করার পাশাপাশি স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালতের সব কাজ সহজে করতে পারে। আর আমাদের আইটিইএস সেবার অন্তর্ভুক্ত করা সময়ের দাবি। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সার্ভিস অপারেটরদের ইকুইপমেন্টের উপরে ভ্যাট, ট্যাক্স কমাতে হবে। সেসাথে পলিসিগত কিছু সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে। সেগুলি করলেই সরকারের ২০২৬ সালের পর স্বল্পোন্নত দেশ থেকে একটি উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হরওয়া এবং স্মার্ট বাংলাদেশ রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে যে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে সেটা আমরা মোকাবেলা করতে পারবো। সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কাজটা সুষ্ঠু ও সুন্দর হোক। এমনটাই প্রত্যাশা।
উজ্জ্বল এ গমেজ
অধ্যাপক ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ আল মামুন। গবেষক ও ডিজিটাল হেলথ সিস্টেমের একজন বিশেষজ্ঞ। উদ্ভাবন...